বাড়িতেই কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা। —নিজস্ব চিত্র
পরীক্ষা মিটেছে। তবে এখনও অঙ্ক মেলাতে পারছেন না কেউই। যোগ-বিয়োগের বিরাম নেই। গড়বেতা বিধানসভার তিন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর কেউ ব্যস্ত কর্মীদের সঙ্গে চুলচেরা বিশ্লেষণে, তো কেউ পায়ের চোট নিয়েই কর্মীদের কাছে ফাইল বের করে বসে হিসেব কষছেন। ভোট শেষে রাজনৈতিক কর্মসূচির ব্যস্ততা না থাকায় কর্মীরাও ব্যস্ত হিসেবনিকেশে।
২৭ মার্চ প্রথম দফাতেই ভোট ছিল গড়বেতায়। ফল জানতে একমাসেরও বেশি অপেক্ষা। কৃষি শ্রমিক ফটিক বেরা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী সুদর্শন গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো অনেকে বলছেন, ভোট শেষ হলেও ফল না বেরনো পর্যন্ত কোনও কাজই হচ্ছে না। নির্বাচনী বিধি থাকায় উন্নয়নের কাজ থমকে। পঞ্চায়েত-প্রশাসনে গিয়ে শংসাপত্র পাওয়া, বা অ্যাটেস্টেড করাতে গিয়েও ঘুরে আসতে হচ্ছে। ছুটির মেজাজে সরকারি কর্মীরা। গড়বেতা ১ বিডিও অফিসের এক কর্মীর কথায়, ‘‘কাজের চাপ নেই। কোথাও ঘুরে আসব ভাবছি।’’
প্রতিদ্বন্দ্বী ভোট-প্রার্থীরা অবশ্য অঙ্ক মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। তৃণমূল প্রার্থী উত্তরা সিংহ শেষ দিনের প্রচারে গড়বেতার ধাদিকায় বাঁ পায়ের গোড়ালিতে চোট পেয়েছিলেন। পায়ে ক্রেপ ব্যান্ডেজ বেঁধেই ভোটের দিন বুথে বুথে ঘুরেছিলেন। সেই ধকলে পায়ের ব্যথা বেড়েছে। তারপর থেকে উত্তরা চন্দ্রকোনা রোডের বাড়িতে কার্যত গৃহবন্দি। সেই অবস্থাতেই দলের কর্মীদের সাথে দফায় দফায় আলোচনা করে ভোটের হিসেবনিকেশ করছেন। বুথ স্তরের কর্মীদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে তথ্য নিচ্ছেন।
ক’দিন আগে ব্যথা পায়েই জেলা পরিষদে যান সভাধিপতি উত্তরা। বাড়িতে কর্মীদের সামনে ভোটের ফাইল খুলে কোন অঞ্চলে কত প্লাস, কত মাইনাস থাকবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করার ফাঁকে উত্তরা বললেন, ‘‘পায়ে ব্যথার জন্য ঘরেই আছি। কর্মীদের সঙ্গে ফোনেই যোগাযোগ হচ্ছে। শীঘ্রই গড়বেতা যাব।’’ জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত উত্তরা বলেন, ‘‘সব অঞ্চল ধরে হিসেব করে দেখছি কম মার্জিন হলেও জিতব।’’ পরক্ষণেই প্রশ্ন, ‘‘আপনাদের কাছে কী খবর?’’
ভোটের পরেও জনসংযোগে থাকছেন এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী মদন রুইদাস। হরিনাম কীর্তন থেকে বগড়ির দোলমেলা, পংক্তিভোজনেও দেখা যাচ্ছে পদ্ম-প্রার্থীকে। কখনও দলের কর্মীদের সাথে আলোচনা সারছেন, ভোটের পরে আক্রান্ত কর্মী-সমর্থকদের পাশেও থাকছেন। সে সবের ফাঁকেই চলছে ভোট নিয়ে খুঁটিনাটি অঙ্ক কষা। মাঝে খড়্গপুর কেন্দ্রে দলের প্রার্থীর প্রচারেও গিয়েছিলেন। মদন বলেন, ‘‘ভোট মিটলেও মানুষের সঙ্গেই যোগাযোগ রেখে চলেছি, যেমন সারা বছর রাখি।’’ আর ভোটের ফল? পদ্মপ্রার্থীর উত্তরে কিছুটা দ্বিধা, ‘‘গড়বেতায় সম্ভবত এ বার পদ্ম ফুটছে। সরকারেও আমরা আসছি, নিশ্চিত।’’ গড়বেতার বাসিন্দা বিজেপির যুব মোর্চার সভাপতি অনির্বাণ শুকুল অবশ্য বলেন, ‘‘বুথ স্তর থেকে খবর নিয়ে দেখেছি বিজেপির জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা।’’
ভোটের পরে কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেছেন এই কেন্দ্রের সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী তপন ঘোষ। নির্বাচনী এজেন্ট-সহ ভোটের সময় যে সব নতুন কর্মী দলের হয়ে কাজ করেছেন তাঁদের নিয়ে সভা করে জেনেছেন ‘আপডেট’। ক’দিন ধরেই তপন ব্যস্ত আক্রান্ত কর্মীদের চিকিৎসার ব্যবস্থায়। তপন বলেন, ‘‘বামপন্থীরা ঠান্ডা ঘরে থাকার জন্য রাজনীতি করে না। ভোট থাকুক না থাকুক ভূমিপুত্র হিসেবে সারা বছর মানুষের পাশে থাকি, এখনও আছি।’’ নিজের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী তিনিও। গড়বেতার দলীয় কার্যালয়ে বসা সিপিএম কর্মীরা অবশ্য বলেন, ‘‘জয়ের কথা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে মানুষের সমর্থন তো বাড়বেই।’’
তৃণমূলের কর্মীরা আছেন খোশমেজাজে। কোনও অঞ্চলের তৃণমূল নেতা ফেসবুক লাইভ করে তৃণমূলের জয়ের কথা জোর গলায় বলছেন, তো কোথাও কর্মীরা তাসের আড্ডায় মোবাইলে ‘খেলা হবে’ গানের সুরে গলা মেলাচ্ছেন। গড়বেতায় দলের ব্লক কার্যালয়ে আড্ডা দেওয়া তৃণমূল কর্মী মৃন্ময় শুকুল, সৌজিত পালরা বলেন, ‘‘জয় শিওর। মার্জিন নিয়ে হিসেব করছি।’’
কার অঙ্ক মেলে, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy