Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Assembly Election 2021

Bengal Polls: বাহিনীর বিরুদ্ধে সরব মমতা

দ্বিতীয় দফায় নন্দীগ্রামের ভোটেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিলেন মমতা। সে দিন তিনি ছিলেন প্রার্থী।

তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২১ ০৬:২১
Share: Save:

তৃতীয় দফার ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগের মাত্রা বাড়াল তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের ভোট দানে বাধা এবং বিজেপি-কে ভোট দেওয়ার জন্য মানুষকে উৎসাহ দান — কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে সরাসরি এই অভিযোগ আনলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কমিশন জানিয়েছে, তৃতীয় দফার ভোটে তিন জেলার ৩১ কেন্দ্রে মঙ্গলবার ৭৭.৬৮% ভোট পড়েছে। তবে এই হিসেব এ দিন বিকেল পাঁচটার। চূড়ান্ত হিসেব বুধবার পাওয়া যাবে বলে কমিশন জানিয়েছে। গত দুই দফায় ৮০%-র বেশি ভোট পড়েছে রাজ্যে। এই প্রথম চার প্রার্থীর উপরে সরাসরি আক্রমণের অভিযোগও উঠেছে। যাঁদের মধ্যে দু’জন মহিলা প্রার্থী। এই হামলার ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট জমা পড়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে।

হুগলির গোঘাটে এক বিজেপি কর্মীর মা-কে খুনের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। হুগলিতেই তারকেশ্বর থানা এলাকায় ভোট শুরুর আগে কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক জওয়ানের বিরুদ্ধে এক নাবালিকাকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। এ দিন নির্বাচন কমিশনে গিয়ে তৃণমূলের ফিরহাদ হাকিম সাংবাদিকদের বলেন, যে কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছে তারা বিজেপির এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে, পদ্মফুলে ভোট দিতে বলছে। তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা মণ্ডলের উপরে আক্রমণ নিয়ে ফিরহাদ বলেন, ‘‘কমিশন কি তার দায়িত্ব পালন করছে? কেন্দ্রীয় বাহিনী বাংলার মা-বোনেদের শ্লীলতাহানি করছে। বাংলার মেয়েদের কি কোনও ইজ্জত নেই?’

আরও অভিযোগ, কোভিড বিধি কোথাও মানা হয়নি। বুথের ভিতরে কোথাও কোথাও ভোট কর্মী ও অফিসারদের মাস্ক পরে থাকতে দেখা গেলেও বেশিরভাগ ভোটারদের সে সবের বালাই ছিল না।

তৃণমূল ও বিজেপি সাধারণ মানুষকে হুমকি এবং বাধা দিয়েছে বলে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতরে মঙ্গলবার অভিযোগ জানিয়েছে বামফ্রন্ট। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রবীন দেব বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করেও অবস্থার উন্নতি হয়নি।’’ রবীনবাবুদের আরও অভিযোগ, বিভিন্ন কেন্দ্রে যখন ভোট চলছে, সেই দিনেই রাজ্যের অন্যত্র প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী সভা করছেন এবং সেই সভার সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছে টিভিতে। এর ফলে ভোটাররা প্রভাবিত হচ্ছেন। সিইও আরিজ আফতাব বলেন, ‘‘কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া ভোট শান্তিপূর্ণ ভাবেই হয়েছে।’’ এ দিন কমিশনের কাছে মোট অভিযোগ এসেছে ১৮০২টি। মঙ্গলবারেই কলকাতার আটটি বিধানসভা কেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসারকে বদল করে নতুন অফিসারদের নিয়োগ করেছে কমিশন।

দ্বিতীয় দফায় নন্দীগ্রামের ভোটেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিলেন মমতা। সে দিন তিনি ছিলেন প্রার্থী। মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গে ভোট প্রচারের সময়ে তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘বাহিনী বলছে, বিজেপি-কে ভোট দাও। তা না হলে দেখে নেবো। তুমি কী দেখবে? মা-বোনদের বলছি ভোট দিতে বাধা দিলে এফআইআর করুন। কমান্ডান্টদের বিরুদ্ধে আমি আজ একশোটা এফআইআর করেছি।’’ এ দিন টুইট করেও একই অভিযোগ করেছেন মমতা। সিইও দফতরের বক্তব্য, প্রতিটি অভিযোগের অনুসন্ধান করা হবে।

মঙ্গলবার বাহিনীর বিরুদ্ধে শ্রীরামপুরে কর্মীদের মারধর করে হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূল প্রার্থী দিলীপ যাদব। তারকেশ্বর মহাবিদ্যালয়ের বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মহিলা সাংবাদিকদের ধাক্কধাক্কি করে বলে অভিযোগ। ধনেখালির গুড়বাড়ি এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে দুই নতুন ভোটারকে মারধরের অভিযোগ করেন তৃণমূল প্রার্থী অসীমা পাত্র।

তৃণমূলের অভিযোগ, হাওড়ার শ্যামপুরে, জগৎবল্লভপুরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাদের বুথ ক্যাম্প ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি। আমতায় তাদের এজেন্টকে ঢুকতে দেয়নি। জগৎবল্লভপুরের তৃণমূল প্রার্থী সীতানাথ ঘোষ বল‌েন, ‘‘ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী।’’ উলুবেড়িয়া দক্ষিণের তৃণমূল প্রার্থী পুলক রায় বলেন, ‘‘কোনও কোনও বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী অহেতুক অতি সক্রিয়তা দেখিয়েছে।’’

বিজেপির অভিযোগ, উলুবেড়িয়া উত্তরের চন্দ্রপুরে তৃণমূল একতরফা ভোট করার সময়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দেখা যায়নি। উলুবেড়িয়া দক্ষিণে মাতাপাড়ায় বিজেপি কর্মীদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠলেও সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী যায়নি।

এলাকা ঘুরে দেখা গিয়েছে, একেকটি বুথে চারজন করে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান ছিলেন। বুথের ভিতরে ভোটার ও প্রার্থী ছাড়া কাউকে তাঁরা ঢুকতে দেননি। প্রার্থীদের সঙ্গে থাকা নিরাপত্তারক্ষীদের বুথে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। শ্যামপুরের বিজেপি প্রার্থী তনুশ্রী চক্রবর্তীর সঙ্গে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান ও সংবাদ মাধ্যমকেও বুথে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। উদয়নারায়ণপুরের কংগ্রেস প্রার্থী অলোক কোলে বলেন, ‘‘বুথের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনী খুব নিরপেক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছে।’’

মগরাহাট পশ্চিমে তৃণমূল প্রার্থী এবং রাজ্যের বিদায়ী মন্ত্রী গিয়াসুদ্দিন মোল্লার বিরুদ্ধে হুমকির অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ, সেখানকার আইএসএফ প্রার্থী মইদুল ইসলাম বুথে ঢুকতে গিয়ে বাধা পেয়ে ধর্নায় বসে যান। তার পরে গিয়াসুদ্দিন তাঁর দিকে তেড়ে যান এবং হুমকি দেন বলে অভিযোগ।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকায় বেশিরভাগ ভোটারদেরই কোভিডবিধি মানতে দেখা যায়নি। মাস্কের ব্যবহার প্রায় ছিল না। কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী দুপুরের পরে একাধিক বুথেই ডান হাতের গ্লাভস পাননি ভোটার। ভোটকর্মীদের বক্তব্য, “গ্লাভস শেষ হয়ে গিয়েছে। ফের চেয়ে পাঠানো হয়েছে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy