Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Mamata Banerjee

Bengal Polls 2021: বিধায়কের দেখা নেই, অস্বস্তিতে শাসক দল

রাস্তাঘাট, পানীয় জল জেটি, কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ, ক্যানিং-বাসন্তী রেললাইন সম্প্রসারণ না হওয়া— অভিযোগ অনেক কিছু নিয়েই। বাসন্তী রাজ্য সড়কও বেহাল।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

  প্রসেনজিৎ সাহা
বাসন্তী শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২১ ০৭:২৭
Share: Save:

ভোটে জেতার পর থেকে বেপাত্তা বিধায়ক। এমনকী, তাঁর দলের লোকজনই তুলছেন ওই অভিযোগ। ফলে উন্নয়ন নিয়েও জমেছে নানা অভিযোগ। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এলাকায় বিরোধী-হাওয়া বইছে ভালই। বিধায়কের অনুপস্থিতি নিয়ে প্রচারে যুক্তি দিতে হচ্ছে দলের লোকজনকে। বাসন্তীর বিদায়ী বিধায়ক গোবিন্দ নস্করকে নিয়েই উঠছে এ সমস্ত অভিযোগ। দলের কর্মসূচি হোক বা সরকারি অনুষ্ঠান— সব কিছুতেই তিনি ছিলেন অধরা। বিরোধীদের অভিযোগ, বিধায়কের শংসাপত্র জোগাড় করতেও গত কয়েক বছরে হিমশিম খেতে হয়েছে মানুষকে। বালিগঞ্জে তাঁর বাড়িতে কোনও প্রয়োজনে গেলেও সুবিধা হত না বলে দাবি এলাকার অনেকেরই।

তৃণমূল এ বার টিকিট দেয়নি গোবিন্দকে। প্রার্থী হয়েছেন শ্যামল মণ্ডল। তাঁকে নিয়েও শুরুতে দলের কর্মীদের মধ্যে সমস্যা ছিল। ‘বহিরাগত’ বলে প্রার্থীকে মানতে চাননি অনেকে। তবে আপাতত দলের অন্দরের সেই রোষ মেরামত করা গিয়েছে বলেই দাবি নেতৃত্বের। তৃণমূল প্রার্থী শ্যামল মণ্ডল বলেন, ‘‘আমি দশ বছর পাশের বিধানসভার (ক্যানিং পশ্চিম) বিধায়ক ছিলাম। সব সময়ে আমি এলাকায় পড়ে থেকে কাজ করেছি। দিদি যেখানে পাঠিয়েছেন, সেখানকার মানুষের জন্য কাজ করাই আমার কর্তব্য বলে মনে করি।’’

দীর্ঘ দিনের কংগ্রেস কর্মী ও একসময়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের মন্ত্রী ছিলেন গোবিন্দ নস্কর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেন দলের শুরুর দিন থেকেই। ২০০৯ সালে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের টিকিটে জিতে সাংসদ হন। ২০১৬ সালে আরএসপির সুভাষ নস্করের বিরুদ্ধে দল তাঁকে টিকিট দেয়। জয়ী হয় তৃণমূল। কিন্তু ভোটে জেতার পর থেকেই বিধায়ককে আর এলাকায় দেখা যায়নি বলে অভিযোগ তৃণমূল কর্মীদের। মাঝে দু’একবার এলাকায় এলেও হাতেগোনা কিছু অনুগামীর সঙ্গে দেখা করেই চলে ফিরে যান বিধায়ক। আসেননি দলীয় কার্যালয়েও। গোবিন্দর বিরুদ্ধে কাটমানির অভিযোগও তুলছেন বিরোধীরা। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের চাকরি দেওয়ার নাম করে, ক্লাবগুলিকে সরকারি সাহায্যের টাকা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে, রেশনের ডিলারশিপ পাইয়ে দেওয়ার নাম করেও বিধায়ক ও তাঁর ঘনিষ্ঠরা বহু মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ। দলেরই কর্মীদের একাংশও বলে সে কথা।

গত বিধানসভা ভোটের পর থেকেই বার বার তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে রক্তাক্ত হয়েছে বাসন্তীর মাটি। এই ক’বছরে কুড়ি জনের বেশি রাজনৈতিক সংঘর্ষের বলি হয়েছেন। গত সাড়ে চার বছরে গোষ্ঠী কোন্দল মেটাতে বিদায়ী বিধায়ক কোনও উদ্যোগ করেননি বলে অভিযোগ আছে শাসক-বিরোধী দুই শিবিরেই।

রাস্তাঘাট, পানীয় জল জেটি, কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ, ক্যানিং-বাসন্তী রেললাইন সম্প্রসারণ না হওয়া— অভিযোগ অনেক কিছু নিয়েই। বাসন্তী রাজ্য সড়কও বেহাল। ম্যানগ্রোভ কেটে বেআইনি মেছো ভেড়ি তৈরির অভিযোগ আছে এলাকায়।

সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত আরএসপি প্রার্থী সুভাষ নস্কর বলেন, ‘‘ভোটে জেতার পর থেকে বিধায়কের দেখা পাননি এলাকার মানুষজন। এলাকার কোনও উন্নয়নে তাঁকে সদর্থক ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। এলাকার মানুষজন কোনও প্রয়োজনে তাঁর থেকে শংসাপত্রও পাননি। গত সাড়ে চার বছর ধরে এলাকার মানুষের জন্য রাস্তাঘাট, পানীয় জল, খাল খনন কিছুই করেননি তিনি। এমনকী, ক্যানিং থেকে বাসন্তী পর্যন্ত যে রেললাইন সম্প্রসারণের জন্য আমরা দাবি তুলেছিলাম, কাজও শুরু হয়েছিল সেই কাজের অগ্রগতির জন্য কোনও উদ্যোগ করেননি বিধায়ক।”

গত সাড়ে চার বছরে এই বিধানসভা এলাকায় বিজেপি যথেষ্ট শক্তি বাড়িয়েছে। গত পঞ্চায়েত ভোটে একটি পঞ্চায়েত বিজেপি দখল করে বাসন্তীতে। পাশাপাশি বেশ কিছু পঞ্চায়েত আসনও জেতে। এই কেন্দ্রে এ বারের বিজেপি প্রার্থী রমেশ মাঝি বলেন, ‘‘উনি (গোবিন্দ) এলাকাতেই আসেননি, এলাকার কী উন্নয়ন করবেন? সাত দিন ওঁর বিভিন্ন বাড়ি ঘুরে ঘুরেও স্কুলের ছেলেমেয়েরা একটা শংসাপত্র পায়নি। মানুষ হয়রান হয়েছেন। বিধায়কের যে সরকারি তহবিল, সেই টাকা বাসন্তী বিধানসভায় খরচ না হয়ে প্রতি বছরই ফেরত চলে গিয়েছে।’’

বিধায়কের বক্তব্য জানার জন্য বহুবার চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। ফোন বন্ধ মিলেছে। মেসেজেরও উত্তর আসেনি। বাসন্তী ব্লক তৃণমূলের আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান গাজি ওরফে মন্টু বলেন, ‘‘এ কথা ঠিক, গত সাড়ে চার বছরে আমরাই আমাদের দলের বিধায়কের দেখা পাইনি। এলাকার মানুষ কোনও শংসাপত্র পাননি ওঁর থেকে। বিধায়ক তহবিলের টাকায় কোনও উন্নয়ন হয়নি। এলাকার রাস্তাঘাট, পানীয় জল ও অন্যান্য উন্নয়নে বিধায়কের ভূমিকা ছিল না। তবে ওঁর মেয়ে, জয়নগর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ প্রতিমা নস্কর সেই অভাব কিছুটা পূরণের চেষ্টা করেছেন। তিনিই প্রতি সপ্তাহে বাসন্তীতে এসে মানুষকে শংসাপত্র দিয়েছেন, এলাকার মানুষের রাস্তাঘাট, পানীয় জলের কিছুটা সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করেছেন।” প্রতিমার বক্তব্য, ‘‘বাবা অসুস্থ থাকায় যাতায়াত করতে পারেননি। তবে অন্য যে সব অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। আমি এই ক’বছরে এলাকায় সাধ্য মতো সময় দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy