Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Nandigram

Bengal Polls: উঠে দাঁড়ালেন, যেমন দাঁড়ান, হুইল চেয়ার ছাড়া মমতাকে দেখতে পেলেন কি বিমলা

মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে এসেছিলেন বিমলা মণ্ডল। নিজের কথা বলতে চেয়ে পারেননি। কারণ, মুখ্যমন্ত্রীর চারপাশে কড়া নিরাপত্তার বলয়।

হুইলচেয়ারে বসেই গ্রামের রাস্তায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

হুইলচেয়ারে বসেই গ্রামের রাস্তায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

উজ্জ্বল চক্রবর্তী
নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২১ ২১:২৬
Share: Save:

খোদামবাড়ির ভীম বাজারের কাছে গাড়িটা হাত দেখিয়ে দাঁড় করালেন এক বৃদ্ধা।

জানালার কাচ নামাতেই ছুটে এল প্রশ্নটা, ‘‘তোমরা প্রেসের লোক?’’ সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়তেই প্রস্তাব এল, ‘‘দিদিকে জিতিয়ে দাও না। বড্ড ভাল মানুষ। কী কষ্ট করে ঘুরছেন। উনি চলে গেলে দু’টাকার চালটা পাব না আর। না খেতে পেয়ে থাকতে হবে!’’

চৈত্রের গরম ৩৭ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গিয়েছে। তার মধ্যেই হুইলচেয়ারে বসে রোড শো করে এই রাস্তা দিয়ে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীকেই দেখতেই এসেছিলেন বিমলা মণ্ডল। বয়াল যাওয়ার রাস্তায় ভীম বাজারের কাছে তাঁর ছোট্ট চায়ের দোকান। পাশেই অগোছালো মাটির বাড়ি। দোকান তেমন ভাল চলে না। দুই ছেলের আয়ও তেমন নেই। ফলে সরকারি সাহায্যই তাঁর ভরসা। নিজের দারিদ্রের কথা বলতে বলতে কেঁদেই ফেললেন। জানালেন, মুখ্যমন্ত্রীকে নিজের কথা বলতে চেয়েও পারেননি। কারণ, মুখ্যমন্ত্রীর চারপাশে কড়া নিরাপত্তার বলয়।

এই বাড়িতেই থাকছেন তৃণমূল নেত্রী।

এই বাড়িতেই থাকছেন তৃণমূল নেত্রী। —নিজস্ব চিত্র।

কথা ছিল যাবেন ক্ষুদিরাম মোড় থেকে ঠাকুরচক। কিন্তু রোড শো শুরু হতেই মত পাল্টালেন মমতা। তিনি গ্রামের ভিতর ঢুকতে চান। ফলে চণ্ডীপুর-টেঙ্গুয়ার মূল রাস্তা ছেড়ে তাঁর হুইলচেয়ার ঢুকে পড়ল বাঁ-দিকের ঢালাই পথে। গিরিপাড়া, মনোহরপুর, গোপালপুর, খোদামবাড়ি— মমতার হুইলচেয়ার এগিয়ে আসতে দেখে গ্রামের মহিলারা ভিড় করতে শুরু করলেন। কেউ কেউ মোবাইলে ছবি তুলছেন। অনেকে আবার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়ে গ্রামের সমস্যার কথা বলছেন। তবে সে সবে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষীরা খুব স্বস্তি পাচ্ছিলেন না। ফলে বারেই বারেই নিরাপত্তার বেষ্টনী তাঁরা আঁটসাঁট করতে চাইছিলেন। আর মমতা তাঁদের মৃদু ধমক দিচ্ছেন। সামনে থেকে বার বার সরে যেতে বলছেন নিরাপত্তাকর্মীদের। মাইক্রোফোন হাতে মমতা গ্রামবাসীদের আশ্বস্ত করছেন, ‘‘এখন আর কোনও ভায়া-মিডিয়া নয়। এ বার থেকে আমি নিজেই দেখভাল করব। কোনও সমস্যা হবে না। আপনারা শান্তিতে ভোট দেবেন।’’

মুখে মাস্ক। সরু পাড়ের সাদা শাড়ি। রোদ্দুরের তাপ ঠেকাতে মাথায় সেই শাড়িরই আঁচল রাখা। ব্যান্ডেজ বাঁধা পায়ে হুইলচেয়ারে করে পেরিয়ে যাচ্ছেন নন্দীগ্রামের একের পর এক গ্রাম। খোদামবাড়ির কাছে এসে মমতার রোড শো ফের নির্ধারিত পথে এসে পড়ল। সেখানে আগে থেকেই তাঁকে দেখার জন্য অপেক্ষা করেছিলেন প্রচুর মানুষ। মমতা তাঁদের উদ্দেশে হাত নাড়ছেন। নমস্কার করছেন। ঠাকুরচকের মঞ্চ পর্যন্ত এ ভাবেই এলেন নন্দীগ্রামের তৃণমূল প্রার্থী। গিরিপাড়ার কাছে ঢালাই রাস্তার ধারে মায়ের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিল ছোট্ট অতসী। মুখ্যমন্ত্রীকে হুইলচেয়ারে ও ভাবে এগিয়ে আসতে দেখে মায়ের আঁচল টেনে ধরে বলল, ‘‘কেমন ছোট্ট রথে চড়ে আসছে!’’

বিমলা মণ্ডল।

বিমলা মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।

নন্দীগ্রাম এসেছেন হেলিকপ্টারে। তার পর থেকে মঞ্চ হোক বা রোড শো— সর্বত্রই মমতা হুইলচেয়ারে। আর বাকি যাতায়াতে ব্যবহার করছেন নীল রঙের ভোক্সভাগেনের হ্যাচব্যাক। রেয়াপাড়ার অস্থায়ী আস্তানা থেকে সেই গাড়িতে চেপেই পৌঁছে যাচ্ছেন সভাস্থলে। নন্দীগ্রাম ১ এবং ২ ব্লকের একের পর এক এলাকা— বয়াল, ঠাকুরচক, আমদাবাদ, সোনাচূড়া, বাঁশুলিচক, টেঙ্গুয়া— প্রচার শেষে আবার ফিরে আসছেন সেখানেই। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন বিরুলিয়া বাজারের কাছে আহত হয়েছিলেন। সে দিনই ফিরে গিয়েছিলেন। ১৮ দিন পর ফের তিনি যখন ফিরলেন নন্দীগ্রামে, তত দিনে হুইলচেয়ার তাঁর সঙ্গী। তবে ভোটপ্রচারের শেষ দিন সেই নন্দীগ্রামেই তিনি হুইলচেয়ার থেকে একবারের জন্য উঠে দাঁড়ালেন। জাতীয় সঙ্গীতে গলা মেলাতে।

বিমলা এ দৃশ্য টিভিতে দেখেছেন কি না জানা নেই। তাঁর বাড়িতে যদিও টিভি নেই। তবে শুনলে হয়তো খুশিই হতেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy