শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় ও পায়েল সরকার। নিজস্ব চিত্র।
বেহালা পূর্ব ও বেহালা পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি-র প্রার্থী হয়েছেন টলিউডের দুই প্রথমসারির নায়িকা শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় ও পায়েল সরকার। সাংগঠনিক ভাবে দক্ষিণ কলকাতার এই প্রান্তে বিজেপি অনেকটাই দুর্বল। এমন তৃণমূল দুর্গে জয় ছিনিয়ে আনতে দুই বেহালার চিত্রনাট্যে নায়িকাদ্বয় সিপিএমের ভোটব্যাঙ্ককেই ‘ভাই’য়ের ভূমিকায় চাইছেন।
চিত্রনাট্যে তাঁদের এমন দাবির যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলেই মনে করছেন ভোট রাজনীতির কারবারিরা। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে দক্ষিণ কলকাতা লোকসভার অন্তর্গত দুই বেহালা থেকেই ভাল ব্যবধানে এগিয়েছিলেন সাংসদ মালা রায়। বেহালা পূর্ব থেকে ১৫,৮৫৮ ও বেহালা পশ্চিম থেকে ১৬,১৬৫ ভোটে এগিয়েছিল তৃণমূল। এ বারের ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে গেরুয়া শিবিরের চোখে পড়েছে বাম ভোটবাক্সে। লোকসভা নির্বাচনে এই দুই বিধানসভা কেন্দ্রে সিপিএম ভাল ভোট পাওয়ায় তৃণমূলের জয় মসৃণ হয়েছিল। তাই বামভোটের অভিমুখ পদ্ম শিবিরের দিকে না ঘোরাতে পারলে শ্রাবন্তী ও পায়েলের জয় অধরাই থেকে যাবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
লোকসভায় পূর্ব ও পশ্চিম বেহালায় সিপিএম প্রার্থী পেয়েছিলেন যথাক্রমে ৩২,৭৯২ ও ৩৯,৮৩৬ ভোট পেয়েছিলেন। ভোট রাজনীতির অঙ্কে বিজেপি প্রার্থীরা বামফ্রন্টের এই ভোট নিজেদের দিকে টানতে পারলেই জয় সম্ভব হবে বলে মনে করছে গেরুয়া শিবির। তাই ভোটের ঘুঁটি সাজাতে বসে শ্রাবন্তী ও পায়েলকে নজর দিতে হচ্ছে সিপিএমের ভোটবাক্সে। বেহালা পশ্চিমে শ্রাবন্তীর প্রতিদ্বন্দ্বী রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ২০০১ সাল থেকে ধারাবাহিক ভাবে চারবার এই আসন থেকে বিধায়ক তিনি। আবার পূর্ব বেহালায় আবার তৃণমূল প্রার্থী হয়েছেন রত্না চট্টোপাধ্যায়। সদ্য বিজেপি ত্যাগী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী নিজের ও পার্থবাবুর জয় প্রসঙ্গে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। তাঁর কথায়, ‘‘প্রচারেই তো বিজেপি এখানে কোনও লোক খুঁজে পাচ্ছে না। ওরা নামজাদা নায়িকাদের প্রার্থী করেছে ঠিকই। কিন্তু প্রচারে তো ওদের কিছুই দেখা যাচ্ছে না, তা হলে ভোট করাবে কারা?’’
রত্নাদেবীর এমন বক্তব্যের পিছনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। বেহালার বিজেপি-র দুই খ্যাতনামী প্রার্থী প্রচারের ক্ষেত্রে বামফ্রন্টের চেয়েও পিছিয়ে। দেওয়াল লিখন থেকে শুরু করে প্রচারের ফ্লেক্স, ব্যানার, হোডিংয়ের ক্ষেত্রে তৃণমূল ও সিপিএমের তুলনায় বেহালার দু’টি আসনে বিজেপি অনেকটাই ম্লান। তাই সেই দুর্বলতা ঢাকতে ভোটের রণকৌশল সাজাতে বসে কোথায় কোথায় সিপিএম তথা বামেদের ভোটব্যাঙ্ক অবশিষ্ট রয়েছে সে বিষয়ে খোঁজ করছেন নায়িকারা। বেহালা পূর্বের ১২২, ১২৩, ১২৪, ১৪২, ১৪৩ ও ১৪৪ নম্বর ওয়ার্ডে এখনও সিপিএমের ভোট রয়েছে। আবার বেহালা পশ্চিমের ১২৭ ও ১২৮ নম্বর ওয়ার্ডে এখনও সিপিএমের কাউন্সিলরাই এলাকার দায়িত্বে। ১২৭ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান সিপিএম কাউন্সিলর তথা কো-অর্ডিনেটর নীহার ভক্তই বেহালা পশ্চিমে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী হয়েছেন। তাই শ্রাবন্তীর কাছে সিপিএমের ভোট নিজের দিকে টানা যে বেশ কঠিন হবে, তা মেনে নিচ্ছেন বেহালা পশ্চিমের বিজেপি-র নেতা-কর্মীরাই।
সূত্রের খবর, সিপিএমের ভোট টানতে দুই চিত্রতারকা প্রার্থীকেই সিপিএম অধ্যুষিত এলাকায় বেশি করে প্রচারে আনা হচ্ছে। সাধারণ ভোটারা যাতে প্রার্থীদের সঙ্গে বেশি করে মিলিত হতে পারেন সে বিষয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে। প্রসঙ্গত, বেহালা পূর্ব ও পশ্চিম কেন্দ্রে সংখ্যালঘু ভোট ৫ শতাংশেরও কম, হিন্দু ভোটারই সংখ্যাগরিষ্ঠ। যে সমস্ত বুথে সিপিএমের ভোট বেশি, সেই সমস্ত এলাকায় বাম-কংগ্রেস জোটে আব্বাস সিদ্দিকির উপস্থিতির কথা প্রচার করা হবে। বিজেপি-র জেলা সভাপতি শঙ্কর শিকদার বলেন, ‘‘সিপিএম নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সংযুক্ত মোর্চার নামে আব্বাস সিদ্দিকির মতো একজন মানুষের সঙ্গী হতে হয়েছে। সেই পার্টির নাম নাকি সেকুলার ফ্রন্ট। তাই আমার মনে হয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ ছাড়া আর কেউ সিপিএম প্রার্থীদের ভোট দেবে না। আব্বাসের সঙ্গে সিপিএম-কংগ্রেস জোটের কথা আমরা প্রচারে জোরালো ভাবে বলছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy