গোলমালের ‘ইতিহাস’ রয়েছে। ভোটের আগে অনেক বোমা-গুলি-বন্দুক উদ্ধার হয়েছিল। তার পরেও কোচবিহারের শীতলখুচির ১২৬ নম্বর বুথকে কেন ‘শান্তিপূর্ণ’ ধরে নেওয়া হল, সিআইএসএফ-এর গুলিতে চার গ্রামবাসীর মৃত্যুর পরে এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে বিভিন্ন মহলে।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, কোনও এলাকা নির্বাচনে উত্তপ্ত হবে কিনা এবং দুষ্কৃতী গতিবিধি রয়েছে কিনা তা বোঝার অন্যতম লক্ষণ হল বোমা-গুলি-বন্দুক উদ্ধারের পরিসংখ্যান। কিন্তু শীতলখুচির ক্ষেত্রে সেই পরিসংখ্যান কেন প্রশাসনের নজরে এল না সেটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হতে পারে।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনের ভোট ঘোষণার পর থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত শুধু কোচবিহার জেলার ন’টি বিধানসভা কেন্দ্রেই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার হয়। প্রশাসনিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, এই সময়সীমায় বন্দুক, গুলি, অন্যান্য অস্ত্র এবং বোমা মিলিয়ে জেলায় উদ্ধারের সংখ্যা ২৩৭টি। এর মধ্যে ১১৩টিই বোমা। শুধু শীতলখুচি বিধানসভা এলাকাতেই তিনটি বন্দুক, ২৬টি গুলি এবং ১৬টি বোমা উদ্ধার হয়েছে এ পর্যন্ত। প্রশাসন সূত্রের খবর, তার পরেও শীতলখুচির জোরপাটকি ১২৬ নম্বর বুথটি ‘ক্রিটিক্যাল’ তালিকায় ছিল না! ওই বুথ নিয়ে পুলিশ নিশ্চিন্ত থাকলেও, তারই পার্শ্ববর্তী নয়ারহাট, হাজরাহাট গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিল প্রশাসন। ভোট-কর্তাদের অনেকেরই দাবি, একাধিক এলাকা উপদ্রুত হলে, তার লাগোয়া কোনও একটি এলাকাকে নজরদারির বাইরে রাখা বাস্তবসম্মত নয়।
এ নিয়ে আবার জেলা প্রশাসনের অন্দরেই দু’রকম বক্তব্য শোনা যাচ্ছে। পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, "জোরপাটকি এমনিতে শান্ত এলাকা বলেই পরিচিত। এর আগে তেমন কোনও গন্ডগোল হয়নি।" কোচবিহার জেলা পুলিশ সুপার দেবাশিস ধর বলেন, "কমিশনের নির্দেশে সব বুথকেই স্পর্শকাতর ধরে নিয়ে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা
হয়েছিল। তাই প্রত্যেকটি বুথে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী ছিল।" ঘটনাচক্রে, প্রশাসনের দুশ্চিন্তায় থাকা এলাকাগুলিতে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা না হলেও, ‘শান্তিপূর্ণ’ ১২৬ নম্বর বুথের ঘটনা গোটা রাজ্যে তোলপাড় ফেলে দেয়।
ইতিমধ্যে গুলি চালনার ঘটনা ঘিরে মোবাইলে তোলা একটি ভিডিয়ো (আনন্দবাজার পত্রিকা তার সত্যতা যাচাই করেনি) প্রকাশ্যে এসেছে। সেটা সত্যি ধরে নিলে, ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, বুথের মধ্যে ভোটারেরা ছাড়াও অনেক মানুষ ছিলেন। তাঁদের অনেকের হাতেই বাঁশের লাঠি ছিল। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরাও প্রথম দিকে ইতস্তত ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। কাউকে কাউকে আবার স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলতেও দেখা যায়। এরই মধ্যে বুথের বাইরে রাজ্য পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা চলে আসেন। আচমকা গুলির শব্দ শোনা যায়। চিৎকার-চেঁচামেচির সঙ্গে কান্নার রোল ওঠে। বুথ এলাকার বাইরের রাস্তায় একজন আহতকে (সম্ভবত গুলিবিদ্ধ) শুইয়ে রাখা হয়। আরও দু’জনকে পড়ে থাকতে দেখা যায় বুথের অদূরেই। বুথের বন্ধ দরজা ভাঙার চেষ্টা করতেও দেখা যায় উত্তেজিত জনতাকে।
বুথের ১০০ মিটারের বৃত্তে ১৪৪ ধারা কার্যকর থাকার কথা। বিশেষজ্ঞ-মহলের প্রশ্ন, তা থাকলে কী ভাবে অত মানুষ সেখানে ঘুরে বেড়ালেন! কেন তাঁরা ওই বুথে ঢুকলেন! পুলিশ বা কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকার পরেও বুথের ১০০ মিটারের মধ্যে লাঠি হাতে তাঁরা ঢুকতে পারলেন কী করে!
কোচবিহার জেলা প্রশাসন দাবি করছে, জেলার ৩২২৯ টি বুথের মধ্যে ৭৭৪ টি বুথ ক্রিটিক্যাল ছিল। ১২৬ নম্বর বুথ নিয়ে খুব একটা চিন্তিত না থাকলেও আশেপাশের কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতের দিকে পুলিশের নজরদারি ছিল। যদিও ১২৬ নম্বর বুথের নিরাপত্তায় কোনও খামতি ছিল না। কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তার পাশাপাশি সেখানে ওয়েব ক্যামেরা ও সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ক্যুইক রেসপন্স টিম থেকে শুরু করে সেক্টর মোবাইল— সমস্তরকম ব্যবস্থাই নেওয়া ছিল। কিন্তু ঘটনা নিয়ে ওঠা প্রশ্নগুলির কোনও জবাব পাওয়া যায়নি। আবার ওয়েব বা সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা থাকলেও তার ভিডিয়ো ফুটেজ কোথায় গেল, সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা।
যদিও অভিজ্ঞ পুলিশ-কর্তাদের অনেকের বক্তব্য, নিরাপত্তায় ঠিক যে যে পদক্ষেপ করা প্রয়োজন ছিল, তা হয়নি। তথাকথিত ওই ‘শান্তিপূর্ণ’ বুথে যে গোলমাল হতে পারে, তা নিয়েও গোয়েন্দাদের কাছে কোনও আগাম তথ্য ছিল না, এটাও কার্যত প্রমাণিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy