গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
লালকার্ড দেখে মাঠের বাইরে বেরিয়ে গিয়েছিলেন কেউ। সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন ঘটতে লেগেছে প্রায় এক দশক। ভোটের ময়দানে কারও আবার এ বছরই হাতেখড়ি। লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন থেকে একেবারে বাস্তবের মাটিতে। গা বাঁচিয়ে চলার কোনও উপায় নেই। মরণ-বাঁচন লড়াইয়ে একেবারে সামনের সারিতে তাঁরা। শনিবার নীলবাড়ির লড়াইয়ে প্রথম দফায় ভোটগ্রহণ। তাতে ৫ জেলার ৩০টি আসনে সব মিলিয়ে ১৯১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ বারের নির্বাচনকে তাঁদের ভাগ্য নির্ধারণের পরীক্ষা বললেও অত্যুক্তি হয় না। সেই তালিকায় রয়েছেন সিপিএমের সুশান্ত ঘোষ, তৃণমূলের জুন মালিয়া, বীরবাহা হাঁসদা, শান্তিরাম মাহাতো, অখিল গিরি, সিপিএমের দেবলীনা হেমব্রম, কিংবা কংগ্রেসের নেপাল মাহাতো-র মতো ব্যক্তিত্ব এবং তাঁদের প্রতিপক্ষরা।
বেনাচাপাড়া কঙ্কালকাণ্ডে নাম জড়ানোর পর নিজের দলেই ‘ব্রাত্য’ হয়ে গিয়েছিলেন সুশান্ত ঘোষ। হাজতবাস, ‘অজ্ঞাতবাস’ কাটিয়ে সম্প্রতি ফের দলেও ফিরেছেন। পা রেখেছেন বেনাচাপাড়াতেও। লাল পতাকা কাঁধে নিয়েই এ বার নীলবাড়ির লড়াইয়ে শামিল হচ্ছেন সুশান্ত। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শালবনি থেকে। সেখানে তৃণমূলের শ্রীকান্ত মাহাতো এবং বিজেপি-র রাজীব কুণ্ডুর সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই তাঁর। তাঁকে প্রার্থী করা নিয়ে বাম শিবিরের একটি অংশে চাপা অস্বস্তি ছিলই। তাই শালবনিতে শুধু দলের মাস্তুল সামলানোই নয়, নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের লড়াই লড়ছেন সুশান্ত।
পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ সুশান্ত যদি শালবনি কেন্দ্রে নজরে থাকেন, তা হলে মেদিনীপুরে চোখ থাকতে চলেছে তৃণমূলের নতুন প্রার্থী জুন মালিয়ার দিকে। রাজ্য মহিলা কমিশনের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও, খাতায় কলমে রাজনীতির সঙ্গে পরিচয় ২০২১ সালেই। তাতে যদিও মার্কস কাটা যায়নি অভিনেত্রী জুন মালিয়ার। বরং মহিলা কমিশনের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত থাকায় নারীবাদী ভাবমূর্তির তৈরি হয়েছে তাঁর। বর্তমানে দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এখানেই একটা সাযুজ্য তৈরি হয়েছে। কোনওরকম রাখঢাক না করেই জুন জানিয়েছেন, মমতাকে তৃতীয় বার ক্ষমতায় দেখতেই রাজনীতিতে পদার্পণ তাঁর। তাঁকেও নিরাশ করেননি মমতা। বিদায়ী বিধায়ক মৃগেন্দ্রনাথ মাইতিকে সরিয়ে মেদিনীপুরের ভার জুনের হাতে তুলে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। সেই থেকে গ্ল্যামারের তোয়াক্কা না করে রোদে-তাপে ঘুরেই প্রচার সারছেন জুন। দলনেত্রী নিজেও তাঁকে নিয়ে প্রচারে গিয়েছেন। বিজেপি-র শমিতকুমার দাস এবং সিপিআইয়ের তরুণকুমার ঘোষের সঙ্গে সেখানে লড়াই জুনের।
তেমনই আরও এক জন ঝাড়গ্রামের প্রার্থী বীরবাহা হাঁসদা। সাংসারিক আলোচনা নয়, বরং ছোট থেকে রাজনীতি নিয়েই বাবা-মা-কে আলোচনা করতে দেখে বড় হয়েছেন বীরবাহা। তাঁর বাবা নরেন হাঁসদা ঝাড়খণ্ড পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। মা চুনীবালা হাঁসদাও ছিলেন রাজনীতিক। দু’জনেই রাজ্য বিধানসভার সদস্য ছিলেন। সেই বীরবাহাকে এত দিন সাঁওতালি ছবির জনপ্রিয় নায়িকা হিসেবেই চিনতেন সকলে। এ বারে তাঁকে ঝাড়গ্রামের প্রার্থী করেছে তৃণমূল। তবে ভোটের ময়দানে তেমন অভিজ্ঞতা না থাকলেও, রাজনীতি যে তাঁর রক্তে বইছে, তা ইতিমধ্যেই বুঝিয়ে দিয়েছেন বীরবাহা। তাঁর বাধাতেই সম্প্রতি ঝাড়গ্রাম থেকে সভা না করে ফিরে যেতে হয় শুভেন্দু অধিকারীকে। জেলা বিজেপি-র সভাপতি সুখময় শতপথির হয়ে সেখানে প্রচারে গিয়েছিলেন শুভেন্দু।
বীরবাহা ছাড়াও ঝাড়গ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে সুখময়ের সঙ্গে সরাসরি লড়াইয়ে সিপিএম প্রার্থী মধুজা সেনরায়। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে ঝাড়গ্রামে বিজেপি-র জয়ের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল সুখময়ের। তবে সম্প্রতি ভোট পেতে টাকার টোপ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। ছাত্রাবস্থা থেকেই বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত মধুজা। ২০১৭ সালে আইন অমান্য কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেওয়ায় ধর্মতলা থেকে গ্রেফতার হন তিনি। সেই সময় জেলে বিবস্ত্র করে তাঁর তল্লাশি করা হয় বলে অভিযোগ করেন মধুজা। বিষয়টি নিয়ে মহিলা কমিশনে অভিযোগও জানিয়েছিলেন তিনি।
এক সময় বাম দুর্গ বলে পরিচিত ছিল পুরুলিয়ার বলরামপুর। ২০১১ সালে সেখানে বামরাজত্বের প্রথম ছন্দপতন ঘটে তৃণমূলের শান্তিরাম মাহাতোর হাত ধরে। ২০১৬ সালেও নিজের আসন ধরে রাখতে সক্ষম হন তিনি। এই মুহূর্তে রাজ্যের দু’-দু’টি দফতরের দায়িত্ব সামলান তিনি, পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন এবং স্বনির্ভর রোজগার তৈরির বিভাগ। তৃণমূল নেত্রীর অত্যন্ত ‘বিশ্বস্ত’ বলেই পরিচিত শান্তিরাম। সম্প্রতি শান্তিরামের হয়ে মমতা নিজে বলরামপুরে সভা করে এসেছেন। এ বারে বিজেপি-র বাণেশ্বর মাহাতো এবং কংগ্রেসের দীপক কুমারের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই শান্তিরামের।
শান্তিরামের মতো তৃণমূল নেত্রীর আরও এক ‘বিশ্বস্ত সৈনিক’ অখিল গিরি। শুভেন্দু অধিকারী পদ্মশিবিরে যোগ দেওয়ার পর, পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূলকে ধরে রাখার দায় কার্যত তাঁর একার কাঁধেই বর্তেছিল। জানিয়েছিলেন, শুভেন্দুর জন্য এত দিন দলের যে কর্মীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন, তাঁরাই এখন সক্রিয় ভাবে দলের কাজে যোগ দিচ্ছেন। এ বারও রামনগর থেকেই ভোটে লড়ছেন অখিল। এর আগে তিন তিন বার তিনি ওই কেন্দ্র থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। রামনগরে এ বারে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি-র স্বদেশরঞ্জন নায়েক এবং সিপিএমের সব্যসাচী জানা।
রানিবাঁধে সিপিএমের ভরসা দেবলীনা হেমব্রম। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মন্ত্রিসভায় অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণমন্ত্রী ছিলেন দেবলীনা। তিনবারের বিধায়ক তিনি। ব্রিগেডে এ বারেও তাঁর বক্তৃতা ফুল মার্কস পেয়েছে শ্রোতাদের কাছ থেকে। এ বার ফের তাঁকে রানিবাঁধেই প্রার্থী করেছে সিপিএম। বারবার ব্রিগেড মাতিয়ে দেওয়া দেবলীনা হেমব্রমকে ফের রানিবাঁধে প্রার্থী করেছে সিপিএম। এর আগে, ১৯৯৬, ২০০৬ এবং ২০১১ সালে ওই কেন্দ্র থেকেই তিন বার বিধায়ক নির্বাচিত হন তিনি। এ বার সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী হিসেবে সেখানে তৃণমূলের জ্যোৎস্না মান্ডি এবং বিজেপি-র ক্ষুদিরাম টুডুর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি।
বাঘমুণ্ডিতে কংগ্রেসের মুখ নেপাল মাহাতো। তাঁর দৌলতেই এখনও পর্যন্ত গেরুয়া ঝড় ছুঁয়ে যেতে পারেনি বাঘমুণ্ডিকে। ২০০১ সাল থেকে কংগ্রেসের হয়ে ওই কেন্দ্র আগলে রেখেছেন নেপাল। জোটের হয়ে এ বারও সেখান থেকেই লড়ছেন তিনি। যদিও প্রথম দিকে জোট নিয়ে তাঁর আপত্তির কথা প্রকাশ্যেই জানিয়েছিলেন। কিন্তু দলের স্বার্থে সেই আপত্তি থেকে সরে আসেন তিনি। পাশাপাশি শিক্ষকতাও চালিয়ে যাচ্ছেন। এ বার বাঘমুণ্ডিতে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলের সুশান্ত মাহাতো এবং আজসু-র আশুতোষ মাহাতো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy