Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Mamata Banerjee

Bengal Polls: আমপান তরজায় ফের শাহ ও মমতা

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, “আমপানের পর কেন্দ্র থেকে বাংলাকে ১০ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই টাকা ক্ষতিগ্রস্তরা পাননি। ভাইপো অ্যান্ড কোম্পানি সেই টাকা নিয়ে নিয়েছে।’’

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

প্রসেনজিৎ সাহা
গোসাবা শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২১ ০৫:০৪
Share: Save:

আমপানের ক্ষতিপূরণে রাজ্যের কেন্দ্রীয় সাহায্য পাওয়া নিয়ে বিবাদ ফের মাথা চাড়া দিল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মঙ্গলবার গোসাবায় নির্বাচনী প্রচারে এসে নাম না করে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে ফের অভিযোগ করলেন, “আমপানের পর কেন্দ্র থেকে বাংলাকে ১০ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই টাকা ক্ষতিগ্রস্তরা পাননি। ভাইপো অ্যান্ড কোম্পানি সেই টাকা নিয়ে নিয়েছে।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘দিদি ভাইপোকে বাংলায় মুখ্যমন্ত্রী করতে চাইছেন। আর মোদীজি বাংলায় উন্নয়ন করতে চাইছেন। প্রধানমন্ত্রী গরিবদের জন্য ১১৫টি প্রকল্প এনেছেন। আর দিদি গরিবের টাকা লুট করার জন্য ১১৫টি দুর্নীতি করেছেন।’’

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য এ দিনই পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের সভায় শাহের তোলা ওই সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘শুনলাম আজ গোসাবায় গিয়ে বলেছে, ওরা নাকি আমপানের টাকা দিয়েছে। কাঁচাকলা দিয়েছে। এক পয়সা দেয়নি। মিথ্যেবাদীর দল। ডাকাতের দল। কুৎসার দল। অপপ্রচারের দল।’’ কারও নাম না করে তাঁর আরও কটাক্ষ, ‘‘বিজেপি একটা জঘন্য পলিটিক্যাল পার্টি। দু’জনের সিন্ডিকেট। দুই বন্ধু।’’ পর্যবেক্ষকদের অনেকের ব্যাখ্যা, মমতা ওই মন্তব্যে নাম না করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং শাহকে বিঁধেছেন।

গোসাবা বিধানসভার বিজেপি প্রার্থী বরুণ প্রামাণিকের সমর্থনে এ দিন গোসাবা কৃষক বাজার সংলগ্ন মাঠে জনসভা করেন শাহ। আশ্বাস দেন, ‘‘আমরা ক্ষমতায় এলে এসআইটি গঠন করে তদন্ত করব। সব দুর্নীতির তদন্ত হবে। অপরাধীদের জেলে পাঠানো হবে।” সেখানে তাঁর বক্তৃতার নির্যাস: তৃণমূল সরকার গত ১০ বছরে সুন্দরবন-সহ রাজ্যে কোনও উন্নয়ন করেনি। বিজেপি ক্ষমতায় এসে তা করবে।

শাহের অভিযোগ, গোসাবা তথা সুন্দরবনে সাধারণ মানুষ পানীয় জলের সঙ্কটে ভুগছেন। কলকাতার এত কাছে হওয়া সত্ত্বেও ওই এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়নি। সাধারণ মানুষকে প্রাণ হাতে নিয়ে নদীপথে এক দ্বীপ থেকে আর এক দ্বীপে যেতে হয়। বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় এলে ওই এলাকায় পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন দ্বীপকে সেতুর মাধ্যমে যুক্ত করা হবে বলে শাহ আশ্বাস দেন। দলিত সমাজ ও সুন্দরবনের পিছিয়ে পড়া আদিবাসীদের জন্য উন্নয়ন সমিতি গঠন করে ওই সম্প্রদায়ের মানুষদের উন্নতি ঘটানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

এ ছাড়া, সুন্দরবন উন্নয়ন বোর্ড গঠন করা, সুন্দরবন এলাকায় ট্যুরিস্ট সার্কিট বানানো, এমস হাসপাতাল তৈরি করা, মৎস্যজীবীদের জন্য পরিকাঠামোগত উন্নয়ন, বছরে ছ’হাজার টাকা মৎস্যজীবীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি পাঠিয়ে দেওয়া এবং ভূমিহীন কৃষকদের জন্য তিন লাখ টাকার বিমা চালু করার কথাও এ দিন ঘোষণা করেছেন শাহ। তাঁর আরও আশ্বাস, বিজেপি ক্ষমতায় এলে এক বছরের মধ্যেই সুন্দরবনকে আলাদা জেলা করা হবে। নয়া নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর করে শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও ফের দেন শাহ। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা যা প্রতিশ্রুতি দিই, তা করি। এই সব কাজ শেষ করে তবেই পরের বার ভোট চাইতে আসব। প্রতিটি ঘরে গ্যাস, বিদ্যুৎ ইতিমধ্যেই পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। বাকি কাজও করা হবে।’’ এ বার বিধানসভা নির্বাচনে কোথাও গুন্ডামি হবে না এবং মানুষ শান্তিতে ভোট দিতে পারবেন বলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বাস দেন।

শাহের ওই সভায় ভাল ভিড় হয়েছিল। তবে বিজেপির অভিযোগ, শাহের সভায় লোকসমাগম আটকাতে গোসাবার বিভিন্ন দ্বীপের বহু জায়গায় গাড়ি এবং ভুটভুটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। গোসাবার তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

গোসাবার সভার পরে এ দিন বিকেলে মেদিনীপুরে বিজেপি প্রার্থী শমিত দাসের সমর্থনে রোড শো করেন শাহ। সেখানে শুরুতে তেমন ভিড় ছিল না। তবে শোভাযাত্রা এগনোর সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়ে। কেরানিতলা থেকে নান্নুরচক, বটতলাচক হয়ে রোড শো শেষ হয় গোলকুয়াচকে।
এই দেড় কিলোমিটার রাস্তা ফ্লেক্স-ফেস্টুনে সাজানো হয়েছিল। ছিল মোদী-শাহের ছবি এবং গেরুয়া-সাদা রঙের বেলুন। মোড়ে মোড়ে ছোট মঞ্চ ছিল। সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। রাস্তার দু’পাশে দাঁড়ানো মানুষের দিকে গোলাপ ফুলের পাপড়ি ছোড়েন এবং হাত নাড়েন শাহ।

ঘাটালে এ দিন রোড শো করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডা। কিছু দিন আগে ঘাটাল শহরে রোড শো করেছিলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক। সেখানে নজরকাড়া ভিড় হয়েছিল। এ দিন নড্ডার রোড শো ঘিরেও ঘাটালে উচ্ছ্বাস দেখা যায়।

নির্ধারিত সময়ের ঘণ্টাখানেক বাদে শুরু হয় নড্ডার রোড শো। চড়া রোদকে উপেক্ষা করেই অপেক্ষা করছিলেন কর্মীরা। হুডখোলা গাড়িতে বিজেপি প্রার্থী শীতল কপাটকে পাশে নিয়ে ঘাটাল শহরের কুশপাতা বাসস্ট্যান্ড থেকে রোড শো শুরু করেন নড্ডা। তা শেষ হয় কলেজ মোড়ে। ভিড় দেখে আপ্লুত নড্ডা বলেন “বাংলায় এখন মমতার কুশাসন চলছে। আসল পরিবর্তন করতে বিধানসভা ভোটে ইভিএমে পদ্ম ফোটান। তা হলে গুন্ডারাজের অবসান হবে। বেকারদের চাকরি হবে। মহিলারাও সুরক্ষিত থাকবেন।” নড্ডার রোড শোয়ের
জেরে এ দিন ঘাটাল কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। দুপুর ২টো থেকে ঘাটাল শহরে বন্ধ করে দেওয়া হয় যানবাহন। বিকেল ৫টার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

(সহ-প্রতিবেদন: শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল, অভিজিৎ চক্রবর্তী এবং বরুণ দে)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Amit Shah Cyclone Amphan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy