সুজন চক্রবর্তী এবং মহম্মদ সেলিম।
নির্বাচনের প্রচারে উপচে পড়ছে ভিড়। আবার তার মধ্যেই ফের মাথা তুলেছে করোনার আতঙ্ক। এই পরিস্থিতিতে ভোটের প্রচারে বড় কর্মসূচির উপরে য়থাসম্ভব রাশ টানার সিদ্ধান্ত নিল সিপিএম। তাদের মতে, সরকার এবং নির্বাচন কমিশনেরই উচিত ছিল এই বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ করা। এখনও পর্যন্ত তার কোনও লক্ষণ না থাকায় স্বেছারোপিত কিছু নিয়ন্ত্রণ মেনে চলার কথা বলছে সিপিএম।
আলিমুদ্দিনে বুধবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তার পরে দলের পলিটবুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিম ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বড় কর্মসূচি কমিয়ে আনার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। রাজ্যে ১৩২টি বিধানসভা আসনে ভোট হয়ে গিয়েছে, আরও চার দফায় ১৬২টি আসনে নির্বাচন বাকি। সব দলেরই ভোটের প্রচারে কর্মসূচির আয়োজন করে স্থানীয় শাখা। তাই দলের জেলা ও স্থানীয় নেতৃত্বের প্রতি আলিমুদ্দিনের বার্তা, ভোটের সময়ে বড় প্রচার ১০০% বন্ধ করে দেওয়া হয়তো সম্ভব নয়। তবে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে এখন বাড়ি বাড়ি ছোট ছোট দলে গিয়ে প্রচার এবং সামাজিক মাধ্যমকে বেশি করে ব্যবহার করা হোক।
তবে ভোটের মধ্যে এমন সিদ্ধান্ত যে শাঁখের করাত হতে পারে, তা মানছেন সিপিএম নেতারা। কারণ, অন্যান্য দলের তুমুল প্রচার চালু থাকলে আর নিজেরা ‘সদিচ্ছা’র কথা বলে পিছিয়ে গেলে কথা উঠবে, আগেই ময়দান ছেড়ে দেওয়া হল! প্রার্থী বা নিচু তলার কর্মীরা মানসিক যুদ্ধে পিছিয়ে পড়ার ভয়েই সদিচ্ছা দেখাতে না-ও চাইতে পারেন। আবেদনের সুরেই সেলিম বলেছেন, ‘‘সরকার বা কমিশন উদাসীন থাকলেও আক্রান্ত মানুষের পাশে আমাদের থাকতে হবে। কমিশন অনেক কথা বলেছিল, ভেবেছিলাম কিছু যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু এখন আমাদেরই পরবর্তী পর্যায়ের নির্বাচনে বড় কর্মসূচি এড়িয়ে চলতে হবে।’’ তা হলে কি রোড-শো বন্ধ? একেবারে বন্ধ করা যাবে না মেনে নিয়েই সেলিম বলেন, ‘‘সৃজনশীল প্রচার করতে হবে। সভা হলেও পর্যাপ্ত সতর্কতা নিতে হবে।’’ কোভিড ব্যবস্থাপনায় কেন্দ্র তো বটেই, রাজ্য সরকারও যে ঠিক ভূমিকা নেয়নি, সেই অভিযোগও করেছেন সেলিম।
রাজ্যের দুই যুযুধান শিবির তৃণমূল ও বিজেপি এই প্রশ্নে সিপিএমকে কটাক্ষই করেছে। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘কোভিডের মধ্যে কমিশন যখন আট দফায় ভোট করল, তখনই প্রতিবাদ করা উচিত ছিল। এখন সিপিএমের কিছু করার নেই, তাই এই সব বলছে! ওরা তো ভাইজান নির্ভর দল হয়ে গিয়েছে! আমাদের বিজেপির সঙ্গে লড়তে হচ্ছে। বিধি মেনেই আমাদের কর্মসূচি চলবে।’’ একই সুরে রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘সিপিএমের কোনও বড় কর্মসূচিই নেই, ওদের কমানোর কথায় কিছু এসে যায় না! আমাদের বড়-ছোট সব কর্মসূচিই চলবে, তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে।’’
সেলিম ও সুজনবাবুর ব্যাখ্যা, ভেঙে ভেঙে নানা দফায় নির্বাচনে কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণের সুযোগ ছিল। কিন্তু কমিশন যথাযথ ভাবে উদ্যোগী হয়নি। সুজনবাবুর বক্তব্য, ‘‘অন্য দল কী করবে, বলতে পারব না। নির্বাচন নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনের ঝুঁকিকে অস্বীকার করা যায় না। তাই যতটা পারা যায়, আমরা চেষ্টা করব অতিরিক্ত ভিড় এড়ানোর এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার।’’
সিপিএমের এই বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘একদমই ঠিক অবস্থান। আমরাও একই কথা বলব। সেই সঙ্গে প্রার্থীদের অনুরোধ করব, অন্তত শহরাঞ্চলে যেখানে করোনার প্রকোপ বেশি, সেখানে নির্বাচন খরচের একটা অংশ থেকে মানুষকে মাস্ক দেওয়ার। আশা করি, সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধির জন্য মাস্ক দেওয়াকে কমিশন উৎকোচ বলে ধরবে না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy