Advertisement
E-Paper

Bengal Polls 2021: ‘ভাল হবে, আমি যদি এখানেই মরে যাই?’

লোকে ভাবে, তারকা প্রার্থী প্রাণের পরে চলে যাবেন! ঢেউয়ের মতো ভেসে যাবেন। কিন্তু এলাকাবাসীর রোজনামচায় তাঁকে পাওয়া যাবে কি

পাশে: পুলিশে অভিযোগের জেরে ফেরার এক দলীয় কর্মীর মাকে সান্ত্বনা শ্রাবন্তীর।

পাশে: পুলিশে অভিযোগের জেরে ফেরার এক দলীয় কর্মীর মাকে সান্ত্বনা শ্রাবন্তীর। নিজস্ব চিত্র।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২১ ০৬:৫৪
Share
Save

তাঁর সিনেমার ইউনিটের লোকজন হলে হয়তো অতটা অবাক হতেন না! কিন্তু আনন্দনগরে স্থানীয় মণ্ডল নেতা কাঁচুমাচু মুখে ঘুরছেন।

“শ্রাবন্তী কি আদৌ আসবে আজ? সত্যি করে বল, পৃথ্বীশ!”, গলার ঝাঁঝ চড়ছে এ তল্লাটের বয়স্ক কর্মীদের। নায়িকার ব্যক্তিগত সহকারীদের কাছে বার বার ফোন যাচ্ছে। ইএম বাইপাস লাগোয়া আবাসন চত্বর থেকে তাঁদের আশ্বাস , “ম্যাডাম এই বেরোলেন বলে...!” বিজেপি-র মণ্ডলের সাধারণ সম্পাদক পৃথ্বীশ পয়রা অগত্যা কর্মীদের বোঝান, “সেলিব্রিটি প্রার্থী, একটু মানিয়ে নিতে হয়! তা ছাড়া উনি কী আর শুধু বেহালা পশ্চিম নিয়ে পড়ে! কাল, বান্দোয়ান তো আজ নন্দীগ্রাম ঘুরপাক চলছেই!”

তবে টালিগঞ্জে শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়ের ছবির পরিচালক থেকে স্পটবয় সকলেই জানেন, দেরিতে এলেও পেশাদারিত্বে তাঁর খামতি নেই। প্রচার শুরুর কথা ছিল সকাল আটটায়। ঠিক আড়াই ঘণ্টা বাদে ঢাউস এসইউভি থামল ঠাকুরপুকুরের অপরিসর গলিতে। হাল্কা নাক টেনে শ্রাবন্তী বলছেন, “শরীরটা ভাল নেই। কিন্তু মহিলা মোর্চা থেকে যুব সকলেই বেরিয়েছে! আমি কী করে ঘরে থাকি বলুন!”

বেহালার ঘিঞ্জি গলির ধুলো তাই মিশছে টলি-নায়িকার ঢলঢলে লুটনো পালাজোয়। গ্রীষ্ম দিনে রঙিন ফুরফুরে পোশাকে হিল্লোল তুলে শ্রাবন্তী এগোচ্ছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রহরায়। তবু ভোটপ্রচার যে শুটিং নয়, সেটাও বিলক্ষণ মালুম হচ্ছে বই কী! এক বিকেলে আনন্দনগরের ১২৬ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থীর রুট নিয়েই মন কষাকষি। মনঃক্ষুণ্ণ এলাকার আদি বিজেপি অশীতিপর পুলিন হালদার। “সারা দুপুর না-খেয়ে যে রাস্তায় পতাকা সাজালাম, সে-দিকেরই দেখি ছায়া মাড়াল না! ক্ষুদিরাম পল্লিটা এক বার কভার করলেই লিড আসত!” ভোটের চতুর্থ দফার প্রাক্কালে তুঙ্গে উৎকণ্ঠা।

লোকে ভাবে, তারকা প্রার্থী প্রাণের পরে চলে যাবেন! ঢেউয়ের মতো ভেসে যাবেন। কিন্তু এলাকাবাসীর রোজনামচায় তাঁকে পাওয়া যাবে কি? এই মিথ ভাঙাতেই নায়িকাকে পাড়ায় পাড়ায় হাঁটিয়ে ঘোরানোর ছক কষেছিল বিজেপি। কিন্তু সেখানেও শুধু সাধারণ ভোটার নয়, নিজেদের কর্মীদেরও চাঙ্গা করতে হচ্ছে।

২০১৯-এর জানুয়ারিতে বাছারপাড়ায় জনৈক তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনায় এখনও বেশ কয়েক জন বিজেপি কর্মী ঘরছাড়া। কয়েক জন জেলও খাটছেন। খোদ মণ্ডল সভাপতি সঞ্জীব পালই এলাকায় ঢোকেন না। এমন পাড়ায় জনসংযোগে বেরিয়ে নায়িকা-প্রার্থীকে ঘরছাড়া কর্মীদের বাড়ি বাড়ি ঘুরতে হয়। কালীতলায় জেলবন্দি বিধান হালদারের স্ত্রী, দুই কচি ছেলেমেয়ের তরুণী মাকে জড়িয়ে শ্রাবন্তী বলেন, “ভেঙে পড়লে চলবে? আমাদের মায়েদের কত কী সহ্য করতে হয়!” আর এক ফেরার বিজেপি নেতা অ্যাপ-ক্যাব চালক গোবিন্দ বিশ্বাসের পরিবারও ঘোর সঙ্কটে। গাড়িটা পড়ে আছে। ঘাড়ে ঋণের কিস্তি। গোবিন্দবাবুর মা ঝরঝরিয়ে কেঁদে ফেলতেও তাঁকে জাপটে ধরেন শ্রাবন্তী। “আমরা ক্ষমতায় এলেই সব ঠিক হবে!”

নিজস্বী বা সই পাগলদের নিরন্তর হামলা, নিরাপত্তার ঝকমারি আর বিজেপি কর্মীদের গেল-গেলর মধ্যে হাঁটতে হাঁটতেই শ্রাবন্তী ডগোমগো ভাবে বলেন, নরেন্দ্র মোদীর কথা! “ওঁকে দেখেই তো বিজেপি হয়েছি!” সদ্য তরুণপুত্রের কথাতেও চোখমুখে আলোর ঝিলিক। ‘‘মাকে ব্যাকএন্ডে দারুণ সাপোর্ট দিচ্ছে ছেলেটা।”

আর এই যে ব্যক্তিজীবন নিয়ে নিরন্তর কদর্য ট্রোলিং? শ্রাবন্তী হাসেন, “হার মানব না! আমরা মেয়েরাও মা দুর্গার রূপ!” দেড় ঘণ্টা হণ্টন শেষেও কার্যকর্তারা দুশ্চিন্তায়! “একটু চা চলবে দিদি, আরও অনেকটা বাকি!” রোদে টকটকে মুখেও নায়িকার ভুবনভোলানো হাসি “ভাল হবে, আমি যদি এখানেই মরে যাই?”

ফিরতিপথে জনৈক দোকানদারের আফশোস, না-হাঁটিয়ে একটা রিকশায় বসালেই বরং ভাল দেখা যেত! ছবি তুলে দিগ্বিজয়ী স্কুলবালিকা সারিকা সর্দার, সন্ধ্যা ধাড়া, শ্রেয়া, বৃষ্টিদের কলকলানি, “পার্টি বুঝি না, শ্রাবন্তীদি কী-ইই ভাল! আর মাখনের মতো রং!”

ভোট পরের কথা! শাসক দলের জাঁদরেল মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিদ্বন্দ্বীকে হাঁ করে দেখছে বেহালা।

তাঁর সিনেমার ইউনিটের লোকজন হলে হয়তো অতটা অবাক হতেন না! কিন্তু আনন্দনগরে স্থানীয় মণ্ডল নেতা কাঁচুমাচু মুখে ঘুরছেন।

“শ্রাবন্তী কি আদৌ আসবে আজ? সত্যি করে বল, পৃথ্বীশ!”, গলার ঝাঁঝ চড়ছে এ তল্লাটের বয়স্ক কর্মীদের। নায়িকার ব্যক্তিগত সহকারীদের কাছে বার বার ফোন যাচ্ছে। ইএম বাইপাস লাগোয়া আবাসন চত্বর থেকে তাঁদের আশ্বাস , “ম্যাডাম এই বেরোলেন বলে...!” বিজেপি-র মণ্ডলের সাধারণ সম্পাদক পৃথ্বীশ পয়রা অগত্যা কর্মীদের বোঝান, “সেলিব্রিটি প্রার্থী, একটু মানিয়ে নিতে হয়! তা ছাড়া উনি কী আর শুধু বেহালা পশ্চিম নিয়ে পড়ে! কাল, বান্দোয়ান তো আজ নন্দীগ্রাম ঘুরপাক চলছেই!”

তবে টালিগঞ্জে শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়ের ছবির পরিচালক থেকে স্পটবয় সকলেই জানেন, দেরিতে এলেও পেশাদারিত্বে তাঁর খামতি নেই। প্রচার শুরুর কথা ছিল সকাল আটটায়। ঠিক আড়াই ঘণ্টা বাদে ঢাউস এসইউভি থামল ঠাকুরপুকুরের অপরিসর গলিতে। হাল্কা নাক টেনে শ্রাবন্তী বলছেন, “শরীরটা ভাল নেই। কিন্তু মহিলা মোর্চা থেকে যুব সকলেই বেরিয়েছে! আমি কী করে ঘরে থাকি বলুন!”

বেহালার ঘিঞ্জি গলির ধুলো তাই মিশছে টলি-নায়িকার ঢলঢলে লুটনো পালাজোয়। গ্রীষ্ম দিনে রঙিন ফুরফুরে পোশাকে হিল্লোল তুলে শ্রাবন্তী এগোচ্ছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রহরায়। তবু ভোটপ্রচার যে শুটিং নয়, সেটাও বিলক্ষণ মালুম হচ্ছে বই কী! এক বিকেলে আনন্দনগরের ১২৬ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থীর রুট নিয়েই মন কষাকষি। মনঃক্ষুণ্ণ এলাকার আদি বিজেপি অশীতিপর পুলিন হালদার। “সারা দুপুর না-খেয়ে যে রাস্তায় পতাকা সাজালাম, সে-দিকেরই দেখি ছায়া মাড়াল না! ক্ষুদিরাম পল্লিটা এক বার কভার করলেই লিড আসত!” ভোটের চতুর্থ দফার প্রাক্কালে তুঙ্গে উৎকণ্ঠা।

লোকে ভাবে, তারকা প্রার্থী প্রাণের পরে চলে যাবেন! ঢেউয়ের মতো ভেসে যাবেন। কিন্তু এলাকাবাসীর রোজনামচায় তাঁকে পাওয়া যাবে কি? এই মিথ ভাঙাতেই নায়িকাকে পাড়ায় পাড়ায় হাঁটিয়ে ঘোরানোর ছক কষেছিল বিজেপি। কিন্তু সেখানেও শুধু সাধারণ ভোটার নয়, নিজেদের কর্মীদেরও চাঙ্গা করতে হচ্ছে।

২০১৯-এর জানুয়ারিতে বাছারপাড়ায় জনৈক তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনায় এখনও বেশ কয়েক জন বিজেপি কর্মী ঘরছাড়া। কয়েক জন জেলও খাটছেন। খোদ মণ্ডল সভাপতি সঞ্জীব পালই এলাকায় ঢোকেন না। এমন পাড়ায় জনসংযোগে বেরিয়ে নায়িকা-প্রার্থীকে ঘরছাড়া কর্মীদের বাড়ি বাড়ি ঘুরতে হয়। কালীতলায় জেলবন্দি বিধান হালদারের স্ত্রী, দুই কচি ছেলেমেয়ের তরুণী মাকে জড়িয়ে শ্রাবন্তী বলেন, “ভেঙে পড়লে চলবে? আমাদের মায়েদের কত কী সহ্য করতে হয়!” আর এক ফেরার বিজেপি নেতা অ্যাপ-ক্যাব চালক গোবিন্দ বিশ্বাসের পরিবারও ঘোর সঙ্কটে। গাড়িটা পড়ে আছে। ঘাড়ে ঋণের কিস্তি। গোবিন্দবাবুর মা ঝরঝরিয়ে কেঁদে ফেলতেও তাঁকে জাপটে ধরেন শ্রাবন্তী। “আমরা ক্ষমতায় এলেই সব ঠিক হবে!”

নিজস্বী বা সই পাগলদের নিরন্তর হামলা, নিরাপত্তার ঝকমারি আর বিজেপি কর্মীদের গেল-গেলর মধ্যে হাঁটতে হাঁটতেই শ্রাবন্তী ডগোমগো ভাবে বলেন, নরেন্দ্র মোদীর কথা! “ওঁকে দেখেই তো বিজেপি হয়েছি!” সদ্য তরুণপুত্রের কথাতেও চোখমুখে আলোর ঝিলিক। ‘‘মাকে ব্যাকএন্ডে দারুণ সাপোর্ট দিচ্ছে ছেলেটা।”

আর এই যে ব্যক্তিজীবন নিয়ে নিরন্তর কদর্য ট্রোলিং? শ্রাবন্তী হাসেন, “হার মানব না! আমরা মেয়েরাও মা দুর্গার রূপ!” দেড় ঘণ্টাটাক হণ্টন শেষেও কার্যকর্তারা দুশ্চিন্তায়! “একটু চা চলবে দিদি, আরও অনেকটা বাকি!” রোদে টকটকে মুখেও নায়িকার ভুবনভোলানো হাসি “ভাল হবে, আমি যদি এখানেই মরে যাই?”

ফিরতিপথে জনৈক দোকানদারের আফশোস, না-হাঁটিয়ে একটা রিকশায় বসালেই বরং ভাল দেখা যেত! ছবি তুলে দিগ্বিজয়ী স্কুলবালিকা সারিকা সর্দার, সন্ধ্যা ধাড়া, শ্রেয়া, বৃষ্টিদের কলকলানি, “পার্টি বুঝি না, শ্রাবন্তীদি কী-ইই ভাল! আর মাখনের মতো রং!”

ভোট পরের কথা! শাসক দলের জাঁদরেল মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিদ্বন্দ্বীকে হাঁ করে দেখছে বেহালা।

BJP Srabanti Chatterjee West Bengal Assembly Election 2021

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।