পূর্ব বর্ধমানে মেমারির সভায় অনুব্রত মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র।
স্রেফ ‘খেলার’ জোরেই প্রথম তিন দফার ভোটে আত্মবিশ্বাসী দল, খেলা ঠিকঠাক চালাতে পারলে বাকি দিনগুলোতেও সমস্যা নেই—বিশ্লেষণ অনুব্রত মণ্ডলের।
কেমন খেলা? তাঁর উত্তর, ‘‘ভয়ঙ্কর খেলা। এই খেলায় তৃণমূলের সঙ্গে পেরে ওঠা মুশকিল। মোদ্দা বিষয়টা ট্রেনিং-এর। কোন বল-এ চার, কোন বল-এ ছয়, আবার কোন বল-এ দু’রান নিলেও আউট হব না, সেটা বুঝে গেলে কোনও সমস্যাই নেই।’’
‘গুড়-বাতাসা’, ‘চড়াম-চড়াম’, ‘ভ্যানিশ করে দেওয়া’র মতো শব্দবন্ধের জন্ম দিয়ে বিগত কয়েকটি ভোটে বাজার সরগরম রেখেছিলেন যিনি, এ বার ভোটে তাঁর তেমন কোনও ‘সৃষ্টি’ এখনও সামনে আসেনি! অনেকেই ভাবতে শুরু করেছিলেন, এ বার কি একটু মিইয়ে গেছেন তিনি? প্রশ্ন শুনেই অট্টহাসি! বললেন, ‘‘সময় কোথায় বেশি কথা বলার? এ বার শুধু জেলায় জেলায় গিয়ে খেলা শেখাচ্ছি। কোনও বার এত ঘুরতে হয়নি। আমার কাছে খেলার ট্রেনিং নিলে কারও সাধ্য নেই তৃণমূলকে হারায়।’’
‘অনুব্রত স্যার’-এর কোচিং অব্যর্থ বলছেন? ‘‘হ্যাঁ, হ্যাঁ। সেটা তো প্রমাণিত!’’
খেলতে খেলতে পাচন দেওয়ার কায়দাও দলীয় কর্মীদের তিনিই রপ্ত করাচ্ছেন বলে দাবি তৃণমূলের এই দাপুটে নেতার। ‘‘কার হাল্কা পাচনে কাজ হবে, কার জন্য কষে পাচন দরকার, সেগুলো শিখতে হবে তো! ডোজটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’’ পাচন মানে পাচন বাড়ি? নির্বাচন কমিশন, কেন্দ্রীয় বাহিনী, কোনও কিছুর তোয়াক্কা না করেই এই সব হুমকি দিচ্ছেন? অনুব্রতের মুখে মৃদু হাসি। ‘‘অভিধান খুলে দেখুক ওরা, পাচনের কতগুলো অর্থ আছে! আমি কোন পাচনের কথা বলছি, ওরা প্রমাণ করতে পারবে?’’
তৃতীয় দফার নির্বাচনে শাসক ও বিরোধী-দুই দলের বিরুদ্ধেই সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছে। সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে তাঁর এই ধরনের মন্তব্য উস্কানির সমার্থক নয় কি? তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে হাত নেড়ে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতির জবাব, ‘‘পাচন ছাড়া ভোট হয়? শুনেছেন কখনও?’’
ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা থেকেই জেলায় জেলায় কর্মসূচি তাঁর। এমনই ঠাসা অনুষ্ঠান যে দলীয় কর্মীরা অনুযোগ করছেন, ‘দাদা, এ বার নিজের জেলায় সময় দিচ্ছেন না।’ এমনই এক কর্মসূচির ফাঁকে বোলপুরের বাড়িতে ও পরে দলীয় কার্যালয়ে মুখোমুখি হওয়া গেল তাঁর। সে দিনই আবার বিজেপি প্রার্থীর মনোনয়ন পেশ। বোলপুরের রাস্তা জুড়ে তারই প্রস্তুতি, মিটিং-মিছিল, স্লোগান। অনুব্রতর বাড়ির নীচে বসে থাকা কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীরাও চাপা স্বরে আলোচনা করছিলেন, ‘‘মাস কয়েক আগেও বিজেপি-র এত দাপট ছিল না।’’ সাক্ষাৎকারের শুরুতেই সে প্রসঙ্গ তুলতে অনুব্রত বললেন, ‘‘ওরম মনে হয়। দাপট আসলে কার,
মানুষ জানে।’’
নিজের কথা বলছেন? যাঁর ‘পছন্দ নয়’ বলে নাম ঘোষণার পরেও প্রার্থী বদলে যায়, যাঁর সম্পর্কে ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘অনুব্রত দিদিকে ব্ল্যাকমেল করছে,’’ আর মুহূর্তে ভাইরাল হয় সেই ভিডিয়ো ক্লিপ! এ বার তাঁর হাসি আর গোপন থাকে না। ‘‘কে বলেছে, আমি প্রার্থী বদলেছি? আমি শুধু বলেছিলাম, ওই প্রার্থীর ওপর মানুষের ভরসা নেই। আর ববির কথা বলছেন? আমার ওপর দোষ না চাপিয়ে ওর উপায় ছিল না। আমি তো কর্মী। কর্মীকে নেতারা অনেক কিছু বলে থাকে। আমি এ সব শুনে অভ্যস্ত।’’
দলে তাঁর অবস্থানটা তা হলে ঠিক কী?
‘‘অবস্থান আর কী হবে? আমি মন্ত্রী নই, এমএলএ নই, এমপি নই, এমনকি, কাউন্সিলরও নই। আমি সাধারণ কর্মী। কাজটা করে যাই।’’
কোথাও কি সামান্য অভিমানের ছোঁয়া? হাত নেড়ে দাপুটে নেতার উত্তর, ‘‘অভিমান কীসের? নেতা-মন্ত্রী হলে তো দিদিকে ঠকিয়ে চলে যেতাম। আমাকে তো এক বার রাজ্যসভার
সদস্য করার কথা হয়েছিল। রাজি হইনি।’’
এ বার ভোটে জিতে যদি তৃণমূল ফের ক্ষমতায় আসে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আলাদা ভাবে কিছু বলার আছে? কয়েক মুহূর্ত থমকালেন। তার পর জবাব এল, ‘‘ক্ষমতায় তো তৃণমূল আসবেই। তখন বলব, মানুষ চিনতে বেশি সময় নেওয়া হোক। অন্ধবিশ্বাস না করে মানুষ চিনে দায়িত্ব, ক্ষমতা দেওয়া হোক।’’
আবারও যেন কেমন বেসুরো শোনায় গলাটা। এটাও অভিমান নয় বলছেন? এ বার অসহিষ্ণু দেখায় তাঁকে। ‘‘অনুব্রত মণ্ডলকে কেউ কখনও অভিমান করতে দেখেছে?’’ বাক্যটা কোনও মতে শেষ করেই দূরে দাঁড়ানো দলীয় সমর্থকদের দিকে তাকিয়ে হুঙ্কার ছাড়েন তিনি, ‘‘এই, ওখানে অত কথা কীসের? একদম চুপ সবাই।’’
দলীয় কার্যালয় অস্বাভাবিক শান্ত হয়ে যায় আচমকাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy