মৈনুদ্দিন শামস।
স্থান জাতীয় সড়কের ধার। সাদা পাঞ্জাবি পায়জামা, মাথায় কালো টুপি। চেনা চেহারায় লাউড স্পিকার হাতে ধরে এলাকায় নিজের রাজনৈতিক জীবনের কথা বলে চলেছেন তিনি। জনা পঞ্চাশেক শ্রোতার
মাঝে যারা নিজেদের ভূমিপুত্র বলে ভোট চাইছেন তাঁদেরকে চিহ্নিত করার আবেদন রাখছেন। পাশাপাশি নলহাটির সার্বিক উন্নয়নে নিজে শামিল হতে চেয়ে নির্দল হিসাবে মানুষের ভালবাসা ও আর্শীবাদ চাইছেন তিনি। মাসখানেক আগেও তৃণমূল কর্মীরা তাঁর আশপাশে ঘিরে থাকতেন। তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়তেই সেই মৈনুদ্দিন শামস ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করেছেন। তৃণমূল ত্যাগ করে নিজের অস্তিত্ব প্রমাণে ভোটযুদ্ধে ভূমিপুত্র হিসেবে লড়াইয়ে শামিল হয়েছেন।
দলের অন্দরের খবর, তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় তাঁর নাম যে থাকতে পারে না সেটা ভাবতেই পারেননি নলহাটির বিদায়ী বিধায়ক মৈনুদ্দিন। দু’বারের বিধায়ক বাম আমলের খাদ্যমন্ত্রী কলিমউদ্দিন শামসের পুত্র মৈনুদ্দিন শামসকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১৬ সালে প্রার্থী করেছিলেন। ৫০ শতাংশের বেশি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত নলহাটি বিধানসভা এলাকায় প্রথমবার নলহাটি কেন্দ্র তৃণমূল জয়ী হয়েছিল। ১০ হাজারের বেশি ভোটে ফরওয়ার্ড ব্লকের দীপক চট্টোপাধ্যায়কে পরাজিত করেছিলেন তিনি। লোকসভা ভোটেও তৃণমূল জয়ী হয়েছিল। মৈনুদ্দিনের দাবি, ‘‘বিধায়ক হিসাবে সাধ্য মতো নলহাটির সার্বিক উন্নয়ন করার চেষ্টা করেছি। তবে এলাকার বালি মাফিয়া, পাথর মাফিয়া, টোল মাফিয়া সঙ্গে আপস করিনি। সেই জন্যই তৃণমূল হয়তো প্রার্থী করেনি।’’
মৈনুদ্দিনকে প্রার্থী না করা নিয়েও দলের প্রাক্তন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম মুখ খুলেছেন। সে প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘মৈনুদ্দিন শামস, ববির (ফিরহাদ হাকিম) পরিচিত। সুতরাং উনি তো চাইবেন। কিন্তু এলাকার মানুষ না চাইলে আমি কী করব?’’ মৈনুদ্দিনকে অনুব্রত ‘ভাল ছেলে’ বলে প্রশংসাও করলেও সাধারণ মানুষের সঙ্গে তিনি মিশতেন না বলেও জানিয়ে দেন অনুব্রত। জবাবে কারা এলাকার মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করেন, কীসের স্বার্থে রাজনীতি করেন, কারা এলাকায় তোলাবাজির রাজনীতি করেন সেই সবের উত্তর ভোটেই মানুষ দেবেন বলেন পাল্টা তোপ দেগেছেন মৈনুদ্দিন।
মৈনুদ্দিনের অনুগামীদের দাবি, নলহাটি বিধানসভা এলাকায় পঞ্চাশ শতাংশের বেশি সংখ্যালঘু ভোটার। গত বিধানসভা নির্বাচনে সংখ্যালঘু এলাকায় বেশি ভোট পেয়ে তিনি জয়ী হয়েছিলেন। এবারও সংখ্যালঘু ভোটে মৈনউদ্দিন শামস থাবা বসাবেন বলে তাঁরা মনে করছেন। সেক্ষেত্রে মৈনুদ্দিন তৃণমূলের জয়ের কাঁটা বলেই মনে করছেন এলাকার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা।
তৃণমূল নেতৃত্বের পাল্টা, দাবি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়দের বেশির ভাগই তৃণমূলের পক্ষেই যাবে। কারণ বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সংযুক্ত মোর্চা বা নির্দলকে ভোট দিলে সেটা তাতে বিজেপির লাভ হবে তা সবাই জানেন। সেই সঙ্গে এলাকার দীর্ঘদিনের সমাজসেবী এবং নলহাটি পুরসভার পুরপ্রধানের ভাবমূর্তির জন্য তৃণমূল প্রার্থীকে সকলেই ভোট দেবেন বলে দাবি তৃণমূল নেতাদের। রাজেন্দ্রপ্রসাদ বলেন, ‘‘আমাকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অনুব্রত মণ্ডল প্রার্থী করেছেন। সুতরাং বক্তব্য যা কিছু বলার শীর্ষ নেতৃত্ব বলবেন। আমি এলাকাবাসীর উন্নয়নের স্বার্থে তাঁদের সৈনিক হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি।’’
অন্যদিকে নলহাটি বিধানসভা এলাকার দু’বারের বিধায়ক দীপক চট্টোপাধ্যায় এ বারেও সংযুক্ত মোর্চার ফরওয়ার্ড ব্লক দলের প্রার্থী। লোকসভা ভোটে নলহাটি বিধানসভা এলাকাতে বামেদের ভোটে বেশির ভাগ অংশ বিজেপিতে চলে যাওয়ায় বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে চলে আসে। কুরুমগ্রাম, বড়লা, হরিদাসপুর, বাউটিয়া, বাণিওড়ে বিজেপি ভাল ফল করেছিল। বাম কংগ্রেস সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী দীপক চট্টোপাধ্যায় অবশ্য মনে করছেন, ‘‘লোকসভা ভোটে যে ভুল বাম সমর্থকেরা করেছিলে সেই ভুল আর তাঁরা করবেন না।’’ বাম কংগ্রেসের মিলিত ভোটের
ফলে জয়ের আশা দেখছেন এলাকার বাম কংগ্রেস কর্মীরা।’’
নলহাটি বিধানসভা এলাকা ঘুরে দেখা গিয়েছে, বিজেপি তাদের যতটা বেশি নলহাটি পুরসভা এবং নলহাটি ১ পঞ্চায়েতের কুরুমগ্রাম, বড়লা, হরিদাসপুর, বাউটিয়া, বানিওড় এই সমস্ত অঞ্চলে যেমন প্রভাব ফেলেছে কয়থা ১, কয়থা ২, কলিঠা, কুশমোড় ১ এবং কুশমোড় ২, রুদ্রনগর এই সমস্ত অঞ্চলে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। তবুও চর্তুমুখী লড়াইয়ে ভোট কাটাকাটির অঙ্কে শেষ হাসি কে হাসে সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy