সুজিত কারক। নিজস্ব চিত্র
তৃতীয় দফার ভোটে উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী পাপিয়া অধিকারীকে নিগ্রহের ঘটনায় ধৃত দু’জনের মধ্যে তিনি নেই। পুলিশের দাবি, তিনি পলাতক। বুধবার দুপুরে অবশ্য সেই ‘পলাতক’-কে উলুবেড়িয়ার ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের ফতেপুরে মোটরবাইক চড়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াতে দেখা গেল।
তিনি— সুজিত কারক। ফতেপুরেরই বাসিন্দা। পেশায় উলুবেড়িয়া পুরসভার কর্মী। এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত সুজিত। ওই ওয়ার্ডের প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর শেখ আকবরের অনুগামীও। মঙ্গলবার উলুবেড়িয়া হাসপাতাল চত্বরে পাপিয়াকে সপাটে চড় মারতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। সেই ছবি ‘ভাইরাল’ও হয়।
বুধবার চড় মারার কথা অস্বীকার করেন সুজিত। তাঁর দাবি, মঙ্গলবার ভোটের সময়ে তাঁদের এক নেতাকে বিজেপি কর্মীরা মারধর করে। তাঁকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। আকবরও যান। সেখানে বিজেপি প্রার্থীর উস্কানিতে ওই দলের কর্মীরা আকবরকে কটূক্তি ও মারধর করে বলে সুজিতের অভিযোগ। সুজিতের দাবি, ‘‘আমরা পাপিয়াদেবীকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলাম। পাপিয়াদেবী আমাদের গালিগালাজ করেন। আমি তাঁর মুখ বন্ধ রাখার জন্য হাত দেখিয়ে বলছিলাম। ঠেলাঠেলিতে ওঁর গায়ে হাত লেগে যায়। এটা না করলেই ভাল হত। আমি অনুতপ্ত।’’ সুজিতের স্ত্রী রত্নাও বলেন, ‘‘মহিলার গায়ে হাত দেওয়াটা ওঁর ঠিক হয়নি। এ জন্য আমিও অনুতপ্ত।’’
তৃণমূল নেতাকর্মীদের গালিগালাজ ও মারধরের অভিযোগ পাপিয়া মানেননি। তিনি আগেই জানিয়েছিলেন, মঙ্গলবার তাঁদের এক কর্মী আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁকে দেখতেই ভোট-পর্বের এক ফাঁকে তিনি হাসপাতালে যান। বেরনোর সময়ে আক্রান্ত হন। বুধবার তিনি বলেন, ‘‘মঙ্গলবার রাত থেকে পেট, পিঠ ও ঘাড়ে যন্ত্রণা হচ্ছে। সারারাত ঘুমোতে পারিনি। হাসপাতালে গিয়েছিলাম। চিকিৎসকেরা বিশ্রাম নিতে বলেছেন। ওই দলের (তৃণমূল) নেত্রী বড় বড় করে ছবি দিয়ে বলছেন, ‘বাংলা নিজের মেয়েকে চায়’। তাঁর দলের লোকই মহিলার গালে চড় মারছে। সম্মানহানি করছে।’’ এখানেই থামেননি পাপিয়া। সুজিত ধরা না-পড়ায় পুলিশকেও একহাত নিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘অভিযুক্তেরা তৃণমূল নেতা হওয়ায় পুলিশ ভয়ে গ্রেফতার করছে না। দিনের আলোয় তারা এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। উলুবেড়িয়া থানার আইসি শাসক দলের হয়ে কাজ করছেন।’’
সুজিত সম্পর্কে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া মিলেছে। কারও অভিযোগ, তিনি ‘দাদাগিরি’ করে বেড়ান। কেউ জানান, সুজিত সব কাজে এগিয়ে আসেন। বিপদে-আপদে তাঁকে পাশে পাওয়া যায়।
মঙ্গলবার ওই ঘটনার পরেই বিজেপির পক্ষ থেকে তৃণমূলের ৮ জনের নামে পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। তার মধ্যে সুজিতের নামও রয়েছে। ওই রাতেই পুলিশ জুলফিকার মণ্ডল এবং শেখ সাইফুদ্দিন নামে ফতেপুরের দু’জনকে গ্রেফতার করে। দু’জনেই এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত। ধৃতদের বুধবার উলুবেড়িয়া আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক দু’জনকেই ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
মূল অভিযুক্ত সুজিতকে এলাকায় দেখা গেলেও পুলিশ ধরছে না কেন?
হাওড়া জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার শ্রীহরি পাণ্ডের দাবি, ‘‘মূল অভিযুক্ত-সহ কয়েক জন পলাতক। তাদের খোঁজ চলছে। শীঘ্রই গ্রেফতার করা হবে।’’
গোটা ঘটনা নিয়ে এ দিনও বিশেষ মন্তব্য করতে চাননি ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী পুলক রায়। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ এখন নির্বাচন কমিশনের অধীনে। তারা কী করবে, তাদের বিষয়। আমি নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy