শিশির অধিকারী।
তিনি এখনও পর্যন্ত মনে করছেন না তার প্রয়োজন হবে। কিন্তু তেমন দরকার বুঝলে নন্দীগ্রামের বিজেপি প্রার্থীর হয়ে প্রচারে নামবেন তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ শিশির অধিকারী। শনিবার সন্ধ্যায় নন্দীগ্রাম আসনে শুভেন্দু অধিকারীর নাম বিজেপি প্রার্থী হিসেবে ঘোষিত হওয়ার অব্যবহিত পরে কাঁথির ‘শান্তিকুঞ্জ’ থেকে শিশির তেমনই জানিয়েছেন আনন্দবাজার ডিজিটালকে। পাশাপাশিই বলেছেন, ‘‘শুভেন্দু নন্দীগ্রামে বিপুল ভোটে জিতবে। আমার প্রচারে নামার কোনও দরকার বলে এখনও পর্যন্ত মনে হচ্ছে না। কিন্তু যদি কোনও দরকার হয়, তা হলে আমি অবশ্যই প্রচারে নামব।’’
কিন্তু তিনি তো এখনও তৃণমূলের সাংসদ! তাঁর দলের হয়ে নন্দীগ্রামে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। তা সত্ত্বেও তিনি কী করে বিরোধী দলের হয়ে প্রচার করবেন? শিশিরের জবাব, ‘‘উনি (মমতা) এখানে লড়তে এসে মস্ত ভুল করছেন। ভোটের ফল ওঁর পক্ষে যাবে না। আমি আবার বলছি, শুভেন্দু বিপুল ভোটে জিতবে।’’ অশীতিপর রাজনীতিক সম্প্রতি চোখের ছানি অস্ত্রোপচার করিয়েছেন। যে কারণে তিনি এতদিন বিশেষ বাইরে বেরোচ্ছিলেন না। একমাত্র নাতির আব্দারে এলাকায় একটি সরস্বতী পুজোর উদ্বোধনে গিয়েছিলেন। কিন্তু এখন তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। নিজেই বলছেন, ‘‘আমার চোখ এখন একেবারে ভাল হয়ে গিয়েছে। নিয়মিত স্নান-টানও করছি। ডাক্তারও বলেছে আমি বেরোতে পারি। ফলে আমার তো প্রচারে যেতে কোনও অসুবিধা নেই। শুভেন্দুর যদি বাবার সাহায্য দরকার হয়, তা হলে বাবা কোনও দ্বিধা করবে না। এটুকু বলতে পারি।’’
তবে একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘‘প্রচারে যাবই বলে এখনও মনস্থির (মাইন্ড মেক আপ) করিনি। ছেলেরাও বলেনি যে, আমাকে প্রচারে যেতে হবে। এখনও পর্যন্ত আমি ভিতর থেকে যা খবরাখবর পাচ্ছি, তাতে মনে হচ্ছে না, শুভেন্দুর জিততে কোনও অসুবিধা হবে। বরং শুনছি ও বিপুল ভোটেই জিতবে। কিন্তু যদি ছেলেরা বলে আমায় দরকার, আমি এক মিনিটও দেরি করব না!’’ শুভেন্দু বিজেপি-তে যওগ দেওয়ার পর শিশিরের অন্য পুত্র সৌম্যেন্দুও বিজেপি-তে যোগ দেন। আরেক পুত্র দিব্যেন্দু এখনও তৃণমূলে থাকলেও দলের সঙ্গে দিন দিন দূরত্ব বাড়ছে তাঁর। সখ্য এবং নৈকট্য বাড়ছে বিজেপি-র সঙ্গে। বস্তুত, গত মাসে হলদিয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারি সভামঞ্চেও আমন্ত্রিত ছিলেন দিব্যেন্দু। এলাকার সাংসদ হিসাবে তিনি ওই মঞ্চে উপস্থিতও ছিলেন। দিব্যেন্দুকে নিয়েও রাজ্য রাজনীতিতে ব্যাপক জল্পনা তৈরি হয়েছে। তাঁর সাম্প্রতিক রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিয়ে তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্ব একেবারেই তুষ্ট নন। দলের অন্দরে এমনও জল্পনা রয়েছে যে, শিশির-দিব্যেন্দু দু’জনেই বিজেপি-তে যোগ দেবেন। শিশির অবশ্য শনিবার সে জল্পনা উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি এখনও তৃণমূলেই আছি। যে ভাষায় আমায় এবং আমার পরিবারকে মাইক বেঁধে অপমান করা হয়েছে, তাতে খারাপ লেগেছে। কিন্তু আমি উল্টে কোনও কটূবাক্য বলিনি। তবে ছেলের পাশে বাবাকে তো দাঁড়াতেই হবে! সেটা নিয়ে তো কোনও সংশয় কারও থাকা উচিত নয়।’’
তবে শিশিরের সঙ্গেও ক্রমশ দূরত্ব বাড়াচ্ছে তৃণমূল। তাঁকে ইতিমধ্যেই ছেঁটে ফেলা হয়েছে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে। ওই সরকারি পদ ছাড়াও শিশিরকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তৃণমূলের জেলা সভাপতি পদ থেকেও। শিশিরের কথায়, ‘‘২০০৬ সাল থেকে আমি এই দলটাকে আগলে আগলে রেখেছি। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় আমাদের পরিবারের ভূমিকা সকলে জানে। এখন আমায় আর আমার পরিবারকে অপমান করলে মেদিনীপুরের মানুষ কি তার কোনও জবাব দেবেন না? উনি (মমতা) তো বাইরে থেকে এখানে লড়তে আসছেন। শুভেন্দু তো মেদিনীপুরের ভূমিপুত্র। মেদিনীপুরের মানুষ কি ভূমিপুত্রের পাশে দাঁড়াবেন না? তাহলে তো বলতে হয়, মেদিনীপুরের মানুষের আত্মসম্মান বোধ রসাতলে গিয়েছে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy