প্রতীকী ছবি।
দীর্ঘ আট দফায় ভোটের পরে এ বার ফল ঘোষণার পালা। রাজ্যের ২৯২টি বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটের ফল গণনা হবে আজ, রবিবার। করোনায় প্রার্থীদের মৃত্যুতে মুর্শিদাবাদ জেলার দু’টি আসনে ভোট পিছিয়ে গিয়েছে। রাজ্য জুড়ে আজ সকাল ৮টা থেকে গণনা শুরু হবে, বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ফলের প্রবণতাও স্পষ্ট হতে শুরু করবে।
তবে কোভিড-বিধি মেনে গণনার কারণেই এ বার অন্য বারের চেয়ে সময় বেশি লাগতে পারে। সাম্প্রতিক কালে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বিহারের ভোট হওয়ার পরে সেখানে পূর্ণাঙ্গ ফলপ্রকাশ হতে গোটা দিন পেরিয়ে গিয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে আজও বেশি রাত পর্যন্ত গণনা চলতে পারে ধরে নিয়ে প্রস্তুতি রাখছে সব রাজনৈতিক দলই।
প্রত্যাবর্তন ঘটিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয় বারের জন্য রাজ্যে সরকার গঠন করবেন, নাকি ‘আসল পরিবর্তন’-এর ডাক দিয়ে বিজেপি বাজিমাত করবে— গোটা দেশের নজর আজ থাকবে সে দিকেই। বুথ-ফেরত সমীক্ষার সিংহভাগই অবশ্য তৃণমূলের প্রত্যাবর্তনের পক্ষেই ইঙ্গিত দিয়েছে। কয়েকটি সমীক্ষা আবার বিজেপির সরকার গড়ার আভাসও দিয়েছে। তবে প্রায় সব সমীক্ষাতেই যুযুধান দু’পক্ষের ভোটপ্রাপ্তির হিসেব তুল্যমূল্য হওয়ার ইঙ্গিত আছে। তাই লড়াই এ বার হাড্ডাহাড্ডি বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির।
সারা রাজ্যের ফলের পাশাপাশিই আলাদা করে নজর থাকবে নন্দীগ্রামের দিকে। এ বারের ভোটে রাজ্যে সব চেয়ে আলোচিত কেন্দ্র নন্দীগ্রামই। তাঁর পুরনো কেন্দ্র ভবানীপুর ছেড়ে সেখানে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা, বিপরীতে আছেন ভোটের আগে দল ও মন্ত্রিত্ব ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া শুভেন্দু অধিকারী। যিনি নন্দীগ্রামে তাঁর প্রাক্তন দলনেত্রীকে না হারাতে পারলে রাজনীতি পর্যন্ত ছেড়ে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে রেখেছেন! পাঁচ বছর আগে নন্দীগ্রাম থেকেই প্রায় ৮০ হাজার ভোটে জিতেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী শুভেন্দু। এ বার সেই আসনে জয়ী যে পক্ষই হোক, ব্যবধান তার চেয়ে কম থাকবে বলেই রাজনৈতিক শিবিরের ধারণা। নন্দীগ্রামেই এ বার ভোটের দিন বয়ালের একটি বুথে ভোটারদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ পেয়ে সেখানে পৌঁছে ঘণ্টাদুয়েক নজিরবিহীন ভাবে বুথেই বসে ছিলেন তৃণমূল প্রার্থী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তাঁর নিজের ও দলের জয়ের ব্যাপারে তিনি অবশ্য আত্মবিশ্বাসী। কালীঘাটে বসেই আজ তাঁর গণনা প্রক্রিয়ার উপরে নজর রাখার কথা।
গত লোকসভা ভোটে ১৮টি আসন জেতার পরে এ বার রাজ্যের ক্ষমতা দখলের জন্য মরিয়া হয়ে ঝাঁপিয়েছে বিজেপিও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রথম পাঁচ দফা পর্যন্ত প্রতি ভোটের দিন রাজ্যে এসে একাধিক সভা করেছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নড্ডা অজস্র রোড-শো ও সভায় অংশগ্রহণ করেছেন। একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং ভিন্ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও অন্য মন্ত্রীদের বিজেপির প্রচারে ঘুরে বেড়াতে দেখা গিয়েছে। কোনও একটি রাজ্যের ভোটে প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রের শাসক দলের এমন সর্বাত্মক ঝাঁপিয়ে পড়া কার্যত নজিরবিহীন। এখন বাংলার ফলের উপরে তাই অদূর ভবিষ্যতে মোদী-শাহদের রাজনৈতিক গতিপথও অনেকটা নির্ভর করছে।
তৃণমূল এবং বিজেপির বাইরে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে ময়দানে আছে বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং আব্বাস সিদ্দিকীর আইএসএফ-কে নিয়ে নবগঠিত সংযুক্ত মোর্চা। দু’বছর আগে লোকসভা ভোটে রাজ্যে একটি আসনও পায়নি বামেরা, কংগ্রেস জিতেছিল দু’টিতে। বামেদের ভোট নেমে এসেছিল ৭%-এ এবং ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের প্রাপ্ত ভোট থেকে অনেকটাই বেরিয়ে চলে গিয়েছিল বিজেপির ঝুলিতে। যার জেরে তৃণমূলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঠে এসেছিল বিজেপিই। এ বার এক ঝাঁক তরুণ মুখকে ময়দানে নামিয়ে বিধানসভা ভোটে লড়ছে সিপিএম, তাদের প্রচারেও ভাল সাড়া দেখা গিয়েছে। তার সঙ্গেই যোগ হয়েছে আব্বাসের আইএসএফের সঙ্গে জোট। মূলত দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া ও হুগলির সংখ্যালঘু মানুষের উপরে আইএসএফ কতটা প্রভাব ফেলতে পারবে, সে দিকেই নজর রয়েছে রাজনৈতিক শিবিরের। ভাঙড়, ক্যানিং পূর্ব, মগরাহাট পশ্চিম, আমডাঙা, বাদুড়িয়া, হাড়োয়ার মতো আসনে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়েছে আইএসএফ। শেষ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে নিয়ে সংযুক্ত মোর্চা কেমন ভোট পায়, তার প্রভাব সার্বিক ফলাফলের উপরেও পড়তে পারে। সেই কারণেই মোর্চার পারফরম্যান্সের দিকে চোখ রয়েছে তৃণমূল ও বিজেপির দু’পক্ষেরই। বিশেষত ভোটের পাটিগণিত অনুযায়ী, বামেরা তাদের ভোট এ বার খানিকটা ফেরাতে পারলেও বিজেপির অসুবিধাই বেশি হওয়ার কথা।
প্রবল রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যেই এ বার ছিল করোনা বিতর্ক। অতিমারী পরিস্থিতির মধ্যেও আট দফায় ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচন কমিশন সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে, এই প্রশ্নে সরব তৃণমূলের পাশাপাশি বাম ও কংগ্রেসও। সংক্রমিত হয়েছেন একের পর এক প্রার্থী, মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। করোনা বাড়তে থাকলেও মোদী, শাহেরা বিপুল ভিড় নিয়ে প্রচার চালিয়ে গিয়েছেন। একেবারে শেষ লগ্নে প্রচার বন্ধে কিছু কড়াকড়ি করেছিল কমিশন, কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে বলেই অ-বিজেপি সব দলের মত। আদালতেও এই সব কারণে নিয়মিত ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়েছে কমিশনকে। এই পরিস্থিতিতে নির্বিঘ্নে ফলপ্রকাশ কমিশনের সামনেও বড় পরীক্ষা।
পরিস্থিতি যেমনই থাক, আজ শেষ পর্যন্ত গণনা-কেন্দ্র আঁকড়ে থাকার জন্য দলের কর্মী-এজেন্টদের নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। একই পরামর্শ দিয়েছে বিজেপি ও সংযুক্ত মোর্চাও। শান্তিপূর্ণ ভাবে গণনায় অংশ নেওয়ার জন্য দলের কর্মীদের বার্তা দেওয়ার পাশাপাশিই বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের দাবি, ‘‘বাংলায় নতুন সরকার আসছে। সরকার বদলের পরে বোমা-গুলির আওয়াজও থেমে যাবে।’’ তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘কোনও গুজবে কারও কান দেওয়ার প্রয়োজন নেই। বাংলার শান্তি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বেই পর্যাপ্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফের সরকার গঠিত হবে।’’ মে দিবসে করোনা সচেতনতার প্রচার এবং মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার বিলির কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর বার্তা, ‘‘ভোটের ফলাফল যা-ই হোক, এই সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সকলকেই তৎপর থাকতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy