আলিপুরদুয়ারের কালচিনিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
হেরে যাওয়ার ভয়ে গুন্ডামি করছে বিজেপি। মঙ্গলবার কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ার থেকে এমন অভিযোগই করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে তৃতীয় দফার ভোট চলাকালীন তিন জেলার বিভিন্ন প্রান্তে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে অশান্তি ও অত্যাচারের অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। মমতা মঙ্গলবার বলেন, ‘‘সকাল থেকে আমার কাছে খবর আসছে বিজেপি হারছে। আর দেখছি পাল্লা দিয়ে ওদের গুন্ডামিও বাড়ছে। বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা দিল্লিতে গিয়ে নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর কথাতেই বুথ দখল করে গুন্ডামি করছে কেন্দ্রীয় বাহিনী।’’
খানাকুলের তৃণমূল প্রার্থী নাজবুল করিম এবং আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা মণ্ডল খাঁ মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করেছেন। মমতা কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী বলছে, বিজেপি কো ভোট দো। নেহি তো হাম দেখলেঙ্গে। আজ সকাল ওরা মারধর করছে আমাদের কর্মী, সমর্থক এমনকি প্রার্থীদেরও। আমার খানাকুলের ক্যান্ডিডেটকে মেরেছে। আমার আরামবাগের মহিলা ক্যান্ডিডেট সুজাতাকে মেরেছে। সুজাতার নিরাপত্তারক্ষীদের মেরেছে। মহিলাদের উপর অত্যাচার করেছে। কমিশনের উচিত বিষয়টি খতিয়ে দেখা।’’
আলিপুরদুয়ারের কালচিনির প্রার্থী পাসং লামার সমর্থনে সেখানে মঙ্গলবার জনসভা করেন মমতা। কমিশনকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে শান্তিপূর্ণ ভোট করানোর লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী এনেছে কমিশন। আমাদের থেকে প্রচুর সুযোগসুবিধা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তার পরেও রাজ্যে তিন দফা ভোটে ৭-৮টা মার্ডার হয় কী করে?’’ নিহতদের মধ্যে ৪ জন তৃণমূল সদস্য বলে দাবি করেন মমতা। একই সঙ্গে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘‘কই পঞ্চায়েত ভোটের সময়েও তো এমন হয়নি!’’
তৃণমূল প্রার্থী এবং বিদায়ী বিধায়ক শওকত মোল্লাকে মঙ্গলবার সকালে বুথে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করে তৃণমূল। আলিপুরদুয়ারের মঞ্চ থেকে মমতা সে প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘‘শওকত এক জন এমএলএ, এক জন ক্যান্ডিডেট। ও বুথে ঢুকতে চাইলে কেন্দ্রীয় বাহিনী ওকে ঢুকতে দেয়নি। বলেছে, সির্ফ বিজেপি কো ঘুষনে দেঙ্গে। কেন? এত সাহস হয় কী করে ওদের? চালাকি হচ্ছে!’’ স্থানীয় নেতাদের নাম ধরে ডেকে মঞ্চে বসেই এর পর তৃণমূল নেত্রীর নির্দেশ দেন, ‘‘তোমরা খেয়াল রাখবে, এখানে ভোটে যেন কোনও বাইরের গুন্ডা ঢুকতে না পারে। ওদের আটকাতে হবে। সতর্ক থাকবে।’’
বিজেপি-র বিরুদ্ধে গুন্ডামির অভিযোগে অবশ্য এখানেই থামেননি মমতা। জেপি নড্ডাকেও আক্রমণ করেছেন। দিন কয়েক আগে বাংলায় সভা করতে আসা নড্ডার সভায় যথেষ্ট ভিড় হয়নি বলে দাবি করেছিল কোনও কোনও মহল। তার উল্লেখ করে মমতা বলেন, ‘‘নড্ডা এসেছিল। দেখেছে সভায় লোক হয়নি। দিল্লিতে ফিরে গিয়ে সিআরপিএফ-কে নির্দেশ দিয়েছে, সব বুথ ক্যাপচার করে নাও।’’ বিজেপি বন্দুক আর গুন্ডার ভয় দেখিয়ে বাংলার নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্যও করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আমেরিকার ভোটে ট্রাম্পও এত দূর যাননি, বাংলার ভোট নিয়ে মোদীর কীর্তি যে জায়গায় পৌঁছেছে।’’ কেন্দ্রীয় সরকারকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, ‘‘সুকমায় ২১ জন সিআরপিএফ জওয়ান মারা গেল, সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। কেন্দ্রীয় নেতারা সব বাংলায় এসে বসে আছে।’’
একই সঙ্গে মমতা মঙ্গলবার সভা করেন কোচবিহারের ঘোকসাডাঙা এবং মেখলিগঞ্জে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন কোচবিহারের রাসমেলা ময়দানে জনসভা করছেন, মমতা তখন জেলারই ঘোকসাডাঙা এলাকায় মাথাভাঙা বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থীকে নিয়ে জনসভা করেন। সেই জনসভায় নরেন্দ্র মোদীকে ‘মিথ্যেবাদী’ বলেও আক্রমণ করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী কোচবিহারে দাঁড়িয়ে বলছে ইলেকশনের পরে নারায়ণী সেনা তৈরি করা হবে। কিন্তু গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়ার আরটিআই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের নারায়ণী সেনা তৈরির বিষয়ে কোনও প্রস্তাব নেই। মিথ্যেবাদী প্রাইম মিনিস্টার শুধু মিটিংয়ে গিয়ে আমাকে ভেংচি কাটে। ব্যাঙাচি যেমন ভেংচি কাটে, নরেন্দ্র মোদীর দল তেমন ভেংচি কাটে আর মিথ্যা কথা বলে।’’ মোদীকে মিথ্যাবাদী ‘দুঃশাসন’ বলেও কটাক্ষ করেন মমতা। তিনি ঘোকসাডাঙার মঞ্চ থেকে অভিযোগ করেন, ‘‘আজ বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচন রয়েছে। বিজেপি-সিপিএমের হার্মাদদের নিয়ে গুন্ডামি করে বেড়াচ্ছে। সেন্ট্রাল ফোর্সকে আমি সম্মান করি। কিন্তু কিছু কিছু সেন্ট্রাল ফোর্স বিজেপি-র হয়ে কাজ করছে।’’
ঘোকসাডাঙা ও মেখলিগঞ্জের জনসভা সেরে তিনি সোজা কোচবিহারে আসেন। কোচবিহারের জেনকিন্স স্কুলের মাঠে হেলিপ্যাডে নেমে তিনি হুইলচেয়ারে করে কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী অভিজিৎ দে ভৌমিক এবং নাটাবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে নিয়ে কোচবিহার শহরের রাস্তা দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলতে বলতে বিশ্ব সিংহ রোডের একটি বেসরকারি হোটেলে পৌঁছন। মঙ্গলবার তিনি কোচবিহারে থাকবেন। বুধবার কোচবিহার উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের বাণেশ্বরে এবং শীতলকুচি বিধানসভা কেন্দ্রের শিকারপুর এলাকায় জনসভা করবেন মমতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy