Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Purba Bardhaman

Bengal Polls: পূর্ব বর্ধমানে ভোট পরবর্তী হিংসা, বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষের বলি ১ মহিলা-সহ ৪

রায়নার সমসপুর এবং জামালপুরের নবগ্রামে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষের দু’টি পৃথক ঘটনায় তৃণমূলের ৩ এবং বিজেপি-র ১ জন সমর্থক নিহত হয়েছেন।

সংঘর্ষে আহতকে উদ্ধার করে হাসপাতালে আনছে পুলিশ।

সংঘর্ষে আহতকে উদ্ধার করে হাসপাতালে আনছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২১ ২২:৪১
Share: Save:

ভোট পববর্তী সংঘর্ষে রক্তাক্ত হল পূর্ব বর্ধমান। ভোটের ফল প্রকাশের পর ঘটেছে রায়নার সমসপুর এবং জামালপুরের নবগ্রামে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষের দু’টি পৃথক ঘটনায় ১ মহিলা-সহ ৪ জন নিহত হয়েছেন। জখম হয়েছেন বেশ কয়েকজন। পুলিশ সূত্রের খবর, নিহতদের মধ্যে ৩ জন তৃণমূল এবং বিজেপি-র মহিলা সমর্থক রয়েছেন।

বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই রাজ্য জুড়ে চলছে রাজনৈতিক সংঘর্ষ আর প্রাণহানির ঘটনা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রাজ্যের শাকক এবং প্রধান বিরোধী দল রয়েছে যুযুধান দু’পক্ষের চালিকায়। রবিবার রাতেও রায়নার সমসপুরে তৃণমূল এবং বিজেপি সমর্থকদের সংঘর্ষ বাধে। সে সময় স্থানীয় বাসিন্দা গণেশ মালিকের (৬০) মাথায় বাঁশের আঘাত লাগে। গুরুতর জখম গণেশকে রাতেই পাঠানো হয় বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে । সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। নিহতের ছেলে মনোজ সোমবার বলেন, ‘‘আমার বাবা তৃণমূল করতেন। গ্রামের একটা মাচায় বসে সকলে গল্পগুজব করেন। রবিবার রাতে সেখানেই বসে ছিলেন বাবা। হঠাৎই বিজেপি কর্মীরা চড়াও হয়ে তৃণমূল সমর্থকদের মারধর শুরু করে। বাবা তাদের থামাতে যান। ওই সময়েই হামলাকারীরা বাবার মাথায় বাঁশ দিয়ে আঘাত করে’’ এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রায়না থানার পুলিশ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে ।

অন্যদিকে সোমবার বেলা থেকে রাজনৈতিক উত্তেজনার পারদ চড়ে জামালপুর থানার নবগ্রামের ষষ্ঠিতলা এবং ওড়িশা পাড়ায় । ওই সংঘর্ষের ঘটনার এদিন বিজেপি-র মহিলা সমর্থক কাকলি ক্ষেত্রপালের (৪৭) পাশাপাশি তৃণমূলের দুই কর্মী সাজু শা ওরফে সাজাহান (৩৮) এবং বিভাস বাগের মৃত্যু হয় । জখম হন তৃণমূলের মিঠু রহমান এবং কাকলির স্বামী অনিল এবং দেওর মানু ওরফে রূপো ক্ষেত্রপাল। নিহত মধ্যে কাকলি ও বিভাসের বাড়ি নবগ্রামের ষষ্ঠিতলা এবং ওড়িশাপাড়ায়। শাজাহানের বাড়ি জামালপুরের ভেড়িলি গ্রামে। গুরুতর জখম রূপো এবং অনিল ক্ষেত্রপালকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। অপর জখম মিঠু রহমানের চিকিৎসা হয় জামালপুর ব্লক হাসপাতালে।

ঘটনার বিষয়ে জামালপুর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মেহেমুদ খান বলেন, ‘‘নিহত ও জখম তৃণমূলেরকর্মীরা-সহ কয়েকজন নবগ্রাম থেকে ফিরছিলেন। ফেরার সময়ে তাঁরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিচ্ছিলেন। ওড়িশাপাড়ার কাছে বিজেপি –র সশস্ত্র মহিলা ও পুরুষ কর্মীরা তৃণমূল কর্মীদের উপরে হামলা চালায়। তারা তৃণমূলের কর্মীদের বাইক ভাঙচুর করে। টাঙ্গি, তরোয়াল, রড, লাঠি নিয়ে তৃণমূলের কর্মীদের আঘাত হয়। আশঙ্কা জনক অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে জামালপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় সাজু ও বিভাসকে বর্ধমান হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলে সেখানকার চিকিৎসক তাঁদের ‘মৃত’ ঘোষণা করেন।’’

মিঠু রহমানের মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হলেও তিনি এখন বিপদন্মুক্ত বলে মেহেমুদ জানিয়েছেন । তিনি বলেন, ‘‘ভোটে হেরে যাওয়ার বদলা নিতেই বিজেপি কর্মীরা পরিকল্পনা মাফিক জামালপুরে সন্ত্রাস চালানো শুরু করেছে।’’ যদিও তৃণমূলের অভিযোগ যদিও মানতে চাননি নিহত কাকলির ছেলে আশিস ক্ষেত্রপাল । তিনি বলেন, ‘‘সোমবার বেলা ১১ টা নাগাদ আমরা কয়েকজন গ্রামের মাচায় বসেছিলাম। ওই সময়ে সবুজ আবির মেখে পড়ার দিক থেকে বেশ কয়েকটি বাইকে চেপে তৃণমূলের কর্মীরা এসে ‘জয় বাংলা’ , ‘খেলা হবে’ স্লোগান দেওয়া শুরু করে। আমরা প্রতিবাদ করায় প্রথমে তারা চলে গিয়েছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই দলে ভারী হয়ে, অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অন্যপথ দিয়ে ঘুরে এসে বিজেপি সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালায়। টাঙ্গি ও তরোয়াল দিয়ে কয়েকজনকে আহত করে। মাথায় টাঙ্গির আঘাত করে আমার মাকে খুন করে। আর বাবা এবং কাকাও মারাত্মক জখম হয়েছেন। পাড়ার ১৬-১৭টি বাড়ি তছনছ করা হয়।’’

ওই ঘটনার পর থেকেই নবগ্রাম এলাকা জুড়ে অভিযানে নামে পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ সিংহ রায় , এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) আমিনুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী নবগ্রামে ধরপাকড় অভিযান চালায়। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ নবগ্রাম এলাকা থেকে ২৩ জনকে আটক করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, উত্তেজনা থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মোতায়েত করা হয়েছে পুলিশ, র‍্যাফ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী। ঘটনায় জড়িত বাকি অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy