প্রতীকী চিত্র
বেলেঘাটার একটি ক্লাবে এই মুহূর্তে দু’জন সম্পাদক এবং দু’জন সভাপতি! ভাগ হয়ে গিয়েছেন সদস্যেরাও। ক্লাবে কোনও বৈঠকই করা যাচ্ছে না দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে। অভিযোগ, একদল নিজেদের সম্পাদক এবং সভাপতিকে নিয়ে বৈঠকে বসলে অন্য দল তাদের সম্পাদক এবং সভাপতিকে নিয়ে হাজির হয়ে ঝামেলা শুরু করছে! দু’পক্ষের হাতাহাতি থেকে আবার রাজনৈতিক স্লোগান উঠছে মুহুর্মুহু। পরিস্থিতি এমন যে, মাঝেমধ্যেই পুলিশ পিকেট বসাতে হচ্ছে ক্লাবের সামনে।
পাড়ার বাসিন্দারা অবশ্য জানাচ্ছেন, আগে এমন ছিল না। ভোটের বাদ্যি বাজার সঙ্গে সঙ্গে গন্ডগোলের শুরু। যিনি এত দিন সভাপতি ছিলেন, তিনি এক বৈঠকে বলে বসেন, ‘‘ভোট আসছে। দিদির সরকারের থেকে আমরা কিন্তু কম সাহায্য পাইনি।’’ যুক্তি হিসেবে তিনি জানিয়েছিলেন, অনুদানের টাকায় টিনের চালের ক্লাবঘর দোতলা করা গিয়েছে। জিম খুলে পাকাপাকি আয়ের পথও করে নেওয়া হয়েছে। ফের টাকা পেলে আর একটি তল বাড়িয়ে অনুষ্ঠান বাড়ি হিসেবে ভাড়া দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। সভাপতির বক্তব্য ছিল, ‘‘কৃতজ্ঞতা থেকেই তো এ বার দিদিকে বেছে নেওয়ার কথা।’’ কিন্তু ওই বৈঠকেই অন্য দল চিৎকার শুরু করে, ‘‘আপনাকে মানি না। ও সব দিন গিয়েছে। এ বার আসল পরিবর্তন আসবে।’’ চেয়ার ছোড়াছুড়ি দিয়ে শেষ হয় সেই বৈঠক।
তৃণমূল সরকারের ক্লাব-খয়রাতি ভোটবাক্সের ‘আনুগত্য’ লাভে কতটা কার্যকর হয়েছে, তা নিয়ে তর্ক চললেও অনেকেই এখন একমত যে, ওই টাকা বহু ক্লাবেই বিভাজনের পরিবেশ তৈরি করেছে। ভোট চলাকালীন এই মুহূর্তে যা আরও বেড়েছে বলে পাড়ায় পাড়ায় খবর। টাকা পাওয়ার সময়ে যাঁরা সভাপতি বা সম্পাদক ছিলেন, তাঁদের দেখিয়ে বহু ক্লাবের বর্তমান কর্মকর্তারা বলছেন, ‘‘যাঁরা সেই সময়ে টাকা নিয়েছিলেন, তাঁরা আনুগত্যের হিসেব দেবেন। নতুন কমিটি সেই টাকার স্বাদ পায়নি। ফলে খেতে কেমন, বলতেও পারবে না। এখন যিনি কিছু দেবেন, আমরা তাঁর পক্ষে।’’
বড়বাজারের একটি ক্লাবের সম্পাদকের বক্তব্য, ‘‘আমরা ব্যবসায়ী বলে বুঝি, সব কিছুরই একটা মেয়াদ থাকে। অনুদানের টাকায় আনুগত্যের মেয়াদ শেষ। ওই টাকার বদলে যতটা আনুগত্য দেখানো উচিত ছিল, তা আগের সব ভোটে দেখানো হয়ে গিয়েছে। নতুন করে মধু না ঢাললে ভোটবাক্সের ফল দেখে মিষ্টি বিলি হবে কী করে?’’ দমদম গোরাবাজারের একটি ক্লাবের কর্তা আবার স্পষ্ট জানালেন, ‘‘বিভাজনের রাস্তা তৈরি হবে বুঝে আমরা টাকা নিইনি। স্থানীয় নেতা-মন্ত্রী থেকে পুলিশ— অনেকেই টাকা নেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছিলেন। লোকসভা ভোটেই প্রমাণ হয়েছে, টাকা ছড়িয়ে ভোটের আনুগত্য কেনা যায় না।’’ পর্ণশ্রীর একটি ক্লাবের সদস্যদেরও দাবি, ‘‘যারা টাকা নেয়নি, আসলে তারাই পাশে আছে। বাকিরা সব লুটেপুটে খেয়ে অন্য ফুলে নাম লিখিয়েছে।’’
২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার এক বছরের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্লাবগুলিকে অনুদান দেওয়া শুরু করে। সেই সূত্রেই উঠতে শুরু করে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ। কোথাও খেলার মানোন্নয়নের জন্য দেওয়া টাকা দিয়ে ক্লাবঘর পাকা করে অনুষ্ঠান বাড়ি হিসেবে ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। কোথাও অভিযোগ ওঠে, জিম বা গ্যারাজ বানিয়ে পাকাপাকি অর্থ উপার্জনের পথ করে নেওয়া হয়েছে। ভুয়ো ক্লাব বানিয়ে স্থানীয় নেতার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও আসতে শুরু করে ভূরি ভূরি।
হাতিবাগানের একটি ক্লাবের কর্মকর্তা শাশ্বত বসু যদিও বললেন, ‘‘কিছু দুর্নীতি হলেও, বেশির ভাগ ক্লাব কিন্তু কাজ করেছে। অনেক ক্লাবের মানোন্নয়নও হয়েছে। দুর্দিনে পাশে পাওয়া সরকারকে সকলে কিন্তু ভুলে যায়নি।’’ ভুলে না যাওয়ার সেই কথাই বাগবাজারের একটি ক্লাবের কর্মকর্তাদের গলায়। সেখানকার এক কর্তা বললেন, ‘‘যে সরকার পাশে ছিল, তার প্রার্থীর হয়ে আমাদের ক্লাব প্রচারে নেমেছে। কেউ কেউ চোখ পাল্টায়, গদ্দার হয়। সকলে হয় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy