Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
borjora

Bengal Polls: প্রতি দিনের পেটের জ্বালা অনেক বড়

‘‘করার আছেই বা কী? অত বড় আগুন কি বাড়ি বাড়ি গিয়ে জল বয়ে এনে নিভিয়ে ফেলা সম্ভব?

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নীলোৎপল বিশ্বাস
বড়জোড়া শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২১ ০৬:২৫
Share: Save:

দাউদাউ করে জ্বলছে এলাকার মূল বাজার। একের পর এক গ্যাস সিলিন্ডার ফাটছে বিকট শব্দে! চোখের সামনে রুটিরুজি ছাই হয়ে যেতে দেখেও কান্না, চিৎকার আর হাহুতাশ ছাড়া যেন আর কিছুই করার নেই অগ্নিকুণ্ডের সামনে জড়ো হওয়া ভিড়টার!

‘‘করার আছেই বা কী? অত বড় আগুন কি বাড়ি বাড়ি গিয়ে জল বয়ে এনে নিভিয়ে ফেলা সম্ভব? আমাদের বিধানসভা এলাকায় তো কোনও দমকলকেন্দ্রই নেই! দুর্গাপুরে একটা আছে প্রায় তিরিশ কিলোমিটার দূরে, আর একটা বাঁকুড়া শহরে, প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে। যত ক্ষণে সে দিন দমকল আসে, সব শেষ!’’, বড়জোড়া বাজারের সামনে প্রবল উত্তেজিত বছর ষাটেকের সুকুমার ঘোষ। এর পর তাঁর মন্তব্য, ‘‘ব্যাপারটা নিয়ে এ বার খুব প্রচার করছে সিপিএম। প্রথমটায় আমাদেরও খুব রাগ হয়েছিল। কিন্তু এখন মনে হয়, একটা অগ্নিকাণ্ডের চেয়ে প্রতি দিনের পেটের জ্বালা অনেক বড়। সেই জ্বালা মেটাতে যিনি এত কিছু করছেন, তাঁকে আর এক বার সুযোগ দিলে হয়তো আগুনের জ্বালাটাও মিটে যাবে!’’

এই বড়জোড়াতেই ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে সিপিএমের কাছে হেরে গিয়েছিল তৃণমূল। গত লোকসভা নির্বাচনেও বিধানসভা ভিত্তিক ফলের নিরিখে জেলার অন্য ১১টি আসনের মতো বড়জোড়াতেও এগিয়ে ছিল বিজেপি। সেখানেই এখন শোনা যাচ্ছে এমন বেশ কিছু ‘অন্য রকম’ কথা। যা আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে বাঁকুড়ার লড়াই। ১ এপ্রিল দ্বিতীয় দফার ভোটে বড়জোড়ার মতোই যে লড়াই হতে চলেছে তালড্যাংরা, বাঁকুড়া, ওন্দা, বিষ্ণুপুর, কোতুলপুর, ইন্দাস এবং সোনামুখী বিধানসভা কেন্দ্রে।

ওই জেলার রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, শাসক দলের নিচু তলার নেতাদের কোন্দলের চেয়েও মানুষকে বেশি ভাবাচ্ছে তৃণমূল সরকারের একের পর এক সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প। লকডাউন চলাকালীন জেলা প্রশাসন যে ভাবে একেবারে বাড়ি বাড়ি পরিষেবা পৌঁছে দিয়েছিল, তা-ও অস্বীকার করতে পারছেন না কেউই। এর সঙ্গেই রাস্তা সংস্কার, লকডাউনে ভিনরাজ্য থেকে কর্মহারা হয়ে এসে একশো দিনের কাজে রুটিরুজির সংস্থান হয়ে যাওয়া, বিনা পয়সায় খাদ্যসামগ্রী পাওয়া, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের আওতাভুক্ত হতে পারাও ছাপ ফেলেছে জনমানসে। অনেকের দাবি, এর পরেও যা কিছু অভাব-অভিযোগ ছিল, শেষ বেলায় তারও অনেকটা সুরাহা করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে ‘দুয়ারে সরকার’ নিয়ে গিয়ে।

ওন্দা বাসস্ট্যান্ডের চায়ের দোকানের মালিক শ্যামলী খাঁ বললেন, ‘‘উল্টো দিকে তো শুধুই গালগল্প। কোনও কেন্দ্রীয় প্রকল্প তো আমরা পাইনি, উল্টে গ্যাসের দাম এতটাই বাড়িয়ে দিয়েছে যে, খাবার গিলতে গলায় ছ্যাঁকা লাগছে। তেলের দামের জন্যই তো আনাজেরও চড়া দর।’’ বিষ্ণুপুর শহরের শিশু পার্কে নাতনিকে নিয়ে বেড়াতে আসা পঞ্চাশোর্ধ্ব রীতা পাঁজার বক্তব্য, ‘‘যে হারে কথায় কথায় একটি দল ধর্ষণের হুমকি দেয় তাতে ভয় হয়। আমার নাতনিটাও তো বড় হচ্ছে!’’ তাঁরই সঙ্গী বছর ষাটেকের সুমনা ধারার মন্তব্য, ‘‘এটা মন্দির নগরী। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমরা ধর্ম চাই না, কাজ চাই, শান্তিতে বসবাস করতে চাই।’’

কোতুলপুর বাস স্ট্যান্ডের চায়ের চর্চায় শিক্ষক সুকান্ত সাঁতরার আবার দাবি, ‘‘আমার কথা মিলিয়ে নেবেন, ভোটের ফল প্রকাশের পরে বড় চর্চার বিষয় হবে দলবদলু নেতারা।’’ তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যাওয়া একাধিক নেতার নাম করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘পেট না ভরলেই দলবদল। মানুষ বোকা নাকি? দল ভাঙিয়ে ক্রিকেট টিম গড়া যায়, জনমত পাল্টানো যায় না।’’

দলবদলের বিষয়কেই উস্কে দিয়ে প্রতিপক্ষ বিজেপি প্রার্থীর নাম করে তালড্যাংরার তৃণমূল প্রার্থী অরূপ চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘খাওয়া আটকে যাওয়ায় যিনি দল বদল করে ফেললেন, তাঁকেই লুফে নিয়ে একটা দল প্রার্থী করে দিল! মানুষই ঠিক করবেন অন্য দলে দাঁড়ানো দুর্নীতিগ্রস্ত প্রাক্তন তৃণমূলকে ভোট দেবেন, নাকি আসল তৃণমূলকে?’’ বিষ্ণুপুরের তৃণমূল প্রার্থী অর্চিতা বিদের আবার বক্তব্য, ‘‘২০১৬ সালে এই কেন্দ্র থেকে জিতে কংগ্রেস প্রার্থী দল বদলে নিয়েছিলেন। আমাদের হয়ে লড়ে যিনি হেরেছিলেন, তিনিও দল বদলে নিয়েছেন। এ বার দেখলাম রাত সাড়ে ১১টায় এক দল ছেড়ে পরের দিনই অন্য দলের প্রার্থী হয়ে গেলেন এক জন! ভালই হল। থাকলে এঁদের জন্যই মানুষ বিমুখ হতেন। এ-ও প্রমাণ হয়ে গেল, প্রতিপক্ষ এতটাই দেউলিয়া যে প্রার্থী করারই লোক নেই।’’ তালড্যাংরা এবং বিষ্ণুপুরের বিজেপি প্রার্থী শ্যামল সরকার ও তন্ময় ঘোষ দু’জনেরই বক্তব্য, এ সব বলে লাভ হবে না। লোকসভা ভোটের সময় থেকেই মানুষ ঠিক করে নিয়েছেন, কাকে ভোট দেবেন।

শুধু তাই নয়, উল্টে বিজেপি-র টিপ্পনী, দুর্নীতি আর দলীয় কোন্দলের জোরেই তো জেলা তৃণমূলের সভাপতি শ্যামল সাঁতরাকে কোতুলপুরের জেতা আসন থেকে সরিয়ে সোনামুখীতে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করাতে হয়েছে! চাকরি তো হয়ইনি, উল্টে সরকারি প্রকল্পের টাকাও নেতারা খেয়ে নিয়েছেন। শ্যামলবাবু অবশ্য বললেন, ‘‘ওরা ভুয়ো খবর ছড়ানোর মাস্টার। মানুষ জানে সত্যি কোনটা।’’ কোতুলপুরের এ বারের প্রার্থী সঙ্গীতা মালিকও বললেন, ‘‘আমার কেন্দ্রে দল আগের বারের চেয়েও বেশি ভোটে জিতবে। জিতলে আগে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল বানাব।’’ বিজেপি-র জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র যদিও বললেন, ‘‘এরপর যা কিছু গড়ার, বিজেপি গড়বে। মানুষ ওদের থেকে ১০ বছরের দুর্নীতির হিসাব নেবে।’’

শেষবেলায় যাওয়া হয়েছিল বাম ছাত্র-যুবর মিছিলে কলকাতায় এসে মৃত মইদুল মিদ্যার কতুলপুরের বাড়িতে। সবুজ দেওয়ালে ঘেরা উঠোনে বসে মইদুলের স্ত্রী বললেন, ‘‘আমাদের নিয়ে আর টানাটানি চাই না। আমাদের ঘরেও তো বিনা পয়সার সরকারি চালই ফুটছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

borjora Bengal Polls 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy