জলপাইগুড়ির বিজেপি দফতরে ‘ক্ষোভের আগুন’। নিজস্ব চিত্র।
শুরু হয়েছিল আগেই। সেই বিক্ষোভ আরও তীব্র হল বৃহস্পতিবার বিকেলে বিজেপি-র নতুন প্রার্থিতালিকা প্রকাশের পর। নীলবাড়ির লড়াইয়ে প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বিজেপি কর্মীদের একাংশ প্রকাশ্যে বিক্ষোভ শুরু করলেন। কোথাও দলের দফতরে তালা ঝোলানো হল। কোথাও বা দফতরে লাগানো আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ডাকতে হল দমকল। কোথাও হল দলবদল। জলপাইগুড়ি থেকে দুর্গাপুর, নানা এলাকাতেই দেখা গিয়েছে এই ছবি।
বিজেপি প্রার্থিতালিকা ঘোষণার হবার পরেই জলপাইগুড়ি জেলার পার্টি অফিসে হামলা হয়। অভিযোগ, টিকিটের দাবিদার দীপেন প্রামাণিকের অনুগামীরা হামলা করেন। তাকে প্রার্থী না করায় দফতরে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি সামলাতে ডাকতে হয় দমকল। প্রসঙ্গত জলপাইগুড়ি সদরে বিজেপি প্রার্থী করেছে সুজিত সিংহকে।
কোচবিহারের সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি-র প্রার্থিতালিকায় নাম না থাকায় বৃহস্পতিবার বিকেলে তৃণমূলে যোগ দেন বিজেপি-র জেলা সহ-সভাপতি ভবেনচন্দ্র রায় এবং তাঁর অনুগামীরা। সিতাইয়ে তৃণমূলের কার্যালয়ে ওই বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়ার হাত থেকে তৃণমূলের পতাকা হাতে তুলে নেন তাঁরা। দিনহাটা-১ ব্লকের বাসিন্দা ভবেনচন্দ্র সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থিপদের দাবিদার ছিলেন। কিন্তু বিজেপি তাঁকে টিকিট দেয়নি। পরিবর্তে সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি-র প্রার্থী করা হয় দীপক রায়কে। ভবেনচন্দ্রের অনুগামীদের অভিযোগ, পয়সার বিনিময়ে দীপককে পার্থী করেছে দল।
অভিযোগ প্রসঙ্গে বিজেপি-র জেলা সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ভবেনচন্দ্র গত বিধানসভা নির্বাচনেও সিতাই কেন্দ্রে বিজেপি-র প্রার্থী ছিলেন। এ বার টিকিট না পাওয়ায় অভিমান করে তৃণমূলে যোগদান করেছেন। অভিমান কেটে গেলে তিনি আবার বিজেপি-তে ফিরে আসবেন।’’
উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়ায় বৃহস্পতিবার স্থানীয় বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরীর ছবিতে আগুন লাগান দলের কর্মী-সমর্থকদের একাংশ। বৃহস্পতিবার বিকেলে উত্তর দিনাজপুরের ৯টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৭টির প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়। চাকুলিয়া বিধানসভায় সচিন প্রসাদের নাম ঘোষণা হতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন দলীয় কর্মীরা। দলীয় কার্যালয় থেকে দেবশ্রীর ছবি বার করে রাস্তায় ফেলে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেন তাঁরা। বিজেপি-র জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ লাহিড়ী অবশ্য দাবি করেছেন, এই ধরনের খবরের কথা তিনি জানেন না। খোঁজ নিয়ে দেখবেন। পাশাপাশি তাঁর মন্তব্য, ‘‘গণতান্ত্রিক দলে এই ধরনের বিক্ষোভ স্বাভাবিক।’’
ভাঙচুর হয় মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর বিধানসভার বিজেপির কার্যালয়ও। দলের জেলা সভাপতি গোবিন্দ মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘টাকার বিনিময়ে টিকিট বিক্রি করা হয়েছে।’’ পুরাতন মালদহের সাহাপুর শিবমন্দির লাগোয়া বিজেপি পার্টি অফিসের সামনেও বিক্ষোভ হয়। বৃহস্পতিবার মালদহ জেলার ১২টি বিধানসভা আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। তারপরই জেলার বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয় দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভ।
পশ্চিম বর্ধমান জেলায় দুর্গাপুর-পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি-র প্রার্থী হিসেবে তৃণমূল থেকে আসা কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) দীপ্তাংশু চৌধুরীর নাম ঘোষণার পরেই বিক্ষোভ শুরু হয় বিজেপি কর্মীদের। দীপ্তাংশু ২০১১ সালে আসানসোল-দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি-র প্রার্থী ছিলেন। ২০১৪ সালে তৃণমূলে যোগ দেন। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বিজেপি-তে ফিরে আসেন। প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণার পরেই বিক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীরা দুর্গাপুরের বিদ্যাসাগর অ্যাভিনিউয়ের দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। তাঁদের ঘোষণা, দীপ্তাংশুকে প্রার্থী হিসেবে বহাল রাখা হলে নির্দল প্রার্থী দেওয়া হবে দুর্গাপুর-পূর্বে।
অন্যদিকে, পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেওয়া জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে বিজেপি প্রার্থী করায় ক্ষোভ জানান বিজেপি কর্মীদের একাংশ। রানিগঞ্জে বিজেপি কর্মীদের একাংশ বিক্ষোভ করে প্রথমে স্থানীয় বিজেপি কার্যালয়ে তালা মেরে দেন। পরে আবার সেই তালা খুলে দেওয়া হয়। বিজেপি-র প্রার্থী ডাক্তার বিজন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে, তা খুব তাড়াতাড়ি মিটে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy