আহারে নড্ডা। নিজস্ব চিত্র।
শুক্রবার বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা ভোটের প্রচারে জেলায় এসে পা রাখবেন তাঁর বাড়িতে। সেখানেই মধ্যাহ্নভোজন সারবেন— এই কথা শোনার পর থেকেই টেনশন করছিলেন চাকদহের বাসন্তী বিশ্বাস। শেষমেশ যে সব কিছু ঠিক ভাবে মিটে গিয়েছে, তাতে খানিক স্বস্তি ফিরেছে দিন আনি-দিন খাই পরিবারের ভ্যানচালক দিলীপ বিশ্বাসের গৃহিণীর মুখে।
এ দিন বিজেপির নেতাকে নিজের হাতে রেঁধে-বেড়ে খাইয়ে এতটাই খুশি হয়েছেন ভ্যানচালকের স্ত্রী বাসন্তী, যে তিনি নিজের চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। বলছেন, ‘‘আমি কোনও দিন আশা করিনি, ওঁকে আমার ঘরে বসিয়ে খাওয়াতে পারব।’’
নড্ডাকে নিজের ঘরের দাওয়ায় বসে আপ্যায়ন করে বাসন্তী বলছেন, ‘‘ভগবানের সেবা করে তার কাছে আমি কিছু চাই না। আমি দল করি না। সবাই বলছে, এ বার ওদের ভোট দিতে। সবাই যদি দেয়, তা হলে আমার দিতেই বা আপত্তি কোথায়?’’
শুক্রবার চাকদহ চৌরাস্তা থেকে রথতলা পর্যন্ত রোড শোয়ের শেষে পুমলিয়া দাসপাড়ায় ভ্যানচালক দিলীপ বিশ্বাসের বাড়িতে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির মধ্যাহ্ন ভোজনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। দলের ওই নেতা ছাড়াও সেখানে উপস্থিত ছিলেন রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকার, চাকদহ কেন্দ্রের প্রার্থী বঙ্কিম ঘোষ-সহ অনেকে। তাঁরা সকলেই এ দিন দিলীপ ও বাসন্তীর ঘরে দুপুরের আহার সেরেছেন।
বাসন্তী জানাচ্ছেন, জে পি নড্ডার জন্য এ দিন নিরামিষ আহারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। অতিথি আপ্যায়নে লম্বা পদের তালিকায় ছিল সাদা ভাত, ডাল, শাক, চিপস, আলু ভাজা, ছানার তরকারি, পনিরের তরকারি, চাটনি, পাপড়, দু’রকমের মিষ্টি এবং দই। কিনে আনা নতুন মাটির থালা এবং গ্লাসে খাবার পরিবেশন করা হয়েছিল। বিজেপি নেতার জলপানের জন্য আগে থেকে মিনারেল ওয়াটারের ২০ লিটারের জারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, জানাচ্ছেন বাসন্তী।
বাসন্তী জানাচ্ছেন, শুক্রবার ভোর থাকতে থাকতেই বিছানা ছাড়েন। মোট দশ জনের মতো রান্না করার বরাত ছিল। সব কিছু গুছিয়ে সকাল ন’টা থকে রান্না শুরু করেন বাসন্তী। তাঁকে রান্নায় সহযোগিতা করেছেন ভাইয়ের বৌ কনিকা পাল। এ দিন কণিকাকে পাশে নিয়ে বসে বাসন্তী বলেন, “আগের দিন ভাই আমায় বলেছিল, ওঁদের জন্য রান্না করে দিতে হবে। আমি নড্ডাকে চিনতাম না। এখন জানতে পারছি, কার জন্য রান্না করেছি। ওঁদের খাওয়াতে পেরে খুব ভাল লাগছে।’’
বাজার, কুটনো কাটা, থালা-গ্লাস কেনা, মিনারেল ওয়াটারের জার কেনা— সবই হয়েছে তাঁর এবং ভাইয়ের টাকায়। তবে তা নিয়ে কোনও আপসোস নেই বাসন্তীর। তিনি উৎফুল্ল বিজেপি নেতার সামনে আসতে পেরে বলে। বাসন্তী বলছেন, ‘‘উনি বাংলায় কথা বলেছেন। আমাদের বললেন— ‘আমি বাংলার জামাই’। ওঁর ডাল খুব ভাল লেগেছে। ভাত এবং ডাল চেয়ে খেয়েছেন। ওঁর সঙ্গে রাজনীতির কোনও কথা হয়নি।”
অতিথি-অ্যাপায়নের পরে অবশ্য নিজেদের জন্য এ দিন রাতে হাঁড়ি চড়েনি বাসন্তীর হেঁসেলে। শ্রান্ত গলায় বলেন, ‘‘সারা দিন খাটাখাটনি গিয়েছে। যেটুকু খাবার বেঁচে গিয়েছে, তা দিয়ে আজ হয়ে যাবে।’’
এ দিন তিনটে নাগাদ একের পর এক গাড়ি এসে থামে চাকদহ ব্লকের তাতলা ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের পুমলিয়া দাসপাড়া এলাকায় পেশায় ভ্যানচালক দিলীপ বিশ্বাসের বাড়ির পাশের মাঠে। সঙ্গে ছিল এক দল কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং রাজ্য পুলিশ। এক সঙ্গে এত গাড়ি আসতে দেখে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন এলাকার মানুষ। তাদের মধ্যে মহিলার সংখ্যাই ছিল বেশি, অনেকে ছেলে-মেয়ে সঙ্গে নিয়ে ভিড় করেছিলেন বাসন্তী-দিলীপের ঘরের সামনে। একবার সর্বভারতীয় বিজেপি নেতার দর্শন পাওয়ায় আশায়। হাতে স্মার্টফোন ধরা এক স্কুল ছাত্রী বলে, ‘‘ভেবেছিলাম নড্ডার সঙ্গে সেলফি তুলব। কিন্তু যা অবস্থা দেখছি, তাতে আর সম্ভব নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy