মুখোমুখি: ভোটের আগে বাম প্রার্থীদের সঙ্গে এলজিবিটিকিউ গোষ্ঠীর ভোটদাতারা। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
বাম জোটের ব্রিগেড সমাবেশে কিছু দিন আগেই নজিরবিহীন ভাবে নজর কেড়েছিল সাতরঙা ‘রেনবো’ নিশানের উপস্থিতি। এমনকি, নারীবিদ্বেষী মন্তব্যের জন্য চিহ্নিত বাম জোট শরিক আব্বাস সিদ্দিকীকে নিয়ে বিতর্কের পটভূমিতেও নিজেদের এলজিবিটিকিউ এবং তৃতীয় লিঙ্গের বন্ধু ভাবমূর্তিই বার বার মেলে ধরেন বামেরা। বিধানসভা ভোটের দ্বিতীয় পর্বের ঠিক আগে এ বার রাজ্যের যৌন সংখ্যালঘু শ্রেণি তথা তৃতীয় লিঙ্গ এবং এলজিবিটিকিউ গোষ্ঠীর সঙ্গে বৈঠকে শামিল হলেন সিপিএম নেতৃত্ব।
“সিপিএমের মহিলা সমিতি এবং যুব সংগঠনে বহুদিনই এই প্রান্তিকদের প্রতি সংবেদনশীল হাওয়া রয়েছে। ভবিষ্যতে আলাদা গণসংগঠনে এই মানুষদের দাবিদাওয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথাও পার্টি ভাবছে”— বলছিলেন বালিগঞ্জের সিপিএম প্রার্থী ফুয়াদ হালিম। মঙ্গলবার সিটু-র রাজ্য অফিস, শ্রমিক ভবনের বৈঠকে হাজির ছিলেন কলকাতার যৌন সংখ্যালঘুদের প্রথম গৌরব যাত্রার এক আহ্বায়ক, রফিকুল হক দোহাজ ওরফে রঞ্জনও। তিনি নিজেও বামপন্থী মা-বাবার সন্তান। মূলস্রোতের একটি রাজনৈতিক দলের কাছে এই বিষযগুলির গুরুত্ব একটি জরুরি প্রাপ্তি বলে তিনি মনে করেন। এসএফআই-এর সর্বভারতীয় নেত্রী তথা বালির প্রার্থী দীপ্সিতা ধর বলছিলেন, ‘‘লকডাউনের সময়েই আমাদের সংগঠনের এই প্রান্তিক সদস্যদের নিয়ে একটি মঞ্চ তৈরি হয়। দুঃসময়ে ওঁরা কেমন আছেন, সে দিকে খেয়াল ছিল।” সিপিএমের তরুণ মুখ দীপ্সিতা এ দিন বলেছেন, “এলজিবিটিকিউ বা তৃতীয় লিঙ্গভুক্তদের আসলে অনেকগুলো পরিচয়। সাধারণত, কেউ শিক্ষক, কৃষক, ছাত্র বা শ্রমিক। লিঙ্গ অধিকারের লড়াইয়ের পাশাপাশি দলের অন্য গণসংগঠনগুলোতেও তাঁদের সমান অধিকারের পরিবেশ গড়ে উঠেছে।” নারী সুরক্ষার মতো রূপান্তরকামীদের সুরক্ষা থেকে শুরু করে ট্রান্সচাইল্ড বা রূপান্তরকামী শিশুদের হোমের মতো বিষয় নিয়েও এ দিন সিপিএম সরব হয়েছে। উঠে এসেছে তৃতীয় লিঙ্গভুক্তদের উপযোগী শৌচাগার বা তাঁদের প্রতি সহমর্মী জনপরিসর তৈরির দাবিও।
কাশীপুর-বেলগাছিয়ার সিপিএম প্রার্থী প্রতীপ দাশগুপ্ত আবার বলেন, “সমাজের ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টা চলছে। এই পরিস্থিতিতে যৌন সংখ্যালঘুদের প্রতিও বিদ্বেষ বাড়ছে। তাঁদের অধিকার রক্ষার লড়াইটা তাই প্রতিরোধের অঙ্গ।” এর আগে লোকসভা ভোটের প্রাক্কালেও যৌন সংখ্যালঘুদের দাবিদাওয়া শুনেছিলেন বামপ্রার্থীরা। যাদবপুরের প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী এবং গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির নেত্রী কনীনিকা বসু ঘোষও এ দিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
২০১৪-য় সুপ্রিম কোর্টে নালসা রায়ের পরেই তৃতীয় লিঙ্গভুক্তদের প্রতি সামাজিক বৈষম্য রোধ এবং সমানাধিকারের দাবি সর্বজনীন স্বীকৃতি পেয়েছিল। এর পরে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারাকে অপরাধের তকমামুক্ত করার পদক্ষেপেও এলজিবিটিকিউ মানুষদের জীবন কিছুটা নিরাপদ ও স্বাভাবিক হয়েছে। কিন্তু এখনও অনেক দূর পথ যে চলা বাকি, তা উঠে আসে এই প্রান্তিকদের প্রতিনিধি এবং যৌন সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা কর্মী রঞ্জিতা সিংহ, মালবিকা, বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায় প্রমুখের কথায়। এসএফআই-এর রাজ্য কমিটির সদস্য তথা রূপান্তরকামী নারী অপ্রতিম বলছিলেন, “বরাবরই সংগঠনের ভিতরে সহৃদয়তা এবং খোলা হাওয়াই পেয়েছি। সমানাধিকারের লড়াইটা ভোট-পরবর্তী পরিস্থিতিতে চালিয়ে যাওয়াই চ্যালেঞ্জ।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy