ভোটের লাইনে উপচে পড়া ভিড়। মেটিয়াবুরুজে। ছবি: সুমন বল্লভ
নিত্য দিনই হু-হু করে বাড়ছে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা। তার মধ্যে নির্বাচন চলছে। শনিবার রাজ্যের চতুর্থ দফার ভোটেও অবশ্য বেশির ভাগ জায়গাতেই কোভিড সতর্কতার দেখা মেলেনি। প্রায় সব জায়গাতেই দূরত্ববিধি কার্যত ছিল না। কমিশনের নিয়ম মোতাবেক, বুথের সামনে স্যানিটাইজ়ার, গ্লাভস, মাস্কের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু ভোটারেরা সচেতন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বহু ভোটারই মাস্ক না-পরে ভোট দিতে এসেছেন। দীর্ঘ ক্ষণ লাইনে দাঁড়ানোর পরে অবশ্য বুথে ঢোকার আগে মাস্ক ও গ্লাভস পরেছেন। বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা মাস্ক পরলেও কথা বলার সময়ে অনেকেই টুক করে মাস্ক নামিয়ে নিয়েছেন। মাস্ক থুতনিতে নামিয়ে রাখতে দেখা গিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কয়েক জন জওয়ানকেও।
কোচবিহারের পাশাপাশি এ দিন দক্ষিণবঙ্গের কিছু কিছু জায়গায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘অতি-সক্রিয়তার’ অভিযোগও উঠেছে। হাওড়ার পাঁচলায় বাড়িতে ঢুকে জওয়ানেরা বন্দুকের বাঁট দিয়ে মেরে এক যুবকের মাথা ফাটিয়েছে বলে অভিযোগ।
দুপুরে তিলজলার একটি বুথে দেখা গেল, রোদ থেকে বাঁচতে সবাই লাইনে গা ঘেঁষাঘেষি করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। ঘুচে গিয়েছে দূরত্ববিধি। বেশির ভাগ ভোটারের মুখেই মাস্কের বালাই নেই। এক ভোটারকে জিজ্ঞাসা করতেই জবাব এল, ‘‘বুথে ঢোকার সময় মাস্ক দেবে শুনলাম!’’ বেহালা, ভাঙড়েও ছবিটা একই রকম। তবে নিয়মমাফিক বুথের সামনে মাস্ক, গ্লাভস ভোটারদের বিলিও করা হয়। মেটিয়াবুরুজের রবীন্দ্র বালিকা বিদ্যাপীঠের বুথে ‘পিপিই’ পরা স্বাস্থ্যকর্মীকে দেখা গিয়েছে। উত্তরবঙ্গের কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারেও দূরত্ব-বিধি মানা হয়নি।
তবে হাওড়ায় দূরত্ববিধি মানা হয়েছে। অনেক ভোটারই মাস্ক পরে ভোট দিতে আসেন। বিলি করা হয়েছে স্যানিটাইজ়ার ও গ্লাভসও। তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বুথে কেউ মাস্ক পরেননি। উত্তরপাড়ায় অবশ্য ভোটারদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদেরও মাস্কে ‘অনীহা’ দেখা গিয়েছে। কানাইপুর হাইস্কুলের কাছের একটি বুথে দু’জন আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ান বললেন, ‘‘আমরা লোকের কাছে যাচ্ছি না। তাই মাস্ক খুলে রেখেছি।’’
উত্তরপাড়ায় বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘অতি-সক্রিয়তার’ অভিযোগও উঠেছে। কোন্নগরের শকুন্তলা কালীবাড়ির কাছের বুথের ভিতরের সিসি ক্যামেরার মুখ ঘুরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। তবে ‘অভিযুক্ত’ বিজেপি পোলিং এজেন্টের সঙ্গে সংবাদমাধ্যম কথা বলতে গেলেই তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যান কেন্দ্রীয় বাহিনী। সিপিএম প্রার্থী রজত বন্দ্যোপাধ্যায়কে মাখলার একটি বুথে ঢুকতে বাধা দেন জওয়ানেরা। তৃণমূলপ্রার্থী কাঞ্চন মল্লিককেও হাজারো জবাবদিহি করে বুথে ঢুকতে হয়েছে। সামান্য ঘটনাতেই জওয়ানেরা অধৈর্য হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভোটারদের অনেকে।
তবে দক্ষিণবঙ্গে হাওড়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে সব থেকে বেশি ‘অতি-সক্রিয়তার’ অভিযোগ উঠেছে। পাঁচলার জয়রামপুরে বাড়িতে ঢুকে আক্রম লস্কর নামে এক যুবককে কেন্দ্রীয় বাহিনী মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। তাঁকে গাববেড়িয়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আক্রমের বক্তব্য, ‘‘আমি এবং আমার ভাইয়েরা বাড়িতে খাচ্ছিলাম। হঠাৎ কয়েক জন জওয়ান ঢুকে পড়ে। তাদের এক জন বন্দুকের বাট দিয়ে আমার কপালে মারে। বাকি ভাইদেরও লাঠিপেটা করে।’’ প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, কাছের একটি বুথের কাছে জটলা হটাতে জওয়ানেরা জনতাকে তাড়া করেন। তবে তাঁরা বাড়িতে ঢুকে কেন মারলেন, তা নিয়ে হাওড়া (গ্রামীণ) পুলিশের বক্তব্য মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy