দলের মধ্যে তাঁকে নিয়ে যতই অস্বস্তি থাক, ভোটের অঙ্কের হিসেব কষে সাবিত্রী মিত্রের পাশে দাঁড়াচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ সোমবার, মালদহের তিনটি কেন্দ্রে ভোটের প্রচার সভায় আসছেন মমতা। ঠিক ছিল, কালিয়াচক, হবিবপুরের বামনগোলা ও চাঁচলে সভা করবেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হবিবপুরের বামনগোলার বদলে মানিকচক কেন্দ্রের ভুতনিতে সভা করবেন বলে ঠিক হয়েছে।
কেন এই অকস্মাৎ বদল? তৃণমূলের অন্দরের খবর, হবিবপুরের চেয়ে মানিকচকেই বেশি শক্তি ব্যয় করতে আগ্রহী তৃণমূল দলনেত্রী। তার কারণ, মানিকচকে এ বার সাবিত্রীদেবী বেশ কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখেই পড়েছেন। জোটের কংগ্রেসের প্রার্থী মুস্তাকিন আলমের পক্ষে জন সমর্থন বাড়ছে। ২০১১ সালে এই কেন্দ্রে তৃণমূলের টিকিটেই দাঁড়িয়ে জিতেছিলেন সাবিত্রীদেবী। কিন্তু এ বার পরিবর্তনের সেই হাওয়া নেই। সেই সঙ্গে বামেরা কংগ্রেসের পাশে দাঁড়ানোয় মুস্তাকিনের প্রচারের ধার ও ভার বাড়ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও, তৃণমূলের অন্দরেরই খবর, এই কেন্দ্রে সাবিত্রীদেবীর জয়ের যতটুকু আশা রয়েছে, হবিবপুরে তৃণমূল প্রার্থী অমল কিস্কুর তা-ও নেই। অমলবাবুর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন সিপিএমের খগেন মুর্মু। খগেনবাবুর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে এই এলাকার উপরে। খগেনবাবু লোকসভায় কংগ্রেসের মৌসম বেনজির নুরের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত হেরে গেলেও হবিবপুর বিধানসভা কেন্দ্রে তিনি দশ হাজারের বেশি লিড পেয়েছিলেন মৌসমের থেকে। তা ছাড়া, এ বার বাম-কংগ্রেসের জোটের ফলে মৌসম খগেনবাবুর পাশেই দাঁড়িয়েছেন। সেই যৌথ শক্তির সঙ্গে অমলবাবু কতটা লড়তে পারবেন, তা নিয়ে দলের মধ্যে সংশয় কম নেই। জেলা তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘তাই অঙ্ক কষেই দিদি মানিকচকে সভা করতে যাবেন। যাতে সাবিত্রীদেবী অন্তত নিজের আসনটা বার করতে পারেন।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্রের বক্তব্য, ‘‘অমল কিস্কুর জয়ের আশা একেবারেই নেই। সাবিত্রীদেবীর আসন টলমল করছে। তাই তৃণমূল নেত্রী সাবিত্রীদেবীর পাশেই দাঁড়াতে চাইছেন।’’
সেই সঙ্গে, ভুতনিতে উন্নয়নের কথাও তৃণমূল অনেক বেশি বলতে পারে। তৃণমূলের এক জেলা নেতার কথায়, মানিকচক বিধানসভা কেন্দ্রে ভুতনিতে সেতু তৈরির কাজ চলছে, মানিকচকে কলেজ করা হয়েছে, ভুতনি থানা করা হয়েছে। সাবিত্রীদেবী বলেন, ‘‘আমাদের নেত্রী এখানে যা উন্নয়ন করেছেন, তাতে আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। আর নেত্রীকে এখানে নিয়ে আসার জন্য মানুষ আমার কাছে আবেদন করেছিলেন। এই বিষয়টি রাজ্য নেতৃত্বকে জানানো হল দল তাতে সম্মতি দেয়।’’
কিন্তু দলনেত্রীর আচমকা সূচি্ বদল করায় দলের নিচু তলার কর্মীরা পড়েছেন সমস্যায়। মঞ্চ বাঁধা থেকে শুরু করে মাঠে ব্যারিকেড দেওয়ার কাজ প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। দলনেত্রী আসছেন বলে মাঠ ভরানোর জন্য গ্রামগঞ্জে প্রচারও চালিয়েছিলেন ব্লক নেতৃত্বরা। আচমকা বামনগোলার পাকুয়ার গোলাপুকুর গ্রামে সভা বাতিল হয়ে যায়। তার জন্য প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে হবিবপুর বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল নেতৃত্বরা। তাঁদের কথায়, ফের গ্রামগঞ্জে প্রচার করে বলতে হচ্ছে দলনেত্রী এখানে সভা করতে আসছেন না। আর কেন তিনি এখানে আসছেন না, সেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে নেতৃত্বদের।
মানিকচকের ভুতনিতে আবার মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে তৃণমূল নেত্রীর সভার আয়োজন ঠিক করতে হিমসিম খেতে হচ্ছে ব্লক নেতৃত্ব থেকে শুরু করে প্রশাসনের। কার্যত ঘুম ছুটেছে ব্লক নেতৃত্বর। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত শনিবার রাতে ভুতনিতে সভা হবে বলে শীর্ষ নেতৃত্ব সূত্রে জানতে পারা যায়। ভুতনির উত্তর চণ্ডীপুরের খুসবর টোলা মাঠে সভা হবে। তাই জোর কদমে চলছে মঞ্চ বাঁধা, হেলিপ্যাড তৈরির কাজ। এখানে সভা হবে দুপুর দু’টো নাগাদ। কালিয়াচকের পর ভুতনিতে দ্বিতীয় সভা করবেন তিনি। এ দিন দুপুরে সভামঞ্চের কাজ খতিয়ে দেখতে যান সাবিত্রীদেবী। কালিয়াচক, চাঁচলের মাঠ পরিদর্শনে যান জেলা পুলিশ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তারা।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘‘জেলার তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রে আমাদের নেত্রী সভা করবেন। এ বার হবিবপুরের পরিবর্তে মানিকচকের ভুতনিতে সভা হবে। আর হবিবপুর বিধানসভা কেন্দ্রে আগামী দিনে সভা করবেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy