মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সায়ন্তন বসু, আব্দুল মান্নান এবং সুজন চক্রবর্তী। ফাইল চিত্র।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী প্রচারে ২৪ ঘণ্টার নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ক্ষুব্ধ তৃণমূল। মমতা নিজে টুইট করে বিষয়টিকে ‘অগণতান্ত্রিক’ এবং ‘অসংবিধানিক’ বলেছেন। প্রতিবাদে তিনি মঙ্গলবার বেলা ১২টা থেকে গাঁধী মূর্তির পাদদেশে ধর্নায় বসছেন বলেও জানিয়েছেন। তাঁর দলের তরফে ‘গণতন্ত্রের কালো দিন’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে। বিজেপি যদিও কমিশনের এই নিষেধাজ্ঞা-সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। অন্য দিকে, বাম-কংগ্রেস মমতার উপর এই নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করলেও, বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কমিশন কেন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না তুলেছে সে প্রশ্নও।
সোমবার রাতে নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করে, আগামী ২৪ ঘণ্টা মমতা কোনও নির্বাচনী প্রচার করতে পারবেন না। এর পরেই ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতৃত্ব নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। দলের সাংসদ তথা জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘‘এটা গণতন্ত্রের পক্ষে কালো দিন।’’ একই সঙ্গে তিনি টুইট করেন, ‘১২ এপ্রিল গণতন্ত্রের কালো দিন। নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত ভাবে আপস করেছে। তারা এখন মোদী-শাহ কমিশন’।
সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া যশবন্ত সিংহও টুইট করেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের মনে সব সময় নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে শঙ্কা ছিল। কিন্তু আজ তা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে গেল— নির্বাচন কমিশন মোদী-শাহের নির্দেশেই কাজ করছে। কেন সাংবিধানিক সংস্থা আজ সমঝোতার পথে? এর চেয়ে বেশি আমরা আর কী প্রত্যাশা করতে পারি’?
তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষও কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘মানুষ এর জবাব দেবে। পক্ষপাতদুষ্ট কমিশন বিজেপি-র শাখা সংগঠন। ভোটের বাক্সে এর জবাব দেবে মানুষ।’’
আর স্বয়ং মমতা টুইট করে বিষয়টিকে ‘অগণতান্ত্রিক’ এবং ‘অসংবিধানিক’ আখ্যা দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনের অগণতান্ত্রিক এবং অসাংবিধানিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আমি বেলা ১২টা থেকে গাঁধী মূর্তির পাদদেশে ধর্নায় বসছি’।
তবে কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিজেপি। রাজ্য বিজেপি-র অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। তবে ওঁর উপরেও যে কেউ আছে, সেটা উনি মানতেই চান না। কাউকেই সম্মান করেন না। ভোটের সময় কমিশনই যে শেষ কথা, তা মনে রাখা দরকার।’’ তৃণমূলের তোলা ‘কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট’ অভিযোগের প্রেক্ষিতে সায়ন্তন বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক ক্ষমতা রয়েছে। গত লোকসভা ভোটেই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে ৭২ ঘণ্টার জন্য নিষিদ্ধ করেছিল কমিশন। আমরা সেই নিষেধাজ্ঞাকে সম্মান জানিয়েছিলাম।’’
বাম এবং কংগ্রেস যদিও মমতার নির্বাচনী প্রচারে এই নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তকে সঠিক বলেই মনে করছে। পাশাপাশি তাদের মত, বিজেপি নেতৃত্বের উপরেও একই রকম ভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত কমিশনের। বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন ওঁকে শোকজ করেছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতেই এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেই আমার মনে হয়। যে ভাবে উনি প্ররোচনা তৈরি করছিলেন, তাতে এক দিনের জন্য প্রচার বন্ধ করা আমি বেঠিক বলে মনে করি না।’’ এর পরেই তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কিন্তু দিলীপ ঘোষের মুখ কী বন্ধ করা যাবে? সায়ন্তন বসু বা রাহুল সিন্হাদের বিরুদ্ধেও কি কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যাবে? যদি এঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তা হলে নির্বাচন কমিশনের ভুমিকাও নিরপেক্ষ বলে বিবেচিত হবে না।’’
কংগ্রেস নেতা তথা রাজ্যের বিদায়ী বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান আবার কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে ‘গড়াপেটা’ বলে অভিযোগ করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এ সব গটআপ খেলা বলেই আমার মনে হয়েছে। নির্বাচন কমিশন মমতার বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ করে ওঁকে হিরো বানাতে চাইছে। যাতে রাজ্যের মানুষ বিশ্বাস করেন, মমতা একাই বিজেপি বিরোধী। কমিশন মুখ্যমন্ত্রীর প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কমিশনের নিরপক্ষতা প্রমাণ করতে হলে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি-র রাজ্য সভাপতির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy