আঁচল পেতে। বাঁকুড়ার ভিকুডিহিতে। (ডান দিকে) মাজুড়িয়ায় প্যাকেট হাতে বাড়ি ফেরা। —অভিজিৎ সিংহ ও শুভ্র মিত্র
‘দিদি’ দু’টাকা কিলো দরে চাল দিচ্ছেন। ভাইয়েরা একধাপ এগিয়ে দিলেন চাল-ভাজা, থুড়ি মুড়ি।
ভোটের দ্বিতীয় দিনে ৩৫ টাকা কেজি দরে মুড়ি কিনে বুথের সামনে জাঁকিয়ে বসলেন ভাইয়েরা। দোসর হিসেবে কোথাও ঘুগনি, কোথাও কাঁচালঙ্কা-ছোলা। এবং অবশ্যই গ্লাস ভর্তি জল। তবে শর্ত একটাই, জোড়া ফুলের বোতাম-ই টিপতে হবে।
ভোটের প্রথম দিনে এই ছবিটাই দেখা গিয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের লালগড়ে। সোমবার সেই সংস্কৃতি ছড়াল বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর, ওন্দা এমনকী দুর্গাপুরেও।
বাঁকুড়া বিধানসভা কেন্দ্রের পাইকপাড়া ভিকুরডিহি প্রাথমিক স্কুলে পৌঁছে তৃণমূলের এমনই ‘মুড়ির ক্যাম্প’-এর দেখা মিলল। একটা নয়, ভোট কেন্দ্রের দু’দিকে দুটো মুড়ির ক্যাম্প। কাঁটায় কাঁটায় সাড়ে ন’টা। ২৭৩ নম্বর এই বুথে ৮৮৩ ভোটারের মধ্যে ১৯০ জনের ভোট পড়ে গিয়েছে। চত্বরে রয়েছেন চার জন আধাসেনা। তাঁদের চোখের সামনেই চলল মুড়ির ক্যাম্প। রাখঢাকের বালাই নেই। ক্যাম্পেই বসে ভোটাররা ঘুগনি-মুড়ি খেয়ে জমাটি গল্পে মাতলেন।
ওই বুথের সামনে চাষ জমির উপরে আরও একটি এমন ক্যাম্প দেখা গেল। জমির আলে তৃণমূলের দু’তিনটি পতাকা পোঁতা। দায়িত্বে থাকা এক তৃণমূল কর্মী বললেন, “চায়ের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু একটু আগেই পুলিশ এসে বলল চা দেওয়া যাবে না। বিরোধীদের চোখে পড়ছে। তাই ওটা বন্ধ করে দিয়েছি।”
কথার মধ্যেই বছর সত্তরের এক বৃদ্ধা হাঁটতে হাঁটতে হাজির হলেন ক্যাম্পে। এক তৃণমূল কর্মী জানতে চাইলেন, “কি গো মাসি, গুনে গুনে দু’নম্বর বোতামটা (তৃণমূল প্রার্থীর ইভিএম বোতাম) টিপেছো তো? ভুল হয়নি তো?” একগাল হেসে বৃদ্ধা জবাব দিলেন, “তোরা তো বলে দিয়েছিলি। ভুল করব কেন। এখন মুড়ি দে। বাড়ি ফিরি।’’ বলতে বলতে বৃদ্ধা শাড়ির আঁচল পেতে দিলেন।
কেউ অন্য বোতাম টিপলে বুঝবেন কী করে? উপস্থিত এক কর্মীর টিপ্পনি, ‘‘আরে দাদা, বিশ্বাসে মিলায় মুড়ি, তর্কে বহু দূর!’’
কিন্তু, বুথের সামনে তৃণমূলের মুড়ির ক্যাম্প দেখেও কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন্দ্রীয় বাহিনী? বাঁকুড়া বিধানসভার রিটার্নিং অফিসার অসীমকুমার বালার জবাব, “সকাল থেকে এই মুড়ির ক্যাম্পর নিয়ে নাগাড়ে অভিযোগ পেয়েছি। অন্তত ১৫টি মুড়ি ক্যাম্প তুলিয়েছি। এটারও ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
শুধু কি মুড়ি? বাঁকুড়া, বর্ধমানের মতো কোনও কোনও এলাকায় মাংস-খিচুড়ির মেনুও ছিল। পুনিশোল হাইস্কুলের বুথের সামনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কড়া নজর ছিল। এক তৃণমূল কর্মী জানালেন, এখানে মুড়ির ক্যাম্প হওয়ার কথা ছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পরে গ্রামের এক বাসিন্দার বাড়িতে খিচুড়ি, মাংসের আয়োজন করা হয়।
ওন্দা বিধানসভা কেন্দ্রের রতনপুর বাজারের চায়ের দোকানের জমাটি আড্ডায় এক ভোটার নিজের অভিজ্ঞতা শোনালেন। বললেন, “বাজারের হোটেলে আজ ভাতের বালাই নেই। তৃণমূল ওই হোটেলে মুড়ি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছে। আমি বুথে যেতেই এক তৃণমূল কর্মী ভোট দিয়ে ওই ক্যাম্পে গিয়ে মুড়ি খেতে বললেন।”
ভোট দেওয়ার পরে তৃণমূলের ক্যাম্পে গেলেই মিলছে মুড়ির প্যাকেট। সঙ্গে কাঁচালঙ্কা, ছোলা। এমনই ছবি উঠে এল দুর্গাপুর পূর্বের গোপালপুরের বুথে। তবে সকলকে নয়। উপস্থিত এক নেতা জানালেন, শুধু আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজনকেই মুড়ির প্যাকেট দেওয়া হচ্ছিল। ভোটারদের প্রভাবিত করতে শুধু মুড়ি নয়, পাণ্ডবেশ্বরে গামছা বিলিরও অভিযোগ তুলেছে সিপিএম।
কিন্তু, মুড়ি কেন? অনেকেই জানালেন, প্রচণ্ড গরমে ভোট দিতে এসে যাতে ভোটাররা অসুস্থ হয়ে না পড়েন এই আয়োজন। এতে অন্যায়ের কিছু দেখছেন না তাঁরা।
সহ প্রতিবেদন: বিপ্লব ভট্টাচার্য
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy