দীর্ঘ দিন পর নবান্নে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পর নির্বাচনী প্রচারে মন দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু রাজ্যে ক্রমবর্ধমান কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করতে সোমবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ নবান্নে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম, স্বরাষ্ট্রসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর সঙ্গে ঘণ্টাখানেক বৈঠক করেন। তার পর সেখান থেকে তিনি সোজা ভবানীপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশনে গিয়ে ভোট দেন। ভোট দিয়ে কালীঘাটের বাড়িতে ফিরে যান মুখ্যমন্ত্রী।
সূত্রের খবর, কোভিড পরিস্থিতির মোকাবিলায় সোমবার নবান্নে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যে সব সিদ্ধান্তের কথা ওই বৈঠকে আলোচিত হয়েছে—
১) রামকৃষ্ণ মিশন রাজ্য সরকারকে জানিয়েছে, যদি কোনও পরিবারের উপার্জনকারী এমন সদস্য কোভিডে মারা যায় (মা অথবা বাবা) সেই পরিবারের ৬ থেকে ১৪ বছরের কোনও সন্তান থাকলে তাদের পড়াশোনা থেকে শুরু করে যাবতীয় দায়িত্ব নিতে তারা রাজি।
২) একটি বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় কিশোর ভারতী স্টেডিয়াম ও গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামে সেফ হোম করবে। ইতিমধ্যেই কিশোর ভারতী স্টেডিয়ামকে অস্থায়ী ৩০০ শয্যার কোভিড হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হয়েছে।
৩) অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতাল হজ হাউজে অস্থায়ী ২০০ শয্যার কোভিড হাসপাতাল করবে।
৪) আর একটি বেসরকারি হাসপাতাল তাদের সল্টলেক ক্যাম্পাসে কোভিড রোগীদের জন্য সেফ হোম করবে।
৫) উত্তীর্ণ মুক্তমঞ্চকে ইতিমধ্যে সেভ হোম করা হয়েছে। ওখানে অস্থায়ী কোভিড হাসপাতাল তৈরি করা হবে।
৬) অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতাল শয্যা বাড়াবে কোভিড রোগীদের জন্য, তাদের দুটো ক্যাম্পাসেই।
৭) পাইপ লাইনের মাধ্যমে সব জায়গায় (হাসপাতালে) অক্সিজেন সাপ্লাই এর ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা হচ্ছে।
৮) রাজ্য ৯৩টি অক্সিজেন প্ল্যান্ট তৈরি করতে চেয়ে কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানিয়েছে। কেন্দ্র আপাতত ৫টির অনুমতি দিয়েছে।
৯) সৎকারে সমস্যা যাতে না হয় সেই বিষয়ে সব রকম ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।
১০) যে কোনও পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য আধিকারিকদের তৈরি থাকতে বলা হয়েছে।
এর আগে উত্তর কলকাতার মিনার্ভা থিয়েটার হলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় সরকার-সহ নির্বাচন কমিশনকে আক্রমণ করেন মমতা। রাজ্যে বেড়ে চলা করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতির জন্য দীর্ঘ ভোট প্রক্রিয়াকেই দায়ী করে কমিশনকে কাঠগড়ায় তোলেন তিনি। তার পরেই নবান্নে গিয়ে বৈঠকে বসেন রাজ্যের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে।
নবান্ন থেকে বেলা ৩ টে ৪০ মিনিট নাগাদ রওনা দেন ভবানীপুরের উদ্দেশে। সোমবার ছিল দক্ষিণ কলকাতা সহ মালদহ ও মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ভোট। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি ভবানীপুর কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। তিনি ওই কেন্দ্রের ভোটারও। প্রতি ভোটে বিকেলের দিকে মিত্র ইনস্টিটিউশনে ভোট দেন তিনি। এ বারও তার ব্যত্যয় হয়নি।
বিকেল ৩টে ৫৫ মিনিট নাগাদ মিত্র ইনস্টিটিউশনে ভোট দিতে আসনে তিনি। হুইলচেয়ারে করেই ভোট দিতে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ভোট দিয়ে বেরিয়ে সোজা কালীঘাটে নিজের বাসভবনে চলে যান মমতা।