রাজনৈতিক সভায় অনেকেই পড়ছেন না মাস্ক। ফাইল চিত্র।
কোভিড-বিধি মেনে আসন্ন বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে, ভোটের ময়দানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী-প্রার্থীদের পা পড়তেই সে বিধি শিকেয় উঠেছে প্রায়। নির্বাচনের আর পাঁচটা নিয়ম-বিধির সঙ্গে কোভিড-সচেতনতা কার্যকর করতে তাই বাড়তি সতর্কতা নিতে হচ্ছে কমিশন-কর্তাদের। ভোটের পাঁচমিশেলি ঝক্কির সঙ্গে ক্রমশ চোখ রাঙানো করোনার দ্বিতীয় সংক্রমণের ঢেউ সামাল দেওয়াও এখন কমিশনের চ্যালেঞ্জ।
বিহার বিধানসভা নির্বাচন হয়েছিল কোভিড-আবহে। সেখানেও ভোটের আগে স্বরাষ্ট্র এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রক কোভিড-বিধি স্থির করে দিয়েছিল। তা মেনেই ভোট হয়েছিল বিহারে। এ রাজ্যের ক্ষেত্রেও একই নির্দেশিকা কার্যকর রয়েছে বটে, কিন্তু তা কতটা সামাল দেওয়া যাবে, কিংবা তাকে মান্যতাই বা দেওয়া হচ্ছে কতটা— প্রশ্ন উঠে গিয়েছে তা নিয়েই।
মন্ত্রকের স্থির করে দেওয়া এই বিধি দু’ভাগে বিভক্ত। সে ক্ষেত্রে প্রথম দায়, অর্থাৎ বিধি লাগু করার দায় যদি হয় প্রশাসনিক কর্তাদের তা হলে অবশ্যই দ্বিতীয় ক্ষেত্রে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলিরও সেই বিধি মেনে চলার কিছু নির্দিষ্ট দায় রয়েছে। বিধি কার্যকর করার প্রশ্নে, কমিশনের চেষ্টার বিরাম নেই ঠিকই, তবে রাজনৈতিক দলগুলির ক্ষেত্রে তা কতটা মেনে চলা হচ্ছে তা নিয়ে কমিশনের অন্দরে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট বিধি অনুযায়ী, বাড়ি বাড়ি প্রচারের ক্ষেত্রে প্রার্থীরা পাঁচ জন দলীয় কর্মী নিয়ে (নিরাপত্তাকর্মী ছাড়া) ঘোরার অনুমতি পাচ্ছেন। রোড শোর ক্ষেত্রে প্রতি পাঁচটি গাড়ির পরে অন্তত আধ-ঘণ্টার ব্যবধান রাখা বাঞ্ছনীয়। নির্বাচনী সভার ক্ষেত্রেও কোভিড-বিধি কঠোর করতে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। জেলা নির্বাচনী আধিকারিকের নির্দিষ্ট করে দেওয়া জায়গাতেই যে সভা করতে হবে— স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে তা-ও। সেই সভাস্থলে প্রবেশ ও প্রস্থানের পথও যে সম্পূর্ণ আলাদা হবে, ওই নির্দেশে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। জমায়েতে দূরত্ববিধি যাতে মেনে চলা হয় সে জন্য প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের সভার জন্য নির্দিষ্ট জায়গাও চিহ্নিত করে দেওয়া জরুরি বলে নির্দেশে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। জেলার নোডাল অফিসারকে (স্বাস্থ্য) এই ব্যবস্থাপনার দাযিত্বে থাকবেন বলে নির্দেশিকায় বলা হয়েছে। জমায়েতের নিয়মবিধি যথাযথ মেনে চলা হচ্ছে কিনা তা দেখভালের দায় জেলাশাসক এবং জেলা পুলিশ সুপারের। এই ধরনের সভাগুলিতে কোভিড-বিধি মানা হচ্ছে কি না, তা দেখভালের জন্য পৃথক অফিসার নিয়োগ করার কথাও ওই নির্দেশে বলা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলিকে মাস্ক পড়া, হাত-শুদ্ধির ব্যবহার এবং শারীরিক তাপমাত্রা মাপার পদ্ধতি মেনে চলতে হবে। এই নির্দেশ কার্যকর করা না গেলে তার দায় সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের। সে ক্ষেত্রে বিপর্যয় মোকাবিলা আইন-সহ একাধিক ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হতে পারে বলে কমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে।
তবে, খাতায় কলমে এমন বিধির কথা উল্লেখ থাকলেও ভোট-রাজনীতির ময়দানে রাজনৈতিক সভায় তা মেনে চলার ব্যাপারে কোনও হেলদোল চোখে পড়েনি। বৃহস্পতিবার বিশেষ পর্যবেক্ষকেরা কমিশনের কাছে এ ব্যাপারে সরব হয়েছিলেন বলে কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে। ওই দিন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন বিশেষ পর্যবেক্ষক অজয় নায়েক এবং বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে। সূত্রের দাবি, স্বরাষ্ট্র এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রকের স্থির করে দেওয়া কোভিড-বিধি কঠোর ভাবে মানতে অফিসারদের সতর্ক করে দিয়েছেন তাঁরা। প্রচার সভার অনুমতি দেওয়ার আগে কোভিড-বিধি মেনে চলা বাধ্যতামূলক করার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। অনুমতি পাওয়ার পরে সেই বিধি মানা হচ্ছে কি না, তা-ও নজরে রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনকে। এ নির্দেশ যে শুধু দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন নয়, রাজ্যের দিকেই আঙুল তোলা, তা বলা বাহুল্য। সংশ্লিষ্ট মহল এও মনে করছে, নিরপেক্ষতার প্রশ্নে কমিশনের কড়াকড়ির মতো এ বার কোভিড-বিধি ভাঙার কারণেও শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে আধিকারিকদের, ইঙ্গিত এমনই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy