ভোটের মধ্যে নন্দীগ্রাম প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যে হাতিয়ার পেল সিপিএম। অধুনা বিজেপিতে চলে যাওয়া শিশির ও শুভেন্দু অধিকারীর ঘাড়ে নন্দীগ্রামে গুলিচালনার দিনের ঘটনার দোষ চাপাতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আসলে ‘ষড়যন্ত্রের পর্দা ফাঁস’ করে দিয়েছেন বলে পাল্টা সরব হল তারা। মুখ খুলে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য অবশ্য ১৪ বছর আগের ঘটনা নিয়ে নতুন কোনও দাবি করতে যাননি। বরং, সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামে ‘কুটিল চিত্রনাট্যের চক্রান্তকারী’দের জন্য বাংলার যুব প্রজন্ম কী ভাবে কাজের সুযোগ হারিয়ে অন্ধকারের দিকে চলে গিয়েছে, সেই দিকে তির ঘুরিয়ে দিয়েছেন তিনি।
নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনের সময়ে পুলিশি অভিযান, এমনকি, ‘হাওয়াই চটি পরা’ পুলিশ নিয়েও এখন মমতা যা বলেছেন, তার পাল্টা হিসেবে সিপিএম প্রশ্ন তুলেছে, সেই সময়ে তো বটেই, পরে আরও প্রায় ১৪ বছর তৃণমূলে স্বমহিমায় থেকেছেন অধিকারীরা। তা হলে সেই ২০০৭ সালের ১৪ মার্চের ঘটনার দায় তৃণমূল নেত্রী এড়াবেন কী ভাবে? এই প্রেক্ষিতেই সোমবার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবু বলেছেন, ‘‘নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুরে এখন শ্মশানের নীরবতা। সে সময়ের কুটিল চিত্রনাট্যের চক্রান্তকারীরা আজ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পরস্পরের দিকে কাদা ছোড়াছুড়ি করছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ হারিয়েছে বাংলার যুব সমাজ।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘সরকারি ক্ষেত্রে কোনও নিয়োগ নেই। বাংলার মেধা ও কর্মদক্ষতা— যা আমাদের সম্পদ, তা আমাদের রাজ্য ছেড়ে ভিন্ রাজ্যের চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। গত এক দশকে পশ্চিমবঙ্গ সব দিক দিয়েই পিছিয়ে পড়ছে।’’
নন্দীগ্রামে ‘রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ভুল’ দলের দলিলে আগেই কবুল করেছে সিপিএম। ভুলের দায় নিয়েও মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন এবং তার পরে বুদ্ধবাবু বরাবর বলে এসেছেন, তরুণ প্রজন্মের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে তাঁরা শিল্পায়নের পথে এগোতে চেয়েছিলেন। তাঁদের পদ্ধতিগত যা ভুল ছিল, তার বাইরেও ছিল ‘ষড়যন্ত্র’। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা এবং অধিকারীদের পরস্পরের বিরুদ্ধে মন্তব্যে সেই ‘ষড়যন্ত্রের একটা অংশ’ ধরা পড়ছে বলে ইঙ্গিত করেও বুদ্ধবাবু নজর দিতে চেয়েছেন যুব সমাজের ক্ষতির দিকেই। তাঁর মতে, ‘কুটিল চিত্রনাট্যের’ জেরে গোটা রাজ্যের যুব প্রজন্মের ‘স্বপ্ন চুরমার’ হয়ে গিয়েছে।
মমতা যে ঘটনার কথা বলেছেন, তা নিয়ে নির্দিষ্ট কিছু বক্তব্যও আছে সিপিএমের। বুদ্ধবাবু আগাগোড়া বলে এসেছেন, গুলি চালানোর জন্য তিনি নন্দীগ্রামে পুলিশ পাঠাননি। পুলিশ বলেছিল, তারা গুলি চালিয়েছিল ‘আক্রান্ত’ হয়ে। কিন্তু গুলি যখন চলেছে এবং প্রাণহানি ঘটেছে, মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী হিসেবে তার ‘দায়’ বুদ্ধবাবু ‘মাথা পেতে’ নিচ্ছেন। তার পাশাপাশিই তাঁদের অভিযোগ ছিল ‘যড়যন্ত্রের’। সেই ১৪ মার্চ নিহত ১৪ জনের ময়না তদন্তে দেখা গিয়েছিল, পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল ৮ জনের। বাকি ৬ জনের দেহে যে অস্ত্রের আঘাত ছিল, তা পুলিশ ব্যবহার করে না। সিপিএমের এখন প্রশ্ন, যে হাওয়াই চটি পরা বাহিনীর জন্য অধিকারীদের কাঠগড়ায় তুলছেন মমতা, তারাই কি নিহতের সংখ্যা বাড়াতে ভূমিকা নিয়েছিল? মমতা আগে যখন হাওয়াই চটি পরা পুলিশের কথা বলতেন, বুদ্ধবাবু বলেছিলেন এমন কোনও বাহিনী তাঁদের পাঠানোর প্রশ্ন নেই।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘বুদ্ধবাবু বলেছিলেন, কী ভাবে মিথ্যাচার এবং ষড়যন্ত্র হয়েছে নন্দীগ্রামে, তা ১০ বছরের মধ্যে লোকে বুঝতে পারবে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই এখন সেটা প্রকাশ করে দিয়েছেন।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘নন্দীগ্রামের ষড়যন্ত্রের কিয়দংশ স্বীকার করেছেন মাননীয়া। সিঙ্গুর কিংবা জঙ্গলমহলের ষড়যন্ত্রটা কবে স্বীকার করবেন? বুদ্ধবাবুকে জেলে পোরার কমিশন রিপোর্ট কোথায়? সেই সময়ে তৃণমূলের পাশে ছিল বিজেপি। বাংলাকে ধ্বংসের তৃণমূল-বিজেপির গোটা যড়যন্ত্র প্রকাশিত হবেই, শুধু সময়ের অপেক্ষা!’’
নন্দীগ্রামে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির অন্যতম শরিক এসইউসি-র রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য অবশ্য এ দিন বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছেন, সেখানকার জনগণই দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে এবং প্রাণের বিনিময়ে গণ-আন্দোলনের জয় অর্জন করেছে, সিপিএম সরকারের ‘ষড়যন্ত্র’ প্রতিরোধ করেছে। তাঁদের মতে, এই আন্দোলনের কৃতিত্ব কোনও দল বা নেতার দাবি করা বা নির্বাচনের স্বার্থে ‘অপব্যবহার’ করা অনৈতিক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy