পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা। নিজস্ব চিত্র।
নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগে শুক্রবার তাঁকে দ্বিতীয় নোটিস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তার পরেও কমিশনকে নিশানা করে এ দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগ তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মন্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রী এত উল্টোপাল্টা কথা বলেন, বিধিভঙ্গ হয় না। অমিত শাহ যা-তা বলে যান, বিধিভঙ্গ হয় না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জনগণের কাছে বক্তৃতা দিলে বিধিভঙ্গ হয়!’’
পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও ফের সরব হয়ে মমতা বলেন, ‘‘আমি সিআরপিএফ, সিএসএফ নিয়ে তত ক্ষণই বলব, যত ক্ষণ তারা বিজেপি করবে। তারা বিজেপি না-করলে আমি তাদের স্যালুট করব।’’
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অবশ্য মনে করেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে মমতার আক্রমণ তাঁর হতাশাপ্রসূত। শাহের কথায়, ‘‘কোনও দিন দেখিনি, কোনও মুখ্যমন্ত্রী বা কোনও দলের শীর্ষ নেতা বা নেত্রী নিরাপত্তাবাহিনীকে ঘিরে ফেলতে বলেন! এটা উনি কী বলেছেন? কেন বলেছেন? লোককে অরাজকতা করতে বলছেন? উনি কি চান ভোটে অশান্তি হোক?’’ শুভেন্দু অধিকারীকেও কমিশনের নোটিস প্রসঙ্গে শাহ বলেন, ‘‘মমতাদিদি এবং শুভেন্দুজি দু’জনেরই নোটিসের জবাব দেওয়া উচিত। শুভেন্দুজি উত্তর দিচ্ছেন।’’
পূর্ব বর্ধমানের বিভিন্ন প্রচারসভায় তাঁকে নির্বাচন কমিশনের পাঠানো নোটিসের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘এতে (নোটিসে) আমার কিছু যায়-আসে না। জনগণের সঙ্গে ছিলাম, আছি, থাকব।’’ নোটিসের জবাবে এই উত্তরই দেবেন বলেও জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ বারের নির্বাচনে গোড়া থেকেই প্রচার ছিল উচ্চগ্রামে বাঁধা। শাসক ও বিরোধীর পারস্পরিক আক্রমণ শুরু থেকেই ছিল ঝাঁঝাল। তারই মধ্যে মমতার এ দিনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আবার বিধিভঙ্গের কেস করবে। আমার বিরুদ্ধে যত কেস করবে, তত দীর্ঘজীবী হব আমি।’’
তৃণমূল নেত্রীর অভিযোগ, ‘‘প্রধানমন্ত্রী প্রতিটা ভোটের দিন প্রচার করেন। উনি না করলে আমরাও করতাম না। অন্য রাজ্যে কর। বাংলায় কেন? এখানে ভোট চলছে। তখন বিধিভঙ্গ হয় না?’’ কমিশনের উদ্দেশে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘আমাকে আপনারা আগের ভোটেও অনেক বার শো-কজ় করেছেন, কীসের জন্য? ঠিকমতো প্রচার পর্যন্ত করতে দেননি!’’
কমিশনের প্রতি এ দিন মমতার চ্যালেঞ্জ, ‘‘তৃণমূলকে খতম করতে অনেক অত্যাচার, অবিচার, দুরাচার চলছে। সবই তো বদলে দিয়েছেন। প্রতিদিন বিজেপি যা বলছে, তাই করছেন। কিন্তু তৃণমূলকে খতম করতে পারবেন না। কারণ, আমার সঙ্গে মানুষ আছে।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘বিজেপি আপনাদের কে? ভাবেন কি আপনারা আমায়? তিনটে লোক মিলে যা ইচ্ছে করবেন?’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘জওয়ানদের সম্মান করি। কিন্তু অমিত শাহকে স্যালুট করি না। অমিত শাহের নির্দেশে এরা কাজ করছে।’’
বিজেপি সম্পর্কে ‘সতর্ক’ করে মমতা বলেন, ‘‘আমরা চাই শান্তিতে ভোট। কিন্তু ওরা গুন্ডামি করছে। তবে ওরা গুন্ডামি করবে এক দিন, আমরা থাকব ৩৬৫ দিন।’’ এর পরেই সভায় উপস্থিত মহিলাদের উদ্দেশে তৃণমূল নেত্রীর বার্তা, ‘‘বিজেপি ভয় দেখালে বলবেন, শিল-নোড়া দেখেছিস? এটা দিয়ে মশলাও বাটি, দাঁতের গোড়াও ভাঙি।’’
রাজ্যের কিছু কিছু উপরতলার পুলিশ অফিসার কেন্দ্রের শাসক দলের দিকে ‘ঝুঁকে’ রয়েছেন বলে অভিযোগ করে মমতা বলেন, ‘‘অনেককে কেনা হয়েছে, আমি শুনেছি। গ্রামে গ্রামে গিয়ে পুলিশ কেন ভয় দেখাবে? কেন বলবে বিজেপিকে ভোট দিতে? কেন লোককে মারবে?’’ নন্দীগ্রামে তৃণমূল কর্মী খুন হওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মমতার মন্তব্য, ‘‘যে খুন করেছে, তাকে এখনও গ্রেফতার করেনি। আমার হাতে পুলিশ থাকলে দেখিয়ে দিতাম মজা। ভোটের পরে আমি থাকব। দেখব, কত অশান্তি কারা করতে পারে।’’
অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ এ দিন কলকাতায় বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্য সভাপতি থেকে শুরু করে অন্যান্য নেতা-কর্মীদের উপর হামলা হচ্ছে। ভবানীপুরে থানার ভিতরে বসা কর্মীদের উপরেও হামলা হয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্ব কোনও ঘটনারই নিন্দা করেননি!’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘এক সময় মমতাদিদি অনুপ্রবেশকারীদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য তিন বার সংসদে হল্লা করেছেন। এক সময় তিনি বলতেন, সিএপিএফ ছাড়া ভোট হলে রিগিং হবে। এখন তিনি সিএপিএফ-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘পঞ্চায়েত এবং লোকসভা ভোটের তুলনায় এ বার অনেক কম হিংসা হয়েছে। সে জন্য নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy