Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Arjun Singh

WB election: ঘরে বসে ‘কন্ট্রোলে’ অর্জুন, দৌড়লেন রাজ

বাইরে প্রহরীদের ঝাঁক দেখলে শুধু মালুম হয়, ভিতরে ভিআইপি কেউ আছেন।

ব্যারাকপুরের ভোটে তৃণমূল প্রার্থী রাজ চক্রবর্তী (বাঁ দিকে)। খোশমেজাজে বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহ। বৃহস্পতিবার।

ব্যারাকপুরের ভোটে তৃণমূল প্রার্থী রাজ চক্রবর্তী (বাঁ দিকে)। খোশমেজাজে বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহ। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

সন্দীপন চক্রবর্তী
ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২১ ০৬:২৭
Share: Save:

এক হাতে ফোন, অন্য হাতে চায়ের কাপ। সোফায় পাশে রাখা একটা ফোন, সামনের টি-টেবিলে আরও একটা। আরও একটা ফোন আলগোছে ফেলা আছে কোলের উপরে! কানে গোঁজা ইয়ারফোন।

কাঁকিনাড়ার আর্য সমাজ রোডের ধারে সরু গলির ভিতরে একটা সাদামাঠা বাড়ির এক তলার ছোট্ট ঘরে তাঁর ট্রেড মার্ক সাদা শার্ট-ট্রাউজ়ার্সে শান্ত হয়ে বসে ব্যারাকপুরের সাংসদ। ঘরে দ্বিতীয় লোক নেই, নিদেনপক্ষে একটা টিভিও নেই! বাইরে প্রহরীদের ঝাঁক দেখলে শুধু মালুম হয়, ভিতরে ভিআইপি কেউ আছেন।

বিধানসভা ভোটের দিন এই ছোট্ট ঘরে একা অর্জুন সিংহ? ভোটের দিন যিনি দৌড়ে বেড়ান, বিপক্ষকে দৌড় করান এবং প্রশাসনও সঙ্গে দৌড়য়! এই তো গত লোকসভা ভোটের দিন অশান্তিতে জড়িয়ে মাথা ফেটেছিল তাঁর। এই ‘খেলা হবে’র বাজারে সেই অর্জুনের রথের চাকা কি বসে গেল? আগন্তুকের কথায় নিজের পিছনে রাখা রামের বড় ছবিটা দেখালেন ভাটপাড়ার দোর্দণ্ডপ্রতাপ বিজেপি নেতা। চায়ে তৃপ্তির চুমুক দিয়ে সহাস্য উত্তর, ‘‘আমার তো সব জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর নিয়ম নেই। এই ভাটপাড়া বিধানসভায় ঘোরার জন্য পাস আছে। কিন্তু রাম ভরসা, যাচ্ছি না কোথাও। অনেক দিন তো দৌড়োদৌড়ি করলাম, এ বার বাকিরা শিখে নিক ভোট করানো!’’

ভোটের নিয়ম মেনে চলার কথা বলছেন কি না অর্জুন! তা হলে কি শিল্পাঞ্চলের ভোট এ বার ‘নিরামিষ’? হাসছেন সাংসদ, ‘‘এখন যে দলটা করি, সেখানে বেশির ভাগ লোকই নিরামিষ পছন্দ করে! তা-ই চলুক না!’’ হাতে তুলে দেখালেন একটা স্মার্টফোন। ব্যারাকপুর লোকসভা এলাকার মধ্যে সাতটা বিধানসভা কেন্দ্রের মোট ১৫৪৭টা বুথের চত্বর থেকে দলের ‘বুথ প্রমুখ’রা ‘লাইভ ফিড’ দিচ্ছেন স্মার্টফোন মারফত। দরকার হলে সেখান থেকেই নিয়ে কোনও ক্লিপিং অভিযোগের সঙ্গে কমিশনে পাঠাচ্ছেন সাংসদ। ‘‘এই আমার কন্ট্রোল রুম। কোথাও যাব না আর!’’ বলছেন অর্জুন।

ব্যারাকপুরের উলট পুরাণ আসলে এটাই। এই তল্লাটে শাসক তৃণমূলের ‘চ্যালেঞ্জার’ যখন হয়ে উঠছিল বিজেপি, তখন অর্জুনেরা দৌড়েছেন। এ বার সাংগঠনিক ভাবে ‘কন্ট্রোল’ বিজেপির হাতে। রিমোট হাতে তাই ঘরে বসেই ‘কন্ট্রোল’ করছেন অর্জুন। তাঁর বিধায়ক-পুত্র পবন, অরিন্দম ভট্টাচার্য বা ফাল্গুনী পাত্রের মতো অন্য প্রার্থীরা ঘুরছেন।

অর্জুনেরা দল ছাড়ায় সেই শূন্যস্থান ভরাট করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ বার যাঁদের এগিয়ে দিয়েছেন, পরিচালক রাজ চক্রবর্তী তাঁদের অন্যতম। ব্যারাকপুরের তৃণমূল প্রার্থী কিন্তু সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েছেন। শনি, রাম বা হনুমান, যে মন্দির পথে পেয়েছেন, মাথা ঠুকেছেন। টিটাগড়ে এক চক্কর মেরে ঘুরে বেড়িয়েছেন ব্যারাকপুর পুরসভার ওয়ার্ডের পরে ওয়ার্ড। তাঁর স্ত্রী, অভিনেত্রী শুভশ্রী করোনা আক্রান্ত, তা হলে রাজ কেন নিভৃতবাসে যাবেন না— এক সময়ে ধুয়ো তুলেছিলেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। কিন্তু রাজ মাথা ঠান্ডা রেখেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ভোট দিচ্ছেন। গোলমাল নেই। আমার বিশ্বাস, মানুষ ঠিক সিদ্ধান্তই নেবেন।’’ পরিক্রমার ফাঁকেই কখনও বৃদ্ধ ভোটার দেখলে সিআইএসএফ জওয়ানদের অনুরোধ করেছেন সাহায্য করতে, কখনও তৃণমূল সমর্থকের ‘২ তারিখের পরে কিন্তু বারবার আসতে হবে’ মন্তব্য শুনে উত্তর দিয়েছেন, ‘‘সেটা মানুষই সিদ্ধান্ত নেবেন। তাঁদের উপরে ভরসা রাখছি।’’

দিনভর ছুটে ভোট ‘করানোর’ চেষ্টায় খামতি রাখেননি নৈহাটির তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিকও। ভাটপাড়ার জিতেন্দ্র সাউ বা নোয়াপাড়ার মঞ্জু বসুরা বরং ছিলেন নিষ্প্রভ। নোয়াপাড়ায় কংগ্রেস প্রার্থী শুভঙ্কর সরকার বা নৈহাটিতে সিপিএমের ইন্দ্রাণী কু‌ণ্ডু মুখোপাধ্যায় আবার এলাকা চষে বেড়িয়েছেন।

আরও উত্তরে বীজপুরে ঢুকলে বিজেপি প্রার্থী শুভ্রাংশু রায় কিন্তু গোটা সকালটা ঘটক রোড়ের বাড়িতে বন্দি। দুপুরের পরে ভোট দেওয়ার আগে হাজিনগরের কিছু বুথে গিয়ে বাবার কায়দায় শুধু জানতে চেয়েছেন, ‘‘সব ঠিক আছে তো? খাওয়া হয়েছে?’’ এলাকায় গোলমালের প্রসঙ্গ উঠলে শুভ্রাংশুর উত্তর, ‘‘তেমন কিছু হয়নি। বিদায় নিশ্চিত বুঝে তৃণমূল কিছু অশান্তি বাধানোর চেষ্টা করেছিল।’’ তাঁর বাবা মুকুল রায় সাতসকালে বীজপুরে নিজের ভোটটা দিয়ে ফিরে গিয়েছেন কৃষ্ণনগর উত্তরে নিজের ভোট লড়তে।

ভোট-কৌশলে ফারাক থাকলেও রাজের মতোই অর্জুনের মত, ‘‘মানুষ খুব উৎসাহে ভোট দিচ্ছেন।’’ উৎসাহের কথা জানান দিয়েই শ্যামনগর পিনকল মোড়ে পুরসভার এক কর্মী বলছিলেন, ‘‘অনেক দিন পরে এ ভাবে এই এলাকার লোককে ভোট দিতে দেখলাম।’’ কন্ট্রোল রুমে থাকুন আর বুথে ঘুরুন— মানুষের ওই লাইনই আশায় এবং ধাঁধায় রাখছে সব পক্ষকে!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy