প্রতীকী ছবি।
চৈত্রের শেষ দিন। কচি সবুজ ধানের পাতা হাওয়ায় সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো দুলছে। সেই ধানের জমিতে সার ছিটিয়ে দুপুর গড়িয়েছে। তাই মাঠের একপাশে বটের ছায়ায় জিরিয়ে নিচ্ছিলেন মজেন সরকার, ধলেন সরকারেরা। ভোটের হাওয়া কেমন, প্রশ্ন করতেই কালক্ষেপ না করে রাজবংশী ভাষায় বলে উঠলেন, ‘হামার জমির সারের দামটা যেভাবে বাড়ি গেল, আগে তার কথা তো কহো।’’ ভোটের আগে হঠাৎ করে এক লাফে কেজি প্রতি বাড়তি ১৩ টাকা দামই এখন আলোচনার বিষয়।
শুধু সার নয়, নিত্য প্রয়োজনীয় বহু জিনিসের আকাশ ছোঁয়া দামে ক্ষুব্ধ গ্রামের স্বল্প আয়ের নাগরিকরা। আর এই বিষয়গুলিকেই হাতিয়ার করেছেন হরিরামপুরের তৃণমূল প্রার্থী বিপ্লব মিত্র। ২০১১ নির্বাচনে জেতার পর গত বিধানসভায় জোটের সিপিএম প্রার্থী রফিকুল ইসলামের কাছে হেরেছিলেন বিপ্লব। এবার সেই রফিকুল ভোটে দাঁড়ালেও লড়াইয়ের ময়দানে প্রায় নেই বললেই চলে। গ্রামে গঞ্জে শুধু দুই ফুলের লড়াইয়ের গল্পই চলছে। বিপ্লবের কথায়, ‘‘তৃণমূল গরীব মানুষের সরকার। তাই প্রত্যেকটি পরিবার আমাদের সরকারের কোনও না কোনও প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই উন্নয়নের নিরিখেই ভোট হবে।’’
কিন্তু তৃণমূলের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যায়, বিপ্লবের ‘জমিদারি’ চালের কথা। গঙ্গারামপুরের বাসিন্দা হয়ে হরিরামপুরে ভোটে দাঁড়িয়ে যেভাবে গঙ্গারামপুরের পারিষদ নিয়ে তিনি সারাক্ষণ বেষ্টিত থাকেন তাতেই অনেকের সুর পাল্টে গিয়েছে। সেই সঙ্গে বিজেপির ধর্মীয় প্রচার সংখ্যাগুরু ভোটকে একত্রিত করাও দুশ্চিন্তার বিষয় তৃণমূলের। তাই গত লোকসভা নির্বাচনে প্রায় পাঁচ হাজার ভোটে পিছিয়ে থাকা হরিরামপুরে বিপ্লবের বিপক্ষে বিজেপি এবার বাজি ধরেছে আইনজীবী প্রার্থী তথা কংগ্রেস থেকে আগত নীলাঞ্জন রায়কে। কারণ, কংগ্রেসের জেলা সভাপতি থাকায় বালুরঘাটের বাসিন্দা হলেও হরিরামপুর নিজস্ব কিছু প্রভাব রয়েছে নীলাঞ্জনের।
নীলাঞ্জন বলেন, ‘‘হরিরামপুরের মানুষ বাম ও তৃণমূল সবাইকেই ভোট দিয়ে দেখেছেন প্রকৃত উন্নয়ন কেউ করেনি। হরিরামপুরে না আছে ভাল হাসপাতাল, না আছে কৃষকদের হিমঘর, না হয়েছে রাস্তাঘাট। তাই হরিরামপুরবাসী এবার বিজেপিকেই ভোট দেবে।’’ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির এই বাজারেও গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশকে ‘ধর্মীয়’ মেরুকরণে বিভাজিত করতে কিছুটা হলেও সক্ষম হয়েছে গেরুয়া শিবির। তাই সারের দাম বাড়লেও পাশ থেকে আর এক কৃষক নীরেন সরকার ইঙ্গিতপূর্ণ সুরে বলেন, ‘‘বৈশাখের চড়া রোদে জমির ঘাস সব শুকিয়ে গিয়েছে।’’
হরিরামপুর বিধানসভা লাগোয়া পুর্নভবা নদীকে ঘিরে আবর্তিত গঙ্গারামপুর বিধানসভার ভোটে শুধু শিবির বদলের গল্প। এই বিধানসভায় গত নির্বাচনে বামেদের সমর্থনে কংগ্রেস প্রার্থী গৌতম দাস জিতেছিলেন৷ সেই গৌতম শিবির বদলে এখন তৃণমূলের জেলা সভাপতি। গৌতমের প্রতিপক্ষ বিজেপি প্রার্থী সত্যেন রায় একদা তার দলেরই বিধায়ক ছিলেন। শোনা যায়, সত্যেনের ঘোর বিরোধী তৃণমূলের তৎকালীন জেলা সভাপতি তথা বর্তমানে হরিরামপুরের তৃণমূল প্রার্থী বিপ্লব তলে তলে গৌতমকে সাহায্য করেছিলেন বলেই কংগ্রেসের ভোট না থাকা সত্ত্বেও কংগ্রেসের টিকিটে জিতেছিলেন গৌতম। এবারও গৌতমের জয়-পরাজয় নির্ভর করছে বিপ্লবের অবস্থানের উপরে।
কিন্তু দলীয় রাজনীতির লড়াইয়ে একদা শিষ্য গৌতমের সঙ্গে বিপ্লবের ঠান্ডা লড়াই চলছে। যদিও গৌতম বলেন, ‘‘বিপ্লবদা নিশ্চয়ই আমার জন্য প্রচার করবেন।’’ বিজেপির প্রার্থী সত্যেন বা তৃণমূল প্রার্থী গৌতমের এই শিবির বদলে কি সিপিএম প্রার্থী নন্দলাল হাজরা বাজিমাত করবে? ‘সিপিএম ক্ষয়িষ্ণু। তাই লড়াই খুব কঠিন। এখানেও ওই ঘাসফুল-পদ্মফুলের লড়াই,’ বলছেন গঙ্গারামপুরবাসী। সেই সঙ্গে সম্প্রতি গঙ্গারামপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনসভা কিছুটা হলেও অক্সিজেন দিয়েছে বিজেপিকে। তবে আশাবাদী নন্দলালও। কার আশাপূরণ হবে, উত্তর মিলবে ২ মে-তেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy