সুব্রত ঠাকুর, অশোক কীর্তনিয়া এবং বিশ্বজিৎ দাস
‘পিসি-ভাইপো’ শব্দবন্ধ উল্লেখ করে যে বিজেপি উঠতে-বসতে তৃণমূলকে কটাক্ষ করে চলেছে, তারাই এ বার গাইঘাটা আসনে প্রার্থী করল সুব্রত ঠাকুরকে। যিনি বনগাঁ কেন্দ্রের সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের দাদা। পরিবারতন্ত্রের অভিযোগে এ বার বিদ্ধ পদ্মশিবিরও। মতুয়া-ভোটের মুলো ঝুলিয়ে রেখে শান্তনু দলকে ‘ব্ল্যাকমেল’ করছেন বলে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল।
২০১৫ সালে বনগাঁ লোকসভার উপ নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে দাঁড়িয়ে ভোটে হারেন সুব্রত। ফিরে যান বিদেশে নিজের কর্মজগতে। তারপর থেকে তাঁকে আর সে ভাবে ঠাকুরবাড়ির রাজনীতির পরিমণ্ডলে দেখা যায়নি। তবে বিধানসভা ভোটের আগে তাঁকে সক্রিয় হতে দেখা গিয়েছে।
লোকসভার উপ নির্বাচনের আগে সুব্রত এবং তাঁর বাবা বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তৎকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য মঞ্জুল মন্ত্রিত্বও ছাড়েন। কিছু দিন আগে সুব্রত বাড়ি ফিরে অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের কাজকর্মে মন দেন। বিয়াল্লিশ বছরের সুব্রত এখন মতুয়া মহাসঙ্ঘের মহাসঙ্ঘাধিপতি। লোকসভার উপ নির্বাচনের তুলনায় এ বারের লড়াই অনেক সহজ দাবি করে সুব্রত বলেন, ‘‘বিজেপির নেতা-কর্মীদের জন্যই এ বার লড়াই অনেকটা সহজ হয়ে গিয়েছে। কর্মীদের ভালবাসা তারই প্রমাণ দিচ্ছে।’’
দিন কয়েক বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ৩৩টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৩০টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে। বাদ ছিল বনগাঁ উত্তর, গাইঘাটা এবং বাগদা কেন্দ্রের প্রার্থীদের নাম। মঙ্গলবার ওই তিনটি কেন্দ্রের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। গাইঘাটায় সুব্রত, বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রে অশোক কীর্তনীয়া এবং বাগদা কেন্দ্রে বিশ্বজিৎ দাসের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। অশোক নিজে মতুয়া। শান্তনু-ঘনিষ্ঠ বলেও পরিচিত।
এই তিনটি কেন্দ্রে প্রার্থী কারা হবেন, তা নিয়ে সাংসদ শান্তনুর সঙ্গে বিজেপি নেতৃত্বের কম দড়ি টানাটানি হয়নি। ক’দিন আগে সাংবাদিক সম্মেলন করে শান্তনুর বাবা মঞ্জুলকৃষ্ণ দাবি করেন, বিধানসভা ভোটে বিজেপির কাছে ৩০টি আসন চেয়েছিল অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ। কিন্তু মেলেনি একটিও। বিজেপির একটি সূত্র জানাচ্ছে, প্রার্থী তালিকায় তাঁর পছন্দের যথেষ্ট মতুয়া-মুখ না থাকায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে রবিবার রাতে কলকাতায় দেখা করে ক্ষোভ জানিয়ে আসেন শান্তনু। বিজেপি সূত্রের খবর, শান্তনু চেয়েছিলেন, উত্তর ২৪ পরগনা-সহ রাজ্যের অন্যত্রও বেশ কিছু আসনে দল তাঁর পছন্দের মতুয়া প্রার্থী দিক। কিন্তু তাঁর ইচ্ছা পূরণ হয়নি। বনগাঁ উত্তর, বাগদা এবং গাইঘাটা— অন্তত এই তিনটি আসনে তাঁর পছন্দের মতুয়া প্রার্থী দেওয়ার জন্য রবিবার রাতে শাহকে ‘অনুরোধ’ করেন শান্তনু। দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, শাহ তাঁকে গাইঘাটায় প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। রাজি হননি শান্তনু।
মঙ্গলবার প্রার্থী ঘোষণার পরে শান্তনু বলেন, ‘‘মতুয়া সমাজ থেকে ৮ জনকে প্রার্থী করাতে আমরা বিজেপি নেতৃত্বকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’’ রবিবার মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর যে দাবি করেছিলেন, তা নিয়ে শান্তনু বলেন, ‘‘ওঁর (মঞ্জুলকৃষ্ণ) কাছে ভুল তথ্য ছিল। উনি যা বলেছেন সেটা ওঁর ব্যক্তিগত মতামত। আমি কিছু বলতে চাই না।’’
এ বিষয়ে প্রাক্তন সাংসদ মমতা ঠাকুর বলেন, ‘‘তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপি পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ করে। সুব্রতকে প্রার্থী করে বিজেপি পরিবারতন্ত্রের দৃষ্টান্ত তৈরি করল। মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর বলেছিলেন, ৩০টা আসন চেয়ে তাঁরা একটিও পাননি। সুব্রত প্রার্থী হওয়ায় তাঁরা সব ভুলে গেলেন। ওঁরা মতুয়াদের নিয়ে রাজনীতি করছেন।’’ তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কো-অর্ডিনেটর গোপাল শেঠ বলেন, ‘‘আদি বিজেপির নেতা-কর্মীদের বঞ্চিত করে শান্তনু তাঁর দাদাকে প্রার্থী করেছেন। শান্তনু সুব্রতরা নিজেদের আখের গোছাতে মতুয়াদের ব্যবহার করছেন। ভোটে মতুয়ারা এর জবাব দেবেন।’’ গাইঘাটার সিপিএম নেতা রমেন আঢ্যর কথায়, ‘‘ঠাকুরবাড়িতে তৃণমূল পরিবারতন্ত্র শুরু করেছিল। বিজেপির সময়ে তা আরও প্রকট হয়েছে।’’
বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের দু’বারের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসকে বাগদার প্রার্থী করা হয়েছে। যা মন থেকে মানতে পারছেন না বিশ্বজিৎ এবং তাঁর অনুগামীরা। কর্মী-সমর্থকেরা তাঁর বাড়ি গিয়ে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। বিশ্বজিৎ অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। লোকসভা ভোটের পর তিনি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন। দলের পক্ষ থেকে তাঁকে এই কেন্দ্রে প্রার্থী করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল।
বাগদা কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছে বিশ্বজিৎকে। যদিও এই কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়ার অন্যতম দাবিদার ছিলেন বাগদার দু’বারের বিধায়ক দুলাল বর। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে তিনি কংগ্রেসের টিকিটে দাঁড়িয়ে জয়ী হয়েছিলেন। ২০০৬ সালে রাজ্যে তৃণমূলের ভরাডুবির মধ্যে দুলাল তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়িয়ে জয়ী হন। গত লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন। দুলালকে প্রার্থী করা হতে পারে। এই সম্ভাবনা থেকে স্থানীয় বিজেপির একাংশ বিরোধিতা শুরু করেছিল।
সোশ্যাল মিডিয়ায় দুলালের বিরোধিতা হতে থাকে। বিজেপির একটি সূত্র জানাচ্ছে, সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে বিশ্বজিৎ ও দুলালের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে সাংসদের সমর্থন তাঁরা পাননি।
টিকিট না পেয়ে কী বলছেন দুলাল। তাঁর কথায়, ‘‘নিশ্চয়ই আমার কোনও অন্যায়, ত্রুটি-বিচ্যূতি ছিল। তাই দল প্রার্থী করেনি। তবে দল আমাকে যে দায়িত্ব দেবে, তা পালন করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy