বিকেলে অসুস্থ অবস্থায় কার্যালয়ে কামারহাটির তৃণমূল প্রার্থী মদন মিত্র। শনিবার। ছবি: সুমন বল্লভ
কামারহাটির চেনা মাঠে দিনভর নিজেই হুড খোলা জিপ চালিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন। রাস্তায় চলার ফাঁকে কখনও বুথে ঢুকে, কখনও আবার লাইনে দাঁড়ানো ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না, সেই খোঁজ নিয়েছেন। কিন্তু বিকেলে রথতলায় পুরসভা সংলগ্ন কার্যালয়ে এসে বসার পরেই
অসুস্থ হয়ে পড়লেন জোড়া ফুলের প্রার্থী মদন মিত্র।
আচমকাই শ্বাসকষ্ট ও শরীরে অস্বস্তি দেখা দেওয়ায় তড়িঘড়ি ডাকা হয় চিকিৎসককে। দেওয়া হয় নেবুলাইজ়ার। সমস্ত পরীক্ষার পরে চিকিৎসক জানান, সারা দিন খাওয়াদাওয়ার অনিয়মের ফলেই আচমকা শরীর খারাপ হয়েছে মদনের। গত বৃহস্পতিবারও একই রকম অবস্থা হয়েছিল। সেই সময়ে পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছিল, মদনের শরীরে সোডিয়ামের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সেই জন্য ওষুধও চলছিল তাঁর। এ দিন সকাল সাতটা নাগাদ দক্ষিণেশ্বরের ফ্ল্যাট থেকে বেরোনোর সময়ে তাই নিজেই বার বার সহকর্মীদের বলেছিলেন, ‘‘সোডিয়ামের ওষুধটা মনে করে নিস।’’
নির্দিষ্ট সময়ে সেই ওষুধ খেলেও, ভোটের দুপুরে কিছু মুখে তুলতে নারাজ ছিলেন মদন। দুপুরে কিছু ক্ষণের বিরতিতে ভবানীপুর থেকে আনা মিষ্টি দই খেয়ে ফের নিজে জিপ চালিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন এলাকায়। কিন্তু বেশি ক্ষণ ঘুরতে পারেননি কামারহাটির ‘ক্যাপ্টেন’। পিটুরিঘাটের গঙ্গার পাড়ে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন গান, কবিতার লাইন আওড়ানোর পরেই রথতলায় ওই কার্যালয়ে ফিরে যেতে চান নিজেই।
পরনে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি। ডান হাতে প্রসাদী ওড়না বেঁধে, কপালে গেরুয়া-লাল তিলক কেটে বেশ ফুরফুরে মেজাজেই ভোটের
সকালটা শুরু করেছিলেন মদন। ৫০১ নম্বর ফ্ল্যাটের জানলা থেকে
দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের দিকে তাকিয়ে সূর্যপ্রণাম করে নীচে নেমে, হেঁটেই গিয়েছিলেন ভবতারিণীর মন্দিরে। পুজো দিয়ে সোজা চলে যান
হীরালাল কলেজে ভোট দিতে। তার পরেই বসেন লাল রঙের হুড খোলা জিপে, চালকের আসনে। শুক্রবার রাতে এলাকায় বোমাবাজির অভিযোগ তুলে স্টিয়ারিং ঘোরানোর আগে মদন বললেন, ‘‘কাচ ঢাকা গাড়িতে লুকিয়ে নয়, প্রকাশ্যে ঘুরব। সাহস থাকলে আমায় সামনে মারুক।’’
তার পরে শুরু হয় চরকিপাক। সেই ফাঁকেই মন্তব্য ছুড়ে দেন, ‘‘যতই নাড়ো কলকাঠি, পাবে নাকো কামারহাটি’’। কখনও আবার
বললেন, ‘‘মুখে জয় শ্রীরাম, ন’শো টাকা গ্যাসের দাম।’’ এ সবের মাঝেই আড়িয়াদহ রামানন্দ চ্যারিটি বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে একটি বুথে ঢোকার সময়ে মদনকে বাধা দেন কর্তব্যরত কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান। জানতে চান, মদনের পাঞ্জাবির বুকপকেটে লাল মতো জিনিসটি কী? খেপে গিয়ে মদন বলে ওঠেন, ‘‘ইয়ে অ্যাটম বম্ব হ্যায়!’’ তার পরেই পকেটে থাকা বিভিন্ন দেবতার ছবি বার করে ভোটারদের দেখিয়ে বলেন, ‘‘আমার পকেটে আমার ভগবান রয়েছেন। ওঁরা প্রার্থীর বুকে হাত দিচ্ছেন!’’
এরই মধ্যে প্রার্থীর কাছে খবর আসে, ভোটদানের হার খুব কম। বিভিন্ন জায়গায় ভোটারদের লম্বা
লাইন রয়েছে। এমনই একটি ভোটকেন্দ্র, নন্দননগর উচ্চ বিদ্যালয়ে ঢুকে লাইন দেখে রেগে গিয়ে প্রিসাইডিং অফিসারের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন মদন। ‘‘সব ঔরঙ্গজেবের নাতিরা বসে বসে সময় কাটাচ্ছে’’—মন্তব্য করে বুথ ছাড়েন তিনি। বিভিন্ন জায়গায়
গিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গেও বচসায় জড়ান মদন। নিজস্ব ভঙ্গিতেই বলেন, ‘‘মাস্ক খুলছি, আমার মুখটা দেখে নাও।’’ এর পাশাপাশি আবার নর্দমার ধারে পড়ে থাকা বিজেপি ও তৃণমূলের পতাকা তুলে বাড়ির রোয়াকে রেখেছেন মদন।
দুপুর পৌনে ১টা নাগাদ দক্ষিণেশ্বরের ফ্ল্যাটে প্রার্থী ফিরে আসেন বিশ্রাম নিতে। তিনটে নাগাদ ফের বেরোন। গঙ্গার ঘাটে দাঁড়িয়ে জানান, কামারহাটির ‘ওয়ান ডে’-তে প্রতিপক্ষ ভাবছেন শুধুমাত্র সিপিএমকে। তবে তিনিই ২ মে স্বরচিত ‘ও লাভলি’ গাইবেন। কিন্তু তার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়ায়, সিপিএম প্রার্থী সায়নদীপ মিত্র বলছেন, ‘‘ওঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। তবে এখনই এই অবস্থা, ২ মে কী হবে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy