—প্রতীকী ছবি।
বাংলার ভোট-পরবর্তী হিংসাকে কেন্দ্র করে সমাজমাধ্যমে ভুয়ো খবর ছড়ানোর অভিযোগ উঠল। রাজ্য পুলিশও টুইটারে ভুয়ো খবর চিহ্নিত করে সতর্কবার্তা দিয়েছে। তৃণমূল শিবিরের দাবি, ভোটে হেরে গিয়ে বিজেপির আইটি সেল বাংলার হিংসা নিয়ে মিথ্যা খবর ছড়াচ্ছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে হিংসার অভিযোগ তুললেও বাম শিবিরও ভুয়ো খবর ছড়ানোর জন্য বিজেপিকে আক্রমণ করেছে। বিজেপির তরফে পাল্টা #বেঙ্গলবার্নিং বলে হ্যাশট্যাগে টুইটারে দিনভর তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়। এই পরিস্থিতিতে সমাজমাধ্যমে আসা তথ্য নিয়ে সতর্ক থাকা বার্তা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।
ভোটের ফল বেরোনোর পর থেকেই রাজনৈতিক হিংসার জেরে রাজ্যে একাধিক প্রাণহানি ঘটেছে। তার মধ্যে একাধিক পক্ষের কর্মীরা রয়েছেন। মঙ্গলবার টুইটারে বিজেপির বহু কর্মী সমর্থকদের একটি টুইট ভাইরাল হয় যাতে অভিযোগ তোলা হয়েছে, বীরভূমে বিজেপির দুই মহিলা এজেন্টকে ধর্ষণ করা হয়েছে, একাধিক মহিলাকে নিগ্রহ করা হয়েছে। রাজ্য পুলিশের তরফে টুইটারে জানিয়ে দেওয়া হয় ওই টুইটটি ভুয়ো। ওড়িশায় এ বছরের জানুয়ারিতে পুলিশের গাড়িতে হামলার একটি ভিডিয়োকেও বাংলার ভোট-পরবর্তী হিংসার ছবি বলে প্রচার করতে দেখা গিয়েছে বিজেপি পন্থী অনেককে। জ্বলন্ত একটি বাড়ির ছবিকেও সিপিএমের দলীয় দফতর পোড়ানোর ছবি বলে প্রচার করার অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। অনেকে প্রথমে তা শেয়ার করলেও বাম কর্মী-সমর্থকেরা পরে তা নিয়ে সতর্কবার্তা দেন।
ভুয়ো খবর ধরার বিশেষজ্ঞ প্রতীক সিনহা টুইটারে দেখিয়েছেন, গত বছরের অগস্টে বাংলাদেশের গোলমালের ছবিকেও এ রাজ্যের বলে চালানো হয়েছে। ২০২০-র সেপ্টেম্বরের অন্য কোনও জায়গার অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে উল্লাসের একটি ভিডিয়োয় 'খেলা হবে' গান যোগ করে তৃণমূলের উল্লাস বলে ছড়ানো হয়েছে, যদিও ওই গান তখন তৈরিই হয়নি।
যে পদ্ধতিতে হিংসার খবর ছড়ানো হয়েছে, তাতে সমাজমাধ্যমে ভুয়ো খবর ছড়ানোর চেনা কৌশলই দেখছেন ভুয়ো খবর ধরার বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, যখন পরিস্থিতি অশান্ত থাকে, তখন সেই সংক্রাম্ত কোনও খবর পেলে অনেকের মধ্যে যাচাই করার আগেই সেই খবর অন্যকে জানানোর প্রবণতা দেখা যায়। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেত্রী, জামুড়িয়ার সিপিএম প্রার্থী ঐশী ঘোষ ফেসবুকে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের এ বিষয়ে সতর্ক করেন। তিনি লেখেন, ‘‘সাম্প্রদায়িক বিভাজনের উদ্দেশ্যে বিজেপি-আরএসএস প্রচুর মিথ্যে খবর ছড়াচ্ছে। কোনও খবর, ছবি ছড়ানোর আগে দয়া করে যাচাই করুন।’’ সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের পলিটবুরো সদস্য কবিতা কৃষ্ণনও টুইটারে লেখেন, ‘‘বিজেপি, তৃণমূল, সিপিএম সব দলের কর্মীরাই আক্রান্ত হচ্ছেন। বিজেপি একে একটা সাম্প্রদায়িক রং দিতে চাইছে ও ভুয়ো, উস্কানিমূলক ছবি ছড়াচ্ছে।’’
ভুয়ো খবর ছড়ানো বন্ধ করতে সতর্ক থাকার ডাক দেখা গিয়েছে ফেসবুকের বহু গ্রুপে, টুইটারে। সমাজমাধ্যমে অনেকে অভিযোগ তুলেছেন, বাংলার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে দেশজুড়ে অভিযোগ তুলে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির চেষ্টা করছে বিজেপি। তাঁদের অভিযোগ, টুইটারে এ জন্য বিজেপি আইটি সেলের তরফে #প্রেসিডেন্ডরুলইনবেঙ্গল ট্রেন্ডিং করানো হয়েছে। এ দিনই টুইটারের তরফে বিজেপিপন্থী বলে পরিচিত অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউতের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়। তিনিও টানা বাংলার পরিস্থিতি নিয়ে অভিযোগ তুলছিলেন টুইটারে। তৃণমূলের সাংসদ মহুয়া মৈত্রের অভিযোগ, ‘‘বিজেপির মিথ্যে ছড়ানোর বাহিনী দেশজুড়ে প্রচার করছে বাংলা জ্বলছে। মিথ্যা বন্ধ কর। এ জন্য তোমরা বাংলা হারিয়েছো, দেশও হারাবে।’’
এই পরিস্থিতিতে সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীদের আরও সতর্ক হতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। সমাজমাধ্যম বিশেষজ্ঞ, ঢেঙ্কানলের ভারতীয় জনসঞ্চার সংস্থানের শিক্ষক সম্বিত পাল বলেন, ‘‘আমরা নিজেরা যে মতাদর্শে পছন্দ করি, সেই অনুযায়ী তথ্যও বিশ্বাস করতে চাই। কিন্তু সমাজমাধ্যমে কোনও কিছুই কেবল দেখেই বিশ্বাস করা উচিত নয়, যে নেতাই সেটা প্রচার করুন না কেন। কারণ সকলেরই নিজস্ব উদ্দেশ্য থাকতে পারে।’’ ভুয়ো খবর ধরার বিশেষজ্ঞ স্বস্তি চট্টোপাধ্যায়ের পরামর্শ, ‘‘কোনও ছবি পেলে সেটা গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ অপশনে গিয়ে মিলিয়ে দেখা যায়। নিজে তা না পারলে ভুয়ো খবর ধরার বিভিন্ন সাইটের সঙ্গে যোগাযোগ করে তা যাচাই করে নেওয়া উচিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy