পূর্বপাড়ায় প্রতিরোধে পাহারা। নিজস্ব চিত্র।
ভোটের পর ফের জল বন্ধের অভিযোগ। অভিযুক্ত সেই শাসক দল।
রাজ্যে প্রথম দফা নির্বাচনের পরেই ঝাড়গ্রামের লোধাশুলি এলাকায় নলকূপে তালা লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল শাসক দলের বিরুদ্ধে। দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের পরের দিনই এক আদিবাসী গ্রামের জল সংযোগ কাটার অভিযোগ উঠল।
দাঁতন-২ ব্লকের তুরকা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কুসুমদা গ্রামের পশ্চিম ও পূর্ব পাড়ায় প্রায় চার দশক ধরে পাট্টা জমিতে বসবাস করছেন বেশ কয়েকটি আদিবাসী পরিবার। তাঁরা সিপিএম সমর্থক বলে পরিচিত। পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন সোমবার ভোটের পর থেকেই শুরু হয়েছিল হুমকি। মঙ্গলবার সকালে মাটি খুঁড়ে সজলধারা প্রকল্পের জলের লাইন কেটে দেয় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। এ বিষয়ে বুধবার বিডিও-র কাছে অভিযোগ করেছেন ওই গ্রামের বাসিন্দা রামহরি হেমব্রম।
পশ্চিম পাড়ারই গৌরহরি হেমব্রম, বাপি মুর্মুরা বলেন, ‘‘মঙ্গলবার সকাল ১১টা নাগাদ রাস্তা খুঁড়ে সজলধারা প্রকল্পের জলের পাইপ লাইন কেটে দেয়। আমরা হাতজোড় করে আপত্তি করেছিলাম, কিন্তু ওরা শোনেনি। উল্টে বিদ্যুতের লাইন কেটে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। যে খাস পুকুরে আমরা মাছ চাষ করি, তার জল বের করে দেওয়া হবে বলেও ধমক গিয়েছে।” পশ্চিম পাড়ায় একটি মাত্র নলকূপ রয়েছে। অভিযোগ সেই জলও পানের অযোগ্য। ভরসা ছিল সজলধারার জলই। গত সাত বছর ধরে ওই জলই ব্যবহার করতেই অভ্যস্ত মালতী হেমব্রম, বুধু হেমব্রমরা। মঙ্গলবার থেকে সে জল বন্ধ। বাধ্য হয়েই নলকূপের জল খেতে হচ্ছে তাঁদের।
পূর্ব পাড়ায় দশটি পরিবারের বাস, সদস্য সংখ্যা ৫৭। পুরুষরা ভয় পাচ্ছেন, এলাকার বাইরে বেরোলেই মারধর করবে তৃণমূলের লোকেরা। ফলে কাজ বন্ধ। স্থানীয় যুবক চৈতন্য মুর্মু এ বার ভোটে সিপিআই প্রার্থী শিশির পাত্রর পোলিং এজেন্ট ছিলেন। তিনি বলেন, “মাঠে ধান পড়ে রয়েছে, আমরা যেতে পারছি না। বাজার হাট বন্ধ। পাড়ার সকলেই আতঙ্কে আছি।” সিপিএমের দাঁতন-২ জোনাল কমিটির সম্পাদক রতন দে-র অভিযোগ, “গত তিনটি ভোটে ভোট লুঠ করেছিল তৃণমূল। এ বার পারেনি। তাই প্রতিহিংসায় তারা জলের লাইন কেটে দিয়েছে। প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু, কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।”
শাসক দলকে ভোট না-দেওয়ার জল সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে বলে মানতে চাইছেন না স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যা অঞ্জু ভুঁইয়া। তিনি দাবি করেন, ‘‘ওই জায়গায় পাইপলাইনের সমস্যা ছিল। তাই কেটে রাখা হয়েছে। কয়েকদিন পরেই ঠিক করে দেওয়া হবে।’’ বিডিও রুনু রায়ের প্রতিক্রিয়া, “ঘটনাটি কেন কী ভাবে হয়েছে জানি না। পুলিশকে দিয়ে অভিযোগের তদন্ত করা হবে। তবে আগে ওই পাইপলাইন যুক্ত করে মানুষকে জল দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।” দাঁতন থানার আইসি প্রেমাশিস চট্টরাজ জানান, অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ কানাইলাল মহাপাত্র অবশ্য দায় এড়িয়েছেন, “বিষয়টি নজরে নেই। আমার কাছে অভিযোগ এলে দেখব।”
শাসক দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ অবশ্য নস্যাৎ করে দিয়েছেন তৃণমূল নেতারা, দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ দায় ঝেড়ে বলেন, “সিপিএমই পরিকল্পনা মাফিক অপপ্রচার করে সহানুভূতি কুড়োতে চাইছে। প্রশাসনিক তদন্তে সঠিক তথ্যই উঠে আসবে।”
যদিও এ তথ্য মানতে নারাজ স্থানীয় বাসিন্দারা। গৌরহরি হেমব্রম বলেন, “গত তিন বার তৃণমূলকেই ভোট দিয়েছিলাম। কিন্তু ওই জলের কলটি ছাড়া আর কিছুই পাইনি। এ বার ভোটের আগে ওরা এক বারও পাড়ায় আসেনি।’’ কিন্তু গ্রামে এসেছিলেন সিপিআই প্রার্থী। গৌরহরিরা জানান, তাই শিশির পাত্রর মিছিলেও হেঁটেছিলেন তাঁরা। তার পর থেকেই হুমকির শুরু। বাপি মুর্মু বলেন, “ভোটের আগে বিডিও আর পুলিশ এসে ফোন নম্বর দিয়ে বলেছিলেন সমস্যা হলে জানাতে। গতকাল জলের লাইন কাটার পর ওই নম্বরে কয়েকবার ফোন করেছি। কেউ ধরেননি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy