তিন প্রার্থী: বিশ্বনাথ পাড়িয়াল (তৃণমূল), লক্ষ্মণ ঘোড়ুই (বিজেপি) এবং দেবেশ চক্রবর্তী (কংগ্রেস)।
ভোটারের ‘অভিমান’, ভোটপ্রাপ্তির অঙ্ক ও ‘নির্দল’-কাঁটা— এই তিনটি বিষয়ই যেন তাড়া করছে যথাক্রমে সংযুক্ত মোর্চা, তৃণমূল ও বিজেপিকে। এমনটাই মনে করছেন দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের রাজনীতির সঙ্গে পরিচিতদের একাংশ। যদিও, তিন শিবিরই এ সব তত্ত্বকে উড়িয়ে দিয়েছে।
দুর্গাপুর পুরসভার ১১-২২ ও ২৯-৪৩, মোট ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে তৈরি এই কেন্দ্রে সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত কংগ্রেস, তৃণমূল ও বিজেপি প্রার্থীরা যথাক্রমে, দেবেশ চক্রবর্তী, বিশ্বনাথ পাড়িয়াল এবং লক্ষ্মণ ঘোড়ুই। ২০১৬-য় বাম-সমর্থনে কংগ্রেসের টিকিটে প্রায় ৫৬ শতাংশ ভোট পেয়ে জেতেন বিশ্বনাথ পাড়িয়াল। কিন্তু ভোটে জেতার পরে থেকেই তিনি ‘তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ’ এবং এ বার তৃণমূল প্রার্থী। কংগ্রেস প্রার্থী দেবেশবাবুকে প্রচারে নেমে ‘‘গত বার ভোট দিয়ে জেতালাম। এ বারেও তেমন হবে না তো?’’, ভোটারের এমন ‘অভিমানে’র কথা শুনতে হচ্ছে। পাশাপাশি, এলাকাবাসীর একাংশের মতে, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র দেবেশবাবুর সমর্থনে রোড-শো করলেও এলাকার বাম নেতা-কর্মীদের একাংশকে সে ভাবে প্রচারে দেখা যাচ্ছে না। যদিও, সে অভিযোগ মানেননি সিপিএম নেতা পঙ্কজ রায় সরকার। এ দিকে, প্রবীণ কংগ্রেস নেতা স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় দেবেশবাবুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে ‘নির্দল’ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের সব নেতাদেরও দেবেশবাবুর প্রচারে দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। যদিও তা মানেননি দেবেশবাবু।
এ দিকে, ২০১৭-র পুরভোটে দুর্গাপুরের ৪৩টি ওয়ার্ডে তৃণমূলের পতাকা উড়লেও, বিরোধীদের অভিযোগ, ‘সে ছিল সন্ত্রাসের ভোট’। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি। কিন্তু গত কয়েকটি নির্বাচনে ভোটপ্রাপ্তির অঙ্ক তাঁদের জন্য চিন্তার, ঘরোয়া আলোচনায় তা স্বীকার করছেন তৃণমূল নেতৃত্বর একাংশ। ২০১২-র পুরভোটের তুলনায় ২০১৪-র লোকসভা ভোটে একটি ওয়ার্ডে ভোট বাড়ে তৃণমূলের। কিন্তু কেন্দ্রের অন্তর্গত বাকি ২৬টি ওয়ার্ডেই গড়ে দশ শতাংশ ভোট কমে। এর মধ্যে ছ’-সাতটি ওয়ার্ডে ভোট কমে ২০ শতাংশেরও বেশি। আবার ২০১৪-র নিরিখে ২০১৬-র বিধানসভায় সব ওয়ার্ডেই ভোট কমে তৃণমূলের। ২০১৯-এর লোকসভায় গোটা কেন্দ্রে বিজেপির থেকে ৪৯,২৪৮ ভোটে পিছিয়ে পড়ে তৃণমূল। তবে তৃণমূলের অন্যতম জেলা সহ-সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘রাজনীতিতে অঙ্ক উল্টোতেও বেশি সময় লাগে না। তাই অঙ্ক একেবারেই কঠিন নয় আমাদের কাছে।’’
পাশাপাশি, বিজেপির ভোট-বৃদ্ধি দেখা যায়, বিরোধীদের ভাষায় ২০১৭-র পুরভোটের সময় থেকেই (ভোটপ্রাপ্তি, ১৪ শতাংশ)। কমে, বাম-কংগ্রেসের ভোটও। অর্থাৎ ভোটপ্রাপ্তির নিরিখে পরিস্থিতি ‘ইতিবাচক’ হলেও বিজেপি সূত্রে খবর, এই আসনে খানিকটা হলেও চিন্তা রয়েছে ‘নির্দল’ প্রার্থীদের নিয়ে। লক্ষ্মণবাবুর বিরুদ্ধে ‘নির্দল’ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন বিজেপির রাজ্য মহিলা মোর্চার একদা সদস্য চন্দ্রমল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। রয়েছেন, এনডিএ-র শরিক কয়েকটি দলের প্রার্থীরাও। পাশাপাশি, ‘বেআইনি কয়লা কারবারে’ অভিযুক্ত কয়েকজন বিজেপিতে যোগ দেওয়ার প্রসঙ্গটিও ভোট-প্রচারে আনছে বিরোধীরা। যদিও লক্ষ্মণবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘নির্দল বা অন্যদের নিয়ে ভাবার কিছু নেই। আর বিজেপিতে এলেই কারও দোষ মকুব হয় না।’’
এ দিকে, শিল্পাঞ্চলের কারণে দুর্গাপুর পশ্চিমকে ‘শিল্প-কেন্দ্র’ও বলা চলে। ডিএসপি-র ইউনিয়ন স্বীকৃতির ভোটে (২০১৫-য়) সিটু, আইএনটিটিইউসি ও আইএনটিইউসি ভোট পায় যথাক্রমে ৪২.৭২, ৩৮.৫, ১৩ শতাংশ। এএসপি-র সমবায় ভোটে জেতে আইএনটিইউসি। ডিএসপি সমবায় ব্যাঙ্ক ও কর্মী সমবায় আইএনটিটিইউসি-র দখলে রয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেই ভোটে ব্যাপক সন্ত্রাসের অভিযোগ করেন বিরোধীরা। অভিযোগ মানেনি আইএনটিটিইউসি। পাশাপাশি, তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের অন্দরে বিশ্বনাথবাবু ও সংগঠনের প্রাক্তন জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের অনুগামীদের ‘বিবাদ’ সুবিদিত। যদিও, দ্বন্দ্বের কথা দুই নেতাই স্বীকার করেননি।
তবে প্রত্যেক প্রার্থীই নিজের মতো করে প্রচারে শ্রমিক-স্বার্থে কথা বলছেন। বিশ্বনাথবাবু, দেবেশবাবুরা রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের বিলগ্নিকরণ প্রসঙ্গে বিজেপিকে বিঁধছেন। অন্য দিকে, দুর্গাপুরের শিল্প-ক্ষেত্রের পুনরুজ্জীবনের ‘স্বপ্ন’ ফেরি করছেন বিজেপি প্রার্থী লক্ষ্মণবাবু। প্রচারে আসছে নাগরিক পরিষেবা, দামোদরের পলি উত্তোলন, দুর্গাপুর ব্যারাজ সংস্কারের মতো বিষয়গুলিও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy