খোলা-মনে: কথা বলছেন ওঁরা। নিজস্ব চিত্র।
জীবনে প্রথমবার হাতে মাইক ধরলেন বৃদ্ধা সুদেষ্ণা মণ্ডল। নেতারা হাসি হাসি মুখে বসে। এলাকার উন্নতি নিয়ে আরও কী করা উচিত, সে সব নিয়ে মতামত জানতে চেয়ে সভা বসিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু সুদেষ্ণা, সঞ্চিতা, কাকলিরা মাইক হাতে যা বললেন, বসন্তের সন্ধ্যায় কপালে ক্রমে ক্রমে ঘাম জমতে থাকল নেতাদের। কেউ বললেন, এখনও বার্ধক্যভাতা পেলাম না। কেউ জানালেন, গ্রামের রাস্তার দূরবস্থার কথা। কেউ বললেন, আমপানে ঘর ভেঙেছিল। এখনও সেখানেই মাথা গুঁজে থাকতে হচ্ছে। অথচ, কত নেতা আর তাঁদের পরিবার ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়ে গেলেন।
বলার সুযোগ পেলে গ্রামের মানুষের জমে থাকা কত ক্ষোভ যে সামনে আসতে পারে, সে কথা বোঝা গেল সভায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু মহিলা পরে বললেন, ‘‘এতে দিদির (মুখ্যমন্ত্রী) তো দোষ নেই। সরকার তো কত কত টাকা ঢালছে। কিন্তু সে সবে স্থানীয় নেতাদের পকেট ভারী হচ্ছে শুধু। সব কথা তো আর দিদির কানে পৌঁছনোর উপায় নেই!’’
রবিবার সন্ধ্যায় মিনাখাঁর মোহনপুর গ্রামে বসেছিল সভা। মহিলাদের হাতে মাইক্রোফোন তুলে দিয়ে তাঁদের সুবিধা-অসুবিধার কথা বলতে বলা হয়েছিল। উদ্যোক্তা, স্থানীয় তৃণমূল নেতা যজ্ঞেশ্বর প্রামাণিক।
কথা বলার সুযোগ পেয়ে রীতিমতো হুড়োহুড়ি পড়ে যায় মহিলাদের মধ্যে। প্রায় তিনশোজন এসেছিলেন। কণিকা দাস বলেন, ‘‘আমপানে যাঁদের ক্ষতি হয়নি, তাঁরা টাকা পেলেন। অথচ আমার বাড়িটা ঝড়ে ভেঙে পড়লেও ক্ষতিপূরণ পেলাম না। বাধ্য হয়ে কোনও রকমে ছোট্ট একটা কুঁড়েঘরে দিন কাটাচ্ছি।’’
সুদেষ্ণা মণ্ডল নামে এক বৃদ্ধা বললেন, ‘‘মমতা (মুখ্যমন্ত্রী) তো আমাদের সব দিচ্ছেন। তা নিয়ে বড় একটা অভিযোগ নেই। তবে এখনও বার্ধক্য ভাতা পেলাম না। তাই কোনও রকমে চেয়েচিন্তে দিন কাটছে।’’
বৃদ্ধার কথা শেষ হতে না হতেই সভাস্থলে উঠে দাঁড়িয়ে রীতিমতো ক্ষোভের সুরে কাকলি মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাদের পাড়ার রাস্তাটা এখনও পর্যন্ত ভাঙাচোরা। বৃষ্টি হলেই যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। অনেক জায়গায় ঢালাই রাস্তা হলেও আমাদের রাস্তা ঢালাই হয় না কেন বুঝতে পারি না।’’
পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছে, তা আন্দাজ করে তৃণমূলের কর্মীরা মহিলাদের শান্ত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু তখনও যে সব বলা হয়ে ওঠেনি সকলের। তাঁদের তখন থামানো দায়।
গৃহবধূ সঞ্চিতা দাস বলেন, ‘‘আমরা খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করেছি। অথচ কোনও কর্মসংস্থান হচ্ছে না। যদি কোনও কাজের ব্যবস্থা করা হয়, তা হলে ভাল হয়।’’
সকলকে পাশে থাকার আশ্বাস দেন তৃণমূলের কর্মীরা। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর গত দশ বছরের উন্নয়নের খতিয়ান সকলের সামনে তুলে ধরেন। মহিলাদের অভিযোগ দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন। যজ্ঞেশ্বর বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা। এখানকার বিদায়ী বিধায়ক একজন মহিলা। তাঁরা যে ভাবে উন্নয়নের কাজ করেছেন, তাতে আমরা গর্বিত। মহিলারাই পারেন সমাজকে উন্নত করতে। তাই আমরা মহিলাদের নিয়ে সভার আয়োজন করেছি। দ্রুত যাতে সকলের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়, সেইই চেষ্টা করা হবে।’’
তবে এমন আশ্বাসের সুর তাঁদের চেনা, জানালেন গাঁয়ের বধূরা। সেই মিষ্টি কথায় কাজ কতটা হবে, তা নিয়ে দিনের শেষে সন্দেহ কারও অবসান হল না, সে প্রশ্ন থেকেই গেল।
মিনাখাঁ বিধানসভার তৃণমূল চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক উষারানি মণ্ডলের স্বামী মৃত্যুঞ্জয় বলেন, ‘‘আমপানের ক্ষতিপূরণের টাকা আমরা যথাযথ ভাবে সকলকে দিয়েছি। অনেকের ব্যাঙ্কে সমস্যা থাকায় টাকা ঢোকেনি। তবে নির্বাচনের পরে অনেকে টাকা পাবেন। আর ওই অঞ্চলের চারটি বুথ বিজেপির দখলে আছে। বিজেপি ওই চারটি বুথে কোনও উন্নয়নমূলক কাজ করতে দিচ্ছে না। ওই অঞ্চলের বাকি সমস্ত বুথে রাস্তা থেকে আরম্ভ করে সমস্ত ধরনের পরিষেবা দেওয়া হয়েছে।’’
মিনাখাঁর বিজেপি নেতা জয়ন্ত মণ্ডল পাল্টা বলেন, ‘‘ওই চারটি বুথে বিজেপি সমর্থক থাকায় তৃণমূল কোনও উন্নয়ন করতে চাইছে না। তৃণমূল যে সারাক্ষণ মিথ্যা বলে, এটাই তার প্রমাণ। এখনও পর্যন্ত ওই চারটি পঞ্চায়েতের সদস্যকে পঞ্চায়েত অফিসে পর্যন্ত ঢুকতে দেওয়া হয় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy