বিড়ম্বনা: মজে যাওয়া কাটাখালি নদী। নিজস্ব চিত্র।
সিপিএমের টিকিটে ভোটে জিতে তিনি বলতেন, তৃণমূল সরকার কাজ করতে দিচ্ছে না। সেই তিনিই এ বার দাঁড়িয়েছেন তৃণমূলের টিকিটে। এখন বলছেন, কই না তো, বিধায়ক তহবিলের টাকায় প্রচুর কাজ হয়েছে এলাকায়।
তবে বসিরহাট উত্তর কেন্দ্রের আমজনতা জানে, গত পাঁচ বছরে জনস্বাস্থ্য, পানীয় জল, রাস্তাঘাট, সেতু— বহু কিছুর দাবি মেটেনি।
২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে টিকিট না পেয়ে রফিকুল ইসলাম তৃণমূল ছেড়ে সিপিএমে যোগ দেন। কয়েকশো ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। ২০২১ ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার ঠিক আগে সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে ফেরেন রফিকুল। তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে লড়ছেন এ বার। দলে এই নিয়ে অন্তর্কলহ প্রচুর। প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক এটিএম আবদুল্লা রনি টিকিট না পাওয়ায় তাঁর অনুগামীরা ক্ষুব্ধ। প্রভাবশালী নেতা ফিরোজ কামাল গাজি ওরফে বাবু মাস্টার দল ছেড়ে যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে।
সব মিলিয়ে দল বদলের খেলায় অস্থিরতা বেড়েছে এলাকায়।
আর এ সবের মধ্যেই বাসিন্দাদের প্রশ্ন, গত পাঁচ বছরে উন্নয়নের চাকা তেমন গড়াল কই!
বসিরহাট ২ ব্লক এবং হাসনাবাদের ১৩টি পঞ্চায়েত এলাকা নিয়ে বসিরহাট উত্তর বিধানসভা কেন্দ্র। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এখনও কাটাখালি নদীর উপরে সেতু হল না। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে শুকিয়ে আসা নদী কাদা মাড়িয়ে হেঁটে পেরোতে হয়। কংগ্রেস নেতা দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘দিন-রাত অধিকাংশ সময়ে কাটাখালি নদীতে জল থাকে না। আবার হঠাৎ করে জোয়ারে নদী জলে ভরে যায়। তাই হেঁটে নদী পার হতে জীবনের ঝুঁকি থাকে।’’
দিলীপের কথায়, ‘‘নেতারা বার বার দল বদল করায় উন্নয়ন প্রায় কিছুই হয়নি। গ্রামীণ হাসপাতালগুলির সংস্কার দরকার। ভবানীপুর এবং শ্রীপোলকাটিতে সেতু দরকার। রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ।’’ স্থানীয় বাসিন্দা মুকুল গাজি, জলিলি মোল্লা, সফিকুল ইসলামদের কথায়, বিরোধী দলের থাকার কারণে বিদায়ী বিধায়ক পাঁচ বছরে এলাকায় তেমন কোনও উন্নয়ন করতে পারেননি।’’
তৃণমূলের একটি অংশ আবার জানাচ্ছে, বিরোধী দলের বিধায়ক থাকায় এলাকায় তেমন ভাবে সভা-সমিতির মাধ্যমে জনসংযোগ গড়ে তোলা যায়নি গত কয়েক বছরে। ভোটে তার কী প্রভাব পড়ে, তা নিয়ে আশঙ্কা আছে দলের অন্দরে। রফিকুল অবশ্য বলেন, ‘‘বিধায়কের তহবিলে পাওয়া সব টাকা মানুষের কল্যাণে খরচ করা হয়েছে। এলাকায় প্রচুর নলকূপ তৈরি করা হয়েছে। বেশ কিছু রাস্তা মেরামত হয়েছে। নতুন রাস্তার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল, স্কুল, মাদ্রাসা, ধর্মীয় স্থানে আর্থিক সাহায্য করা হয়েছে।’’
সিপিএমের বিধায়ক তৃণমূলে যোগদান করায় সংগঠনের কোনও ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করছেন সিপিএম নেতা সুবিদ আলি গাজি। তাঁর কথায়, ‘‘সুবিধাভোগী একজন তৃণমূল ছেড়ে সিপিএমে এসে জয়ী হওয়ার পরে ফের তৃণমূলে ফিরে গেলেন। এটা মানুষ ভাল চোখে দেখছেন না। গত পাঁচ বছরে এলাকায় জনসংযোগ এবং কোনও উন্নয়ন করেননি বিধায়ক। শুধু ভোটের টিকিট পেতে বার বার দল পরিবর্তন করেছেন।’’
বসিরহাট উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে জোট প্রার্থী আইএসএফের মহম্মদ বাইজিদ আমিন বলেন, ‘‘একবার সিপিএম তো অন্যবার তৃণমূল। মানুষের জন্য উন্নয়নমূলক কাজ না করে কেবল নিজের আখের গোছাতে বার বার ভোল বদলে এক একবার এক এক দলের হয়ে প্রার্থী হওয়া মানুষ ভাল চোখে নিচ্ছেন না।’’
বসিরহাট উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী নারায়ণ মণ্ডলের কথায়, ‘‘বার বার দল বদল করা কোনও প্রার্থীকে মানুষ ভোট দেবেন না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সিপিএম বলুন আর তৃণমূল— কেউই এলাকার মানুষের কথা ভেবে উন্নয়নের তেমন কোনও কাজ করেনি বললেই চলে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy