প্রচারে আসানসোল উত্তরের তৃণমূল প্রার্থী মলয় ঘটক। ছবি: পাপন চৌধুরী।
তাঁর কেন্দ্র আসানসোল উত্তরে এ বার অন্য প্রার্থী দেওয়ার প্রকাশ্য-দাবি উঠেছিল দলের অন্দর থেকেই। এর কারণ হিসেবে দলের ওই অংশটি অনুন্নয়নের অভিযোগ করেছিল। আসানসোল উত্তরের তৃণমূল প্রার্থী মলয় ঘটকের প্রচার-পর্ব ঘিরেও রয়েছে উন্নয়নের আবদার। থাকছে ‘অনুন্নয়নের’ খোঁচাও। তবে সে সব সামলে নিয়েই এগোচ্ছে যোগেশচন্দ্র ল’কলেজের প্রাক্তনী মলয়বাবুর প্রচার-পর্ব।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা। এলইডি-র ছটায় উজ্জ্বল আসানসোল আদালত লাগোয়া ঘড়ি মোড়। ধীরে-ধীরে ভিড় জমছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও বিমানবন্দর তৈরি, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, ইএসআই হাসপাতালের উন্নয়ন-সহ গত দশ বছরে এমন ৩৭টি উন্নয়নমূলক কাজের ফিরিস্তি লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে ঘুরছেন তৃণমূল কর্মী-সদস্যেরা। উড়ছে নীল-সাদা বেলুন।
আচমকা এ সব কিছু ছাপিয়ে শ’দুয়েক মিটার দূরে বার্নপুর রোড থেকে ভেসে এল লাউড স্পিকারের তীব্র আওয়াজ। সবিস্তারে গত দশ বছরে বিধায়ক ও মন্ত্রী হিসেবে মলয়বাবুর ‘অনুন্নয়নের’ কথা বলতে শুরু করেছেন বিজেপি নেতারা। তবে এ সব কিছুকে বিশেষ পাত্তা না দিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ ঘড়ি মোড়ে থামল ১৯৭৫ থেকে জেলার রাজনীতিতে যুক্ত মলয়বাবুর দুধ-সাদা গাড়ি। জোড় হাতে নেতা নামলেন। দলীয় কর্মীদের সঙ্গে স্বল্প আলাপচারিতার পরে শুরু হল রোড-শো। রাখঢাক না রেখেই বিরোধীদের উদ্দেশে দল ও রাজ্য প্রশাসনের বহু দায়িত্ব সামলানো মলয়বাবুর কটাক্ষ, ‘‘প্রচার হচ্ছে, আমরা না কি উন্নয়নই করিনি। আমরা না কি সবেতেই ব্যর্থ। মানুষ খুব সচেতন। সবটাই তাঁরা দেখছেন।’’ ঘড়ি মোড় থেকে বুধা— মিছিলের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ, দু-ই বাড়তে থাকে। দু’পাশ থেকে জনতার রব, ‘‘দাদা এসেছে।’’
‘দাদা’র এ বারের গন্তব্য, রেলপাড়ের মুৎসুদ্দি মহল্লা। ঘটনাচক্রে, এই রেলপাড় থেকেই দলের কয়েকজন বিদায়ী কাউন্সিলর প্রার্থী বদলের দাবি করেছিলনে। কিন্তু ওই মহল্লায় ‘দাদা’ আসতেই লাল ফাইবারের চেয়ার এগিয়ে দিলেন মহম্মদ ফিরোজ খান। সেখানে মলয়বাবু বসতেই, জড়ো হতে থাকল জনতা। ক্ষোভ নয়, বরং খানিকটা ‘আবদারের’ সুরে বিদায়ী মন্ত্রীর কাছে বাসিন্দাদের কয়েকজন বললেন, ‘‘দাদা এখানের চারটি সেতুর মধ্যে তিনটির অবস্থা ভাল নয়। একটু দেখবেন।’’ অঞ্জুমা খাতুন নামে এক জন বলেন, ‘‘একটু পানীয় জলের সমস্যাটা মিটিয়ে দিন। গরমে খুবই কষ্ট হয়।’’ কোনও প্রতিক্রিয়া নেই মলয়বাবুর। বরং, নোট-বুকে লিখে রাখলেন সব কথা।
পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের রামপুর, বাউড়িপাড়া, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ভুঁইয়াপাড়া। ঢাক-ঢোলের বাহার নেই, বরং মলয়বাবু এখানে প্রচার-পর্বে পদব্রজেই ভরসা রাখছেন। এখানে দাদা নেমে এলেন ‘তুমিতে’। স্থানীয় মহিলা রত্না ভুইঁয়া, দুলালি বাউড়িরা বললেন, ‘‘বিপিএল রেশন পাচ্ছি না। ব্যবস্থা করে দাও।’’ এ বার আর নোট-বুকে কলম সরল না। বরং খানিকটা যেন বিস্মিত রাজ্যের বিদায়ী মন্ত্রী। বললেন,‘‘তাই না কি!’’
‘অনুন্নয়ন’, ‘প্রকল্পের সুবিধা না পাওয়া’— এমন নানা অভিযোগ শুনতে শুনতে পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের শীতলা, ডোমপাড়া, মৌজুরি গ্রামের ‘দৃশ্যত বিরোধীশূন্য’ এলাকায় পৌঁছন মলয়বাবু। ফুল ছড়িয়ে, শাঁখ বাজিয়ে মলয়বাবুকে স্বাগত জানান বাসিন্দারা। কিন্তু এখানেও মহিলারা পুকুর-ঘাট বাঁধানো, দ্রুত বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা চালু করার দাবি জানালেন। পোড়খাওয়া এই আইনজীবী রাজনীতিক কোনও প্রতিশ্রুতি দিলেন না। বরং বললেন, ‘‘মিথ্যা কথা বলে ভোট চাইছি না। দশ বছরে যা উন্নয়ন হয়েছে, তার ছিটেফোঁটাও আগে হয়নি। বিশ্বাস রাখুন, আরও উন্নয়ন হবে।’’
— উন্নয়ন আর অনুন্নয়ন, এই দ্বৈরথেই গড়িয়ে যাচ্ছে মলয়বাবুর প্রচার-রথের চাকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy