প্রতীকী ছবি।
এক দিকে মহানন্দা, অন্য দিকে ফুলহার। বর্ষার মরসুমে মাঝের দুই জনপদ চাঁচল ও হরিশ্চন্দ্রপুরে লেগেই থাকে বন্যা আর ভাঙন। অন্য সময় সেই দুই নদীই শীর্ণকায় শরীর নিয়ে ধুঁকতে থাকে। জেলা সদর থেকে অনেকটাই দূরে দুই জনপদের মিল রয়েছে আরও। দুই জনপদের মাঝখান দিয়ে যাওয়া ৮১ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’পাশে, রাজ্য সড়ক বা গ্রামীণ সড়কের দু’পাশে অসংখ্য ইটভাটা। তারই ফাঁকে মাঠে উঁকি দিচ্ছে সবুজ ধানের খেত। কোথাও আবার রাস্তার পাশে জলাশয়ে চাষ হচ্ছে মাখনা। যা এই দুই এলাকার অন্যতম অর্থকরী ফসল। আপাত নিরীহ দুই জনপদে মিল রয়েছে রাজনীতিতেও। চাঁচল মহকুমা সদরকে পুরসভা করার দাবি বাদ দিলে বাকি দুই জনপদের সর্বত্রই দাবি প্রায় একই। তার মধ্যে রয়েছে নদী ভাঙন রোধ, পানীয় জল, নিকাশি নালা, রাস্তা তৈরি, আলোর ব্যবস্থা। সেই সমস্যার মুখোমুখি হয়েই ভোট প্রচারে ব্যস্ত নেতারা।
বিধায়ক বাবা মহবুবুল হকের মৃত্যুর পরে চাঁচল বিধানসভার উপনির্বাচনে আচমকাই প্রার্থী হতে হয়েছিল বিশ্বভারতীর চারুকলার ছাত্র আসিফ মেহবুবকে। জয়ীও হয়েছিলেন। তার পরে পাকাপাকি রাজনীতিতে। গত বিধানসভাতেও জোটপ্রার্থী কংগ্রেসের আসিফের জয়ের ব্যবধান ছিল প্রায় পঞ্চাশ হাজার। তার পরে অবশ্য মহানন্দা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। প্রচারের ফাঁকে চায়ের দোকানির কাঁধে হাত দিয়ে আসিফ বলেন, ‘‘আমি সাধ্য মতো কাজ করেছি। চেষ্টা করলেও রাজ্য সরকারের সদিচ্ছার অভাবে অনেক কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। তবে মানুষের পাশেই সারাক্ষণ থাকার চেষ্টা করি। তাই মানুষও আমার সঙ্গে রয়েছেন।’’
কিন্তু ভোটের সময় ছাড়া আসিফকে দেখা যায় না, এলাকার উন্নয়নে তিনি কিছুই করেননি—প্রচারে আসিফের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগকেই খাড়া করছে তৃণমূল। তৃণমূল প্রার্থী নীহাররঞ্জন ঘোষ বলেন, ‘‘আমাকে বহিরাগত বলা হচ্ছে। আরে আমি তো জেলারই মানুষ। বিদায়ী বিধায়ক কিছুই করেননি। মানুষ সুযোগ দিলে উন্নয়ন কাকে বলে দেখিয়ে দেব।’’ যদিও চাঁচলে তৃণমূলে দ্বন্দ্বের চোরাস্রোত বইছে, এমন দাবি কর্মীদের একাংশেরই। তা সামাল দেওয়ার জন্য অবশ্য নিরন্তর প্রচেষ্টাও চলছে।
এই আবহেই নিজেকে ভূমিপুত্র বলে প্রচারে জোর দিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী দীপঙ্কর রাম। দীপঙ্কর বলেন, ‘‘আসিফ এলাকার মানুষ হলেও এখন মালদহে থাকেন। ওঁদের কাছে পাওয়া যাবে না তা মানুষ বুঝতে পেরেছেন।’’
দু’পাশে ইটভটা, মাখনার জলাশয় পেরিয়ে লাগোয়া জনপদ হরিশ্চন্দ্রপুরেও তৃণমূলে দ্বন্দ্বই ভাবাচ্ছে কর্মীদের। গত লোকসভার নিরিখে ওই আসনে এগিয়ে তৃণমূল। প্রার্থী তজমুল হোসেন অবশ্য বলেন, ‘‘কোনও দ্বন্দ্ব নেই। লকডাউনের পাশাপাশি সব সময় যে ভাবে মানুষের পাশে দাঁড়য়েছি তাতে মানুষ আমার সঙ্গেই রয়েছেন।’’ পিছিয়ে নেই বিদায়ী বিধায়ক, সংযুক্ত মোর্চার কংগ্রেস প্রার্থী মোস্তাক আলম। ঝানু রাজনীতিক মোস্তাক যে কোনও সময় খেলা ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন, জানাচ্ছেন কর্মীরাই। সংখ্যালঘু প্রার্থী দিয়ে জয়ের পিছনে দৌড়চ্ছে বিজেপিও। যদিও প্রার্থী ঘোষণার পরে হরিশ্চন্দ্রপুরে ভাঙচুর-অবরোধ ঘটেছিল। যদিও সে সব মিটে গিয়ছে দাবি করে বিজেপি প্রার্থী মতিবুর রহমান বলেন, ‘‘দু’জনেই একসময় বিধায়ক ছিলেন। ওঁরা কিছুই করেননি। ফলে মানুষের বিপুল সাড়া পাচ্ছি।’’
ফেরার পথে কীর্তনের আসর দেখে দাঁড়াতেই চোখে পড়ল, ক্রমাগত কোমর দুলিয়ে হিন্দি গানের সুরে নাচের তালে হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে....গেয়ে চলেছেন জনা পাঁচেক পুরুষ-মহিলা। প্রার্থীরাও সেখানে এসে জনসংযোগ করে গিয়েছেন বলে উদ্যোক্তারা জানালেন। যেমন ছুটছেন উরস মেলা, জলসার আসরেও। আসরের সামনে এসে দাঁড়ানো ভুটভুটি থেকে বিড়ির ধোঁয়া ছড়িয়ে লাফ দিয়ে নামলেন আসরের পরের গায়ক। হিন্দি গানের তালে হরিনাম কেন, প্রশ্ন করতেই সটান উত্তর—শুধু কীর্তন কেন, কত কিছুতেই তো পরিবর্তন এসেছে। এই দুই জনপদেও কি পরিবর্তন আসবে? উত্তরের জন্য অপেক্ষা করতে হবে ২ মে পর্যন্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy