পাহারা: গোলমালের পরে এলাকায় মোতায়েন রয়েছে পুলিশ। রবিবার, মানিকতলায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
যে কোনও দ্বন্দ্বেই রাজনৈতিক রং লেগে যাওয়ায় এই মুহূর্তে সমালোচনা চলছে নানা মহলে। সেই ধারা বজায় রেখেই মানিকতলায় দুই মহিলার জল নেওয়া নিয়ে বচসা গড়াল রাজনৈতিক সংঘর্ষে। শনিবার রাতে এর জেরে জখম হয়েছেন অন্তত ১২ জন। ভাঙচুর করা হয় একাধিক গাড়ি। বাদ যায়নি পুলিশের ভ্যানও। আহতদের মধ্যেও তিন জন পুলিশ আধিকারিক রয়েছেন। প্রবল ইটবৃষ্টির মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের রবিবার আদালতে তোলা হলে জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
ঘটনার সূত্রপাত শনিবার সকালে। বাগমারি রোডে রেললাইনের ধারে ঝুপড়ি তুলে দিয়ে সরকারের তরফে সেখানকার বাসিন্দাদের যে বহুতলে ঘর দেওয়া হয়েছে, সেখানে জল নিয়ে ঝামেলা বাধে দুই মহিলার। উত্তম পাল নামে এক যুবকের দাবি, ‘‘বহুতলের ৫০৫ নম্বর ঘরে আমরা থাকি। আমাদের জলের খুব সমস্যা। ছাদের উপরের কল থেকে দু’দিন জল নিয়ে কাজ চালানো হয়েছে। কিন্তু শনিবার আমরা যাতে জল না পাই, সেই কারণে ছাদের দরজায় তালা দিয়ে দেওয়া হয়। আমার মা চাবি চাইতে গেলে চঞ্চলা দে নামে বিজেপির সমর্থক এক মহিলা বলেন, চাবি পেতে হলে বিজেপি-র পার্টি অফিসে যেতে হবে। আমরা তৃণমূলের সমর্থক জেনেই এ কথা বলা হয়েছে। প্রতিবাদ করলে আরও মহিলাদের ডেকে এনে আমার মাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। বাদ যাননি আমার বৃদ্ধা ঠাকুরমাও।’’ দু’পক্ষই এর পরে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।
শনিবার সন্ধ্যায় এ নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল কার্যালয়ে বৈঠক ছিল বলে দাবি করেন তরুণ মণ্ডল নামে ওই এলাকার এক তৃণমূল নেতা। চলতি নির্বাচনে মানিকতলা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থীর পরিবারের এক সদস্যের পাশাপাশি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর শান্তিরঞ্জন কুণ্ডু। সেখান থেকেই চঞ্চলা ও তাঁর পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। চঞ্চলা এ দিন দাবি করেন, ‘‘তৃণমূল না করলে সরকারি ঘরে ছেড়ে উঠে যেতে হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। এতেই এলাকার লোক রেগে গিয়েছিলেন।’’
যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে শান্তিরঞ্জনবাবু দাবি করেছেন, ‘‘এমন কোনও কথাই বলা হয়নি। কোনও রকম উস্কানি ছাড়াই বিজেপির লোক ইট, পাথর, বাঁশ, লঙ্কার গুঁড়ো নিয়ে হামলা চালিয়েছে। এক সময়ে অবস্থা এমন হয় যে, রেললাইনের ধার থেকে পাথর উড়ে আসতে শুরু করে। আমাদের চার জন গুরুতর জখম হয়েছেন। পুলিশেরও লেগেছে।’’
মানিকতলা থানার পাশাপাশি উল্টোডাঙা, বেলেঘাটা এবং ফুলবাগান থানার বিশাল বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। জমায়েত ছত্রভঙ্গ করার সময়ে একটি ইট উড়ে এসে পড়ে মানিকতলা থানার এক পুলিশ আধিকারিকের মাথায়। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। হাতে এবং কাঁধে চোট পান আরও কয়েক জন পুলিশকর্মী। জখম হয়েছেন এক সিভিক ভলান্টিয়ারও। ঘটনাস্থল থেকেই গ্রেফতার করা হয় মোট ৮ জনকে। মানিকতলা থানা সূত্রের খবর, ধৃতদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
রবিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল পুলিশবাহিনী এলাকায় মোতায়েন রয়েছে। সব রকম জমায়েতের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সেখানেই অবশ্য এ দিন সন্ধ্যায় মিছিল শেষ করে মানিকতলা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী দাবি করেন, ‘‘উস্কানি দিয়ে গোলমাল বাধানো হচ্ছে। কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানাচ্ছি পুলিশের কাছে।’’ বিজেপির প্রার্থী অবশ্য শনিবার রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে দাবি করেছিলেন, ‘‘তৃণমূল না করলে সরকারি আবাসনে থাকতে দেওয়া হবে না বলা হয়েছে। মানুষই এর প্রতিবাদ করেছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy