ইস্তেহার প্রকাশ করছেন অধীর চৌধুরী। ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটের আগে রাহুল গাঁধী যে ‘ন্যায়’ প্রকল্পের কথা বলেছিলেন, তার আদলেই বাংলায় বিধানসভা ভোটের জন্য ইস্তাহারে ঘোষণা করল প্রদেশ কংগ্রেস। আর্থিক অনগ্রসর ভাবে ২০% পরিবারের জন্য মাসে ৫ হাজার ৭০০ টাকা করে সাহায্যের কথা ঘোষণা করল তারা। ছত্তীশগঢ়ে কংগ্রেস সরকার ৫ হাজার ৭০০ টাকা করেই আর্থিক অনুদান দিচ্ছে। সেই মডেলই বাংলায় চালু করতে চায় কংগ্রেস।
জোট শরিক বামফ্রন্টের মতো কংগ্রেসও তাদের ইস্তাহারে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ ঘোষণা করেছে। বলা হয়েছে, করোনা ও লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত কর্মহারা পরিযায়ী শ্রমিকেরা পরবর্তী কাজে নিযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত পরিবার পিছু মাসে ৫ হাজার টাকা করে অন্তর্বর্তী ভাতা দেওয়া হবে। বামফ্রন্ট পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ সুরক্ষা প্রকল্পের পাশাপাশি পৃথক দফতর চালু করার কথাও বলেছে। ভিন্ রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের একটি বড় অংশই মুর্শিদাবাদ ও মালদহের বাসিন্দা। যে এলাকায় এখনও কংগ্রেসের প্রভাব আছে। লকডাউনের মধ্যে অন্যান্য রাজ্যে আটকে থাকা শ্রমিকদের ঘরে ফেরার বন্দোবস্ত করতে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে তাঁর প্রকাশিত নির্বাচনী ইস্তাহারেও পরিযায়ী শ্রমিকদের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিধান ভবনে সোমবার ইস্তাহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে অধীরবাবুর পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন মনোজ চক্রবর্তী, সন্তোষ পাঠকেরা। বিজেপি ও তৃণমূলের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে অধীরবাবু এ দিন বলেন, ‘‘নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে প্রতিশ্রুতির ভেলায় চেপেছেন মোদী-দিদি। রাজ্যে তৃণমূলের সরকার আছে ১০ বছর, দিল্লিতে মোদী ক্ষমতায় আছেন ৭ বছর। ওঁদের এখন মানুষের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময়।’’ নিজেদের প্রতিশ্রুতির ব্যাখ্যা দিয়ে প্রদেশ সভাপতির বক্তব্য, ‘‘বাঙালিকে কাঙালি করা নয়, আমরা চাই মানুষকে মর্যাদা দিতে। অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনা করেই ঠিক হয়েছে, অর্থনীতির অবস্থা ফেরাতে গেলে মানুষের হাতে নগদ চাই। তা হলে তাঁরা খরচ করবেন, বাজারের গতি বাড়বে। তাই দুর্বল অংশের মানুষকে সহায়তা দেওয়ার অঙ্গীকার করছে কংগ্রেস।’’ অধীরবাবু মনে করিয়ে দিয়েছেন, কংগ্রেস কেন্দ্রীয় ভাবেই এই প্রকল্পের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কংগ্রেসের ইস্তাহারের নাম হয়েছে ‘বাংলার দিশা’। ব্যবহার করা হয়েছে প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের ছবি ও উদ্ধৃতি। কংগ্রেসের মতে, বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ ছাড়াই বিধানবাবু বাংলার যে উন্নতি ঘটিয়েছিলেন, তার সুফল আজও মিলছে। অধীরবাবুর মন্তব্য, ‘‘আয়ের নিরিখে ৩৬টি রাজ্যের মধ্যে বাংলার স্থান ২৩-এ। আর মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, মানুষের আয় দ্বিগুণ, তিন গুণ হয়েছে। যদি এই দাবিতে ন্যূনতম সত্যতা থাকে, তা হলে একটি ভোটও কেউ কংগ্রেসকে দেবেন না!’’
সংযুক্ত মোর্চার শরিকদের মধ্যে আসন ভাগের সব জটিলতা অবশ্য এখনও কাটেনি। পুরুলিয়ার জয়পুরে এ দিনই ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থীর সমর্থনে সভামঞ্চ থেকে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, ‘‘এই কেন্দ্রে মোর্চার প্রার্থী রয়েছেন। কংগ্রেস কী ভাবে এখানে প্রার্থী দেয়? প্রার্থী-পদ প্রত্যাহারের সময় পার হয়ে গিয়েছে। কংগ্রেসকে প্রচারপত্র দিয়ে মানুষকে জানাতে হবে যে, তাঁরা সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীকে সমর্থন করছেন।’’ জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো আবার পাল্টা বলেছেন, ‘‘বিমানবাবুর আগে খোঁজ নেওয়া দরকার। বাঘমুণ্ডিতে কে বা কারা আগে জোট ভেঙে দেওয়াল লিখন করেছে, সেটা তো সবাই জানেন।’’ উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা কেন্দ্রে আইএসএফ প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও সেখানে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দেওয়ার কথা বলেছে ফ ব। তাদের রাজ্য নেতৃত্বের বক্তব্য, আলোচনা চলাকালীনই আইএসএফ দেগঙ্গায় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দিয়েছে। এখনও চেষ্টা চলছে আলোচনা করেই সমস্যা মেটানোর। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরবাবুরও বক্তব্য, আলোচনায় যথাসম্ভব জোটের জট কাটানোর চেষ্টা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy