রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত। ফাইল চিত্র।
সংবিধানের নিয়ম ভেঙে রাজ্যসভার ‘মনোনীত’ সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত বিজেপি-র প্রার্থী হয়ে ভোট লড়তে নেমে ‘ভুল’ করেছেন বলে আগেভাগে টুইট করে তাঁকে কি সতর্কই করে দিলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র? শাসক তৃণমূলের অন্দরেই এখন সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
কারণ প্রথমত, বিজেপি-র প্রার্থী হিসেবে স্বপনের নামই ঘোষিত হয়েছে মাত্র। তিনি এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেননি। দ্বিতীয়ত, বিজেপি-র প্রার্থী হিসেবে সরকারি ভাবে মনোনয়ন জমা না দেওয়া পর্যন্ত স্বপন কোনও আইন ভাঙেননি। তৃতীয়ত, মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে স্বপন রাজ্যসভার সাংসদের পদ থেকে ইস্তফা দিলে তাঁর সাংসদপদ বাতিল হওয়ারও প্রশ্ন থাকে না।
যে সূত্রে তৃণমূলের অন্দরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে যে, অযথা তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে মহুয়া কি আদতে স্বপনের উপকারই করে বসলেন! দলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, ‘’সৌগত রায় হলে কখনও এই ভুলটা করতেন না। তিনি আগে স্বপনকে সরকারি ভাবে মনোনয়ন পেশ করতে দিতেন। তার পরে যা পদক্ষেপ করার করতেন।’’ ওই নেতার আরও বক্তব্য, ‘’ঠিক এই কারণেই মমতা’দি কঠিন সময়ে সৌগত’দাকে পরিস্থিতি সামলাতে ময়দানে নামান। যেমন নামিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী পর্বে।’’
নীলবাড়ির লড়াইয়ে রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তকে তারকেশ্বর আসনে দলীয় প্রার্থী করেছে বিজেপি। রবিবার ওই প্রার্থিতালিকা ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই স্বপনের সাংসদপদ বাতিলের দাবি তুললেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া। নেটমাধ্যমে মহুয়া দাবি করেন, সংবিধানের দশম তফসিল অনুযায়ী স্বপন ভোটে দাঁড়াতে পারেন না। কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যসভার কোনও ‘মনোনীত সদস্য’ সাংসদ হিসেবে শপথ নেওয়ার ৬ মাস পর কোনও রাজনৈতিক দলে যোগ দিলে তাঁর সদস্যপদ বাতিল হয়ে যায়।
সোমবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ মহুয়া একটি টুইট করেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘বাংলার নির্বাচনে স্বপন দাশগুপ্ত বিজেপি প্রার্থী। সংবিধানের দশম তফসিলে বলা রয়েছে, রাজ্যসভার কোনও মনোনীত সদস্য শপথগ্রহণ করার ৬ মাস পর যদি কোনও রাজনৈতিক দলে যোগ দেন, তাহলে তাঁর সদস্যপদ বাতিল হয়ে যায়। স্বপন শপথ নিয়েছিলেন ২০১৬-র এপ্রিলে। এখনও কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন। বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার জন্য এখনই তাঁর সদস্যপদ বাতিল করতে হবে’।
এ বিষয়ে আনন্দবাজার ডিজিটালের তরফে স্বপনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘‘এখন ভোটের কাজে ব্যস্ত রয়েছি। মহুয়া কী লিখেছেন জানা নেই। এখন উত্তর দেওয়ার সময় নেই। যা বলার পরে বলব।’’
সংবিধানের দশম তফসিলে কী বলা হয়েছে? সংবিধান বিশেষজ্ঞ বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওই তফসিলে বলা হয়েছে, শপথ নেওয়ার ছ’মাসের মধ্যে কোনও মনোনীত সদস্য রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে পারেন। কিন্তু শপথগ্রহণের ছ’মাস পেরনোর পর তিনি যদি কোনও রাজনৈতিক দলে যোগ দেন, সে ক্ষেত্রে তাঁর সাংসদ পদটি বাতিল হয়ে যাবে।’’ একই সঙ্গে বিশ্বনাথ জানান, যদি স্বপন ওই সময়সীমার মধ্যেই বিজেপি-তে যোগ দিয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রে তাঁর সদস্যপদ বাতিল হবে না। কিন্তু তা যদি না হয়, সে ক্ষেত্রে মহুয়া ঠিকই বলছেন।
মহুয়া ঠিক বলেছেন। কিন্তু সময়ের আগে ঠিক বলে পরোক্ষে প্রতিপক্ষের সুবিধা করে দিয়েছেন! বস্তুত, শাসক শিবিরের নেতাদের একাংশ মনে করছেন, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে খানিকটা অবিমৃশ্যতাই করে ফেলেছেন মহুয়া। তাঁদের অনুমান, স্বপন সম্ভবত রাজ্যসভার সাংসদপদে ইস্তফা দিয়েই মনোনয়ন জমা দেবেন। যদি তা না-ও দিতেন, এই ঘটনার পর তো দেওয়াই স্বাভাবিক। অথবা মনোনীত সাংসদ হওয়ার ছ’মাসের মধ্যে মোবাইলে ‘মিসড কল’ দিয়ে তিনি বিজেপি-র সদস্য হয়ে গিয়েছিলেন, এমনও দেখানো হতে পারে।
মোদ্দা কথায়, তৃণমূলের নেতাদের একাংশ মনে করছেন, তাড়াহুড়ো করে আগেভাগেই গুলি চালিয়ে বসেছেন নবীন সাংসদ! ‘শিকার’ সেই শব্দেই সাবধান হয়ে গিয়েছে।
রাতে মহুয়া আবার টুইট করেন, সেখানে তিনি লেখেন, ‘১. দাশগুপ্ত নির্বাচনে লড়তে পারেন— রাজ্যসভার জন্য তাঁর মনোনয়ন বাতিল হবে না। ২. কিন্তু যখনই তিনি বাংলার ভোটে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেবেন, তখনই রাজ্যসভার পদটি হারাবেন। হয় এখনই রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে পদত্যাগ করুন অথবা সাংসদ পদ বাতিল হবে। নিরাপদ কোনও জায়গা নেই’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy