অডিয়ো ক্লিপ নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে দীনেশ ত্রিবেদী এবং শুভেন্দু অধিকারী ।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে নারদকাণ্ডের ফুটেজ সামনে এনেছিল বিজেপি। আর ২০২১ সালে নীলবাড়ির লড়াইয়ের আগে কয়েকটি ভাইরাল অডিয়ো ক্লিপ নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলল গেরুয়া শিবির। রবিবার ওই অডিয়ো ক্লিপ নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেওয়া শুভেন্দু অধিকারী এবং দীনেশ ত্রিবেদী। সঙ্গে ছিলেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় আইটি সেলের প্রধান তথা রাজ্যের সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য। শুভেন্দুর বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপোকে কেন্দ্র করে অনেকগুলি কথোপকথন সামনে এসেছে। ’’ এর ভিত্তিতে তাঁর অভিযোগ, ‘‘কয়লা এবং গোরু পাচারের প্রায় ৯০০ কোটি টাকা ভাইপোকে পাইয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের যুব নেতা বিনয় মিশ্র এবং তাঁর আত্মীয় তথা পুলিশ আধিকারিক অশোক মিশ্র।’’ তৃণমূল অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছে, গোটাটাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “গোটাটাই সাজানো চিত্রনাট্য।”
যে অডিয়ো ক্লিপগুলি নিয়ে বিজেপি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে অভিযোগ তুলেছে তা আনন্দবাজার ডিজিটালের হাতেও এসেছে। কিন্তু তার সত্যতা আনন্দবাজার ডিজিটাল যাচাই করেনি। ওই অডিয়ো ক্লিপে শোনা যাচ্ছে দুই ব্যক্তির মধ্যে কথোপকথন। বিজেপি-র দাবি ওই কথোপকথন এক সরকারি অফিসারের সঙ্গে কয়লা পাচার-কাণ্ডে অভিযুক্ত অনুপ মাঝি ওরফে লালার ঘনিষ্ঠ গণেশ বাগাড়িয়ার। এই দাবিও যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডিজিটাল।
কী রয়েছে ওই অডিয়ো ক্লিপে? সেখানে ‘অভিষেক’ নাম শোনা যাচ্ছে। বিজেপি-র দাবি, ওই ‘অভিষেক’ আসলে তৃণমূলের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে দাবি, ‘ম্যাডাম’ বলে যাঁর কথা বলা হচ্ছে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ছাড়াও রয়েছে ‘বিনয় মিশ্র’ নামের উল্লেখ। বিজেপি-র দাবি ইনিই যুব তৃণমূল নেতা বিনয়। মোট ৮টি অডিয়ো ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে।
বিজেপি-র দেওয়া অডিয়ো ক্লিপগুলোতে দুই কণ্ঠস্বরে যে সব কথাবার্তা রয়েছে তা এই রকম…
১। অভিষেক ও তাঁর ঘনিষ্ঠরা বিভিন্ন অবৈধ সূত্র অর্থ উপার্জন করেন।
২। আগে অভিষেকের কাছে কয়লা পাচার বাবদ মাসে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা যেত। গত দু’বছর সেটা মাসিক প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ কোটি টাকা হয়েছে। অবৈধ কয়লা ব্যবসায় প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক সুরক্ষা পেতে অনুপ মাঝির থেকে প্রতি মাসে এই টাকা নিয়ে অশোক মিশ্র দেন বিনয় মিশ্রকে। এর পরে বিনয় নিজের কাটমানি নিয়ে বাকিটা দেন অভিষেককে।
৩। বিনয় মিশ্র ২০১২-১৩ সাল থেকেই অভিষেকের হয়ে টাকার লেনদেন করে আসছেন। বিনয় মিশ্র হলেন আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে অভিষেকের প্রধান লোক।
৪। অভিষেকের নির্দেশে তাঁর লোকেরা যে কোনও বাড়িতে আগুন দিতে পারেন, যে কোনও দোকান বা কারখানায় লুঠ চালাতে পারেন, ভুয়ো অস্ত্র ও জালনোট মামলায় ফাঁসিয়ে দিতে পারেন। বারবার অভিযোগ করলেও পুলিশ আসবে না।
৫। দিদির পরিশ্রমের ফলে যে রাজনৈতিক উত্থান এসেছিল তা অভিষেকের অর্থলিপ্সার জন্য শূন্য হয়ে গিয়েছে। ওঁর লক্ষ্য শুধু অর্থ উপার্জন। সরকার পরিচালনা বা রাজনীতি নয়, ওঁরা শুধু তোলাবাজিতে যুক্ত।
৬। অভিষেক এবং তাঁর বিভিন্ন কাজকর্ম নিয়ে ম্যাডাম ধৃতরাষ্ট্র হয়ে আছেন। আর সেই কারণেই প্রবীণ নেতারা দল ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁরা কোনও সম্মান পাচ্ছিলেন না।
৭। দিদি আগে প্রশান্ত কিশোরকে নিয়ে কাজ করতে চাননি। কিন্তু পরে হেরে যাওয়ার ভয়ে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য তিনি রাজি হয়ে যান।
৮। রাজারহাটের মতো যেখানে যেখানে নতুন নির্মাণ চলছে সেখানে সক্রিয় সিন্ডিকেট। তৃণমূল কর্মীরা নিম্ন মানের সামগ্রীর বিনিময়ে সাধারণ মানুষের থেকে টাকা তোলেন।
রবিবারের সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপি ওই অডিয়ো ক্লিপের কথা উল্লেখ করে দাবি করে, কয়লা-গরু-বালি পাচার থেকে ৯০০ কোটি টাকা তুলেছেন অভিষেক। একই সঙ্গে দাবি করা হয় সবটাই জানতেন মমতা। রবিবার সকালেই ইডি কয়লা পাচার কাণ্ডে বাঁকুড়া থানার আইসি অশোক মিশ্রকে গ্রেফতার করেছে। তিনি বিনয় মিশ্রের ঘনিষ্ঠ বলেও জানা গিয়েছে। রবিবার শুভেন্দু বলেন, ‘‘এই অশোক মিশ্রই পুলিশের এসকর্ট দিয়ে ভাইপোর শান্তিনিকেতনে (অভিষেকের কলকাতার বাড়ি) টাকা পৌঁছে দিত।’’ একই সঙ্গে দাবি করা হয়েছে, গোটা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারই দুর্নীতির পাঁকে ডুবে রয়েছে। এটি রাজ্যের বৃহত্তম কেলেঙ্কারি দাবি করে দীনেশ বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত আমরা যা জেনেছি সেটা হিমশৈলের চূড়া মাত্র।’’ একই সঙ্গে এই ‘দুর্নীতি’ নিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থা যাতে তদন্তে গতি আনে সেই দাবিও তুলেছে বিজেপি।
তৃণমূলের দাবি, বিজেপি বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে রাজনৈতিক সুবিধা পেতে এই সব বলছে। দলের মুখপাত্র তাপস রায় বলেন, ‘‘শুধু পশ্চিমবঙ্গই নয়, গোটা দেশেই নির্বাচনের সময় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে টার্গেট করে সক্রিয় হয়ে ওঠে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি। সঙ্গে চলে এই ধরণের প্রচার। ভোটপর্ব মিটে গেলে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির এই তৎপরতা থাকবে তো! আমরা সে সব দিকেও নজর রাখব।’’ একই সঙ্গে শুভেন্দুকে আক্রমণ করে তাপস বলেন, ‘‘যিনি এই অভিযোগ করছেন তাঁদের পুরো পরিবার গত ২০ বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি নিয়ে রাজনীতি করেছেন। নানা সময়ে বিধায়ক, সাংসদ, কেন্দ্র বা রাজ্যের মন্ত্রী, পুরসভার চেয়ারম্যান হয়েছেন। যাঁরা এ সব নিয়েছেন তাঁদের মুখে এমন কথা মানায় না।’’
তৃণমূলের আর এক মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এই অডিয়ো ক্লিপকে সরাসরি সাজানো বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘এ সব নির্বাচনের আসল ইস্যু থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। এই অডিয়ো ক্লিপ সাজানো চিত্রনাট্য। কেউ সত্যতা যাচাই করেনি। সেটা যতক্ষণ না জানা যাচ্ছে, এর আগে পরে কী কথা হয়েছে, কে কাকে দিল এ সব জানা দরকার। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি-র পথের কাঁটা। তাই এ সব করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy