শিলিগুড়ির প্রাক্তন বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য। ফাইল চিত্র।
রাজ্যের বিধানসভা ভোটে বামশিবিরের ‘শূন্যতা’ একের পর এক বিদ্রোহের জন্ম দিচ্ছে। সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য, কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের পর, এ বার শৃঙ্খলার আগল ভেঙে দলের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন শিলিগুড়ির প্রাক্তন বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য। আব্বাস সিদ্দিকির ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)-এর সঙ্গে জোটকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন অশোক। ঘটনাচক্রে তন্ময়, কান্তি এবং অশোক— এই তিন বাম নেতাই হেরেছেন এ বার। এর মধ্যে কান্তি অবশ্য রায়দিঘি কেন্দ্রে হারের হ্যাটট্রিক করেছেন।
২ মে বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার দিন থেকেই দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে একের পর এক ঢেউ আছড়ে পড়ছে আলিমুদ্দিনের দেওয়ালে। গত রবিবার বেলা গড়াতেই স্পষ্ট হয়ে যায়, সাড়ে তিন দশক ধরে ক্ষমতার অলিন্দে ঘোরাফেরা করা বামেদের ঝুলি এ বারের ভোটে শূন্য। এ নিয়ে রবিবারই ক্ষুব্ধ তন্ময় তোপ দাগেন দলীয় নেতৃত্বের উদ্দেশে। উত্তর দমদমের প্রাক্তন বিধায়কের পর বিদ্রোহের ব্যাটন তুলে নেন রায়দিঘির কান্তি। তিনিও বিঁধেছেন দলীয় নেতৃত্বকে। দক্ষিণবঙ্গ থেকে ওঠা একের পর এক ঢেউয়ের ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই এ বার তৃতীয় তরঙ্গ উত্তরবঙ্গ থেকে। আইএসএফ-র সঙ্গে জোট প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার অশোকের ধারালো মন্তব্য, ‘‘আমাদের জাত-কূল দুটোই গিয়েছে। কেউ কেউ বলছেন সিদ্দিকির সঙ্গে জোটের জেরে হিন্দু ভোট সরে গেছে বামেদের থেকে। শিলিগুড়িতে তা প্রযোজ্য হতে পারে। কিন্তু পাশের চোপড়ায় সংখ্যালঘু ভোটও তো আমরা পাইনি। সবটাই তৃণমূল নিয়ে গিয়েছে। এ সবের চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে।’’
বৃহস্পতিবার অভিমানের সুরে অশোক জানিয়েছেন, তিনি আর নির্বাচনে লড়ছেন না। তা জানিয়ে দিয়েছেন দলকেও। তাঁর কথায়, ‘‘আমি কী অপরাধ করেছিলাম? নিজের দায়িত্ব পালন করিনি? যারা কথা দিয়েছিলেন ভোট দেবেন, তাঁরা কেন দিলেন না? এই অভিমান আমার থাকবে। মন দিয়ে নিজের সেরাটা দিয়েছি। তবুও হারতে হল। এ বার নির্বাচনে দাঁড়াতেই চাইনি। দল জোর করে দাঁড় করিয়েছিল।’’
শিলিগুড়ি মডেল’-এর স্থপতিকারের গলায় শোনা গিয়েছে আশার সুরও। অশোক বলছেন, ‘‘হেরেও ফিরে আসা যায়। শিলিগুড়ি নিশ্চই বামেদের পথ দেখাবে আবার। সেই চেষ্টায় এ বার নিজেদের নিয়োজিত করব। আগামী পুরসভা নির্বাচন বা শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের নির্বাচন সহ সমস্ত নির্বাচনে আমি নই, লড়বে নতুন মুখেরা।’’
ফল ঘোষণার দিন প্রথম বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিলেন তন্ময়। কটাক্ষের সুরে বলেছিলেন, ‘‘শুধু স্ট্যালিন কপচালে হবে না। এটা স্ট্যালিনের যুগ নয়।’’ প্রশ্ন তুলেছিলেন আইএসএফ-এর সঙ্গে জোট নিয়েও। যা নিয়ে দলীয় ব্যবস্থার মুখে পড়েছেন তিনি। কিন্তু তার পরেও বিদ্রোহের আগুনকে দলীয় শৃঙ্খলার বন্ধনীতে আটকে ফেলতে পারেনি এ রাজ্যের সিপিএম নেতারা। এই তপ্ত আবহেই নতুন করে ঘা দিয়েছেন কান্তি। বুধবার তিনি বলেন, ‘‘মানুষ ধরে নিয়েছিলেন, এ রাজ্যে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদকে রুখতে পারবে তৃণমূল কংগ্রেস। বামপন্থীরা নয়। কেন আমরা পারিনি তার জন্য শীর্ষ নেতৃত্ব আলাপ আলোচনা করবেন। তাঁরা নিশ্চয়ই তথ্যনিষ্ঠ অনুসন্ধান করবেন। গোল গোল কথা বললে হবে না।’’ তার ঠিক ২৪ ঘণ্টার মাথায় আইএসএফের হাত ধরা নিয়ে একরাশ প্রশ্ন তুলে দিলেন অশোকও। দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিন বাম নেতার তির নিক্ষেপ কোন ফলের জন্ম দেয় তা আকর্ষণের বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে বাম কর্মী এবং সমর্থকদের কাছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy