প্রতীকী চিত্র।
রাতারাতি সব গুটিয়ে চলে আসতে হয়েছিল।
এক দিকে কনকনে অন্ধকার রাত। তার উপরে হাড় হিম করা হুমকি: আজ রাতের মধ্যে পাহাড় থেকে নেমে না গেলে আমাদের কোনও দায়িত্ব নেই। কারণ, পরদিন সকাল থেকে শুরু হচ্ছে অনির্দিষ্টকালের বন্ধ।
সেই রাতের কথা আজও ভুলতে পারেননি বেহালার অভিষেক ভট্টাচার্য। আবার ভুলতে পারেননি পাহাড়কেও। তাই চার বছর আগের সেই রক্তক্ষয়ী আন্দোলন, করোনার দাপটের পরেও ফিরে এসেছেন সেই দার্জিলিং, কালিম্পংয়ে।
সেই সময়ের কথা ভুলতে পারেননি দার্জিলিংয়ের এক হোটেল মালিকও। বলছিলেন, ‘‘আমার এই হোটেলটা তখনও চালু হয়নি। তাই রক্ষে। না হলে কী যে হত!’’ প্রবাসী বাঙালি সেই যুবকও মনে করেন, তার পর থেকে যে শান্তিটা পাহাড়ে নিজস্ব হিম হাওয়ার মতো রয়েছে, সেটাই প্রয়োজন। পাহাড়কে খেয়েপড়ে বাঁচতে গেলে সেটাই দরকারি।
এই শান্তি আর উন্নয়নের দাবিকে সামনে রেখেই ভোটে লড়ছেন বিনয় তামাং। ভুল হয়ে গেল। তিনি লড়ছেন না এ বারে। লড়ছে তাঁর দল, বিনয়পন্থী মোর্চা। দার্জিলিংয়ে নিজের দফতরে বসে তিনি তাই চাপমুক্ত হয়ে হাসতে হাসতে বলতে পারেন, ‘‘এর আগের বার ম্যাডাম বললেন, তুমি প্রার্থী হও। ঠিক ছিল, জিতলে বড় দায়িত্ব দেওয়া হবে। নিজে প্রার্থী বলে চাপে ছিলাম। এ বার সেই চাপ নেই। তাই দলের প্রার্থীদের জন্য মাথা ঠান্ডা করে প্রচার করতে পারছি।’’
যাঁর সঙ্গে বিনয়ের দ্বন্দ্ব সেই ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে, সেই বিমল গুরুংও এ বারে মমতার পক্ষে। তফাত শুধু, মোর্চার দুই অংশ পাহাড়ে নিজেদের মধ্যে লড়াই করছে। গুরুংকে পাওয়া অবশ্য গেছোদাদাকে পাওয়ার থেকেও কঠিন। রাত সাড়ে ন’টা পর্যন্ত ধাওয়া করেও, অপেক্ষা করেও তাঁর কাছে পৌঁছনো গেল না। তখনও তিনি তাকভর চা বাগানের কাছে ছোট গ্রাম বসতিতে সভা করছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া তাঁর এক সঙ্গীর ভিডিয়োয় দেখা গেল, ঘরভর্তি লোকজনের উচ্ছ্বাস।
কিন্তু ২০১৭ সালের স্মৃতি কি তাড়া করবে না গুরুংকে? এত জন মানুষের মৃত্যু কি ছাপ ফেলবে না তাঁর পাহাড়ি একাধিপত্যে? যে গুরুং ফেরার অবস্থায় সমর্থন জুগিয়ে জিতিয়ে দিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী নীরজ জিম্বাকে বা রাজু বিস্তাকে, তিনি প্রকাশ্যে এসেও কি একই রকম ক্ষমতাবান?
বিনয় বলছেন, ‘‘লুকিয়ে ছিল যখন, ক্ষমতার চুড়োয় ছিল। পাহাড়ের মানুষ ভাবত, আমাদের জন্য পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এখন তো সামনে এসে পড়েছে। সেই জোর আর নেই এখন।’’
তৃণমূল এবং মোর্চা সূত্রে খবর, বিনয় ও বিমলকে একজোট করার চেষ্টা করেছিলেন দলীয় নেতৃত্ব। কিন্তু কাজ হয়নি। ফলে পাহাড়ে ত্রিমুখী লড়াই। বহু দিন পরে এই প্রথম। মোর্চার ভোট দু’ভাগ হওয়ার আশঙ্কা। এই প্রথম। তা হলে কি বিজেপির সুবিধা হয়ে যাবে না?
গুরুংয়ের কালিম্পং আসনের প্রার্থী রাম বাহাদুর ভুজেল মনে করেন, ভোট ভাগ হবে ঠিকই। লড়াইও কঠিন। তবে বিজেপি শেষ পর্যন্ত জিতবে না। ভুজেলের ঘরে ঘরে প্রচার চলছে। সাড়া পাচ্ছেন বলেও জানালেন।
বিনয়ও বিজেপিকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে চাইছেন না। তাঁর কথায়, গেরুয়া দলের সংগঠন পাহাড়ে ততটা ভাল নয়। আর সঙ্ঘ? দুই মোর্চারই দাবি, কিছু ক্ষেত্রে আরএসএস প্রভাব বাড়ালেও সেটা বিজেপির জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ভোট জোগাড় করতে পারবে না। জিএনএলএফেরও শক্তি মোর্চার শক্তির সমতুল্য নয় বলেই পাহাড়ের একটা বড় অংশের দাবি। তাঁরা মনে করছেন, দুই জেলার তিন আসনের লড়াই হবে মূলত দুই মোর্চায়।
পাহাড়ের লোকজন বাজি ধরতে ভালবাসেন। তাঁদের বাজিতে এখন কালিম্পংয়ে এগিয়ে বিমল, কার্শিয়াংয়ে বিনয়। আর পাহাড়ের রাজনৈতিক ভরকেন্দ্র, বিনয় ও বিমলের খাসতালুক দার্জিলিং?
পাহাড়ের মানুষের ঠোঁটে হাল্কা হাসি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy