বিনপুরের কাঁকোর একটি বুথে ভোট দিতে এলেন এক বিশেষভাবে সক্ষম ভোটার। তাঁকে সাহায্য করলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
প্রশংসা এবং অভিযোগ—শনিবার, রাজ্যের পাঁচ জেলার ৩০টি কেন্দ্রের ভোটে ৭৩০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গী দুই-ই। কোথাও তাঁদের দেখে বুক চিতিয়ে ভোট দিয়ে গেলেন মানুষ। কোথাও উঠল অতিসক্রিয়তার অভিযোগ। গ্রামের সাধারণ মানুষকে লাঠিপেটা, বাড়িতে ঢুকে গৃহবধূকে মারের অভিযোগ উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে ভোটের দায়িত্বে থাকা রাজ্য পুলিশের কর্মী-অফিসারদেরও এ দিন সদর্থক ভূমিকায় দেখা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন ভোটারেরা।
দুই মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা মোটের উপর সদর্থক। ঝাড়গ্রামের বিনপুর বিধানসভা এলাকায় একাধিক বুথে বৃদ্ধ ভোটারদের সাহায্য করতে, এমনকি, অসুস্থ ভোটারকে কোলে তুলে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের।
এ দিনের ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছে তৃণমূল। বিজেপি’র পক্ষে ভোট প্রভাবিত করার অভিযোগ তারা তুলেছেন বাহিনীর একাংশের বিরুদ্ধে। স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাওড়ার ডুমুরজলায় নির্বাচনী সমাবেশে বলেন, ‘‘বিজেপি উত্তরপ্রদেশ,
রাজস্থান থেকে পুলিশ এনে তৃণমূল কর্মীদের পেটাচ্ছে। ছাতনায় প্রার্থীকে ঘাড় ধরে বের করে দিয়েছে। এখানে এ সব করে কিছু হবে না। এখানে পুলিশ ফুলিশ হয়ে যাবে। দিল্লি থেকে এল গাই, সঙ্গে আবার পুলিশ ভাই। ’’সন্ধ্যায় রাজ্যের মুখ্য
নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাব বলেন, ‘‘তেমন অভিযোগ এলে তদন্ত হবে।’’
এ দিকে, পশ্চিম মেদিনীপুরের তিলবেড়িয়ায় ভোট দিতে যেতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধেই। খবর পেয়ে ওই গ্রামের বাসিন্দাদের ভোট দিতে রাজি করতে যান কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। তাঁদের এবং কমিশনের আধিকারিকদের শুনতে হয়, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী তো এলাকায় কয়েক দিন থাকবে, কিন্তু তার পর আমাদের কে বাঁচাবে?’’
গোপীবল্লভপুরে নয়াবসান জনকল্যাণ বিদ্যাপীঠ ভোট কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী দুলাল মুর্মু। ভোট কেন্দ্রের মুখে তাঁকে আটকান বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। এরপর তৃণমূল-বিজেপির বচসা শুরু হলে, কেন্দ্রীয় বাহিনী দুলাল-সহ দুই দলের কর্মীদের কেন্দ্রের প্রবেশদ্বার থেকে সরিয়ে দেয়। পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরের অর্জুনপুর এলাকার একাধিক বুথে তৃণমূলের পোলিং এজেন্টদের বুথ থেকে বার করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাহিনীর বিরুদ্ধে। পুরনো ঝাড়গ্রামে কেন্দ্রীয় বাহিনী তৃণমূল কর্মীদের উপর লাঠিচার্জের অভিযোগও সামনে এসেছে।
বাঁকুড়ার ছাতনার বাগজুড়ির ১৮২ নম্বর বুথে তৃণমূল প্রার্থী শুভাশিস বটব্যাল ও নির্দল প্রার্থী আবীর মণ্ডলকে বুথে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে। আবীরবাবুকে বাহিনীর জওয়ানেরা ধাক্কা দেন বলেও অভিযোগ। ওই জেলারই খাতড়ার কেয়তপাড়ার বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী তাঁকে ঢুকতে বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ আর এক তৃণমূল প্রার্থী জ্যোৎস্না মান্ডিরও। ছাতনা ব্লক তৃণমূল সভাপতি পরমেশ্বর কুণ্ডুও বলেন, ‘‘৯৫ নম্বর বুথের সিহিকা এলাকায় বুথ থেকে ৪০০ মিটার দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ভোটারদের উপরে লাঠি চালিয়েছে বাহিনী। আমরা অভিযোগ জানিয়েছি।’’
পুরুলিয়ার বোরো থানার বসন্তপুরে বাড়ি বাড়ি ঢুকে কেন্দ্রীয় বাহিনী লাঠিচার্জ করেছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের। বাহিনীর দাবি, বার বার বলেও বুথের সামনে জটলা সরানো যাচ্ছিল না। তাই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। লাঠিচার্জ হয়নি। জেলার রঘুনাথপুরের দু’টি বুথে বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে নির্বাচন
কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে তৃণমূল। রঘুনাথপুরের তৃণমূল প্রার্থী হাজারি বাউড়ির অভিযোগ, ওই বুথগুলিতে জওয়ানেরা বেছে বেছে তাঁদের কর্মীদের হেনস্থা করেছেন। বুথ থেকে প্রায় দুশো মিটার দূরে থাকা শিবির সরিয়ে দেয়। পুরুলিয়ার বিভিন্ন বুথেও বাহিনীর জওয়ানদের ভোট দিতে আসা লোকজনদের পাশে থাকার ছবিটাই বেশি চোখে পড়েছে। পুরুলিয়ায় এ দিন বুথের ১০০ মিটারের মধ্যে জটলা সরাতে বার বার তৎপর হতে দেখা গিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। নির্বিঘ্নে
ভোট দিতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন ভোটারেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy