সুনীতা মার্ডি। নিজস্ব চিত্র
চাকুলিয়া থেকে সোজা পথে মোটে দু’কিলোমিটার। কিন্তু নদীতে সেতু না থাকায় ৭ কিমি ঘুরে, খন্দ পথ পেরিয়ে পৌঁছতে হয় চাকুলিয়ার জনজাতি প্রধান লাধি গ্রামে।
দোরগোড়ায় বিধানসভা ভোট। অনেক জায়গাই যুযুধান রাজনৈতিক দলের ব্যানার-ফেস্টুন লাগতে শুরু করেছে। অথচ চাকুলিয়ার এই তল্লাটে এ সবের নামগন্ধ নেই। ভোটার ৪০০। নিজস্ব জমি-জমা না থাকায় নদীর চরে পলিথিনে মোড়া একটি ঘরে থাকেন সুনিতা মার্ডি। স্বামী অসুস্থ। বছরের ধান ও পাটের জমিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বর্ষা থেকে শীতের শুরু পর্যন্ত যখন হাতে তেমন কাজ থাকে না, নদী-খাল-বিল থেকে শামুক কুড়িয়ে বেঁচে থাকেন। সন্তানদের বাঁচিয়ে রাখেন। উনিও ভোটার। এ বারে এই ভোট-বাজারের হাওয়া এখনও তাঁর গায়ে লাগেনি। কাকভোরেই মিহি শীত গায়ে মেখে সুধানী নদীতে শামুক কুড়োতে ছুটতে হয় যে। গ্রামে আরও ৪০টি পরিবার শামুক কুড়িয়ে সংসার চালায়। কেন?
সুনীতা: কী করব, কাজ নেই যে। স্বামীর জব কার্ড থাকলে একদিনও কাজ পাননি। ছেলেপুলেদের জন্য খাবার জোটাতে বাধ্য হয়ে শামুক কুড়িয়ে বিক্রি করছি।
প্রশ্ন: ভোট আসন্ন। তখন নেতারা আসবেন। তাঁদের কিছু বলবেন না?
সুনীতা: ভোটের আগে নেতারা এসে অনেক প্রতিশ্রুতি দেন। ভোট মিটলে কেউ আর ফিরে তাকান না। তাই ভোট নিয়ে উৎসাহী নই।
প্রশ্ন: এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা যে এত খারাপ, সে কথা নেতাদের বলছেন তো?
সুনীতা: কয়েক বছর আগে রাস্তা পাকা হয়েছিল। ফের পিচ উধাও। ভেবেছিলাম, এ বার রাস্তার কাজ হবে। হল কোথায়? সুধানী নদীতে সেতুর দাবি জানিয়েও সেতু মেলেনি। তাই এতটা পথ ঘুরে চাকুলিয়া যেতে হয়।
প্রশ্ন: স্বাথ্য সাথী কার্ড পেয়েছেন?
সুনীতা: আবেদন জমা দিয়েছি। তবে কার্ড এখনও হাতে পায়নি।
প্রশ্ন: আবাস যোজনার ঘর পাননি?
সুনীতা: আবেদন একাধিকবার করেছি। কিন্তু ঘর পায়নি। পঞ্চায়েতে গেলে জানানো হচ্ছে, জমির নথি নেই। তাই ঘর মিলবে না।
প্রশ্ন: পানীয় জলের ব্যবস্থা হয়নি?
সুনীতা: সরকারিভাবে একটি মার্ক-টু টিওবওয়েল দেওয়া হয়েছিল। সেটি দীর্ঘদিন ধরে অচল হয়ে আছে। তাই কখনও গ্রামের একটি স্কুল থেকে, কখনও নদী থেকে জল আনি।
প্রশ্ন: শৌচালয় আছে বাড়িতে?
সুনীতা: অল্প করে কিছু টাকা জমিয়ে শৌচাগার বানিয়েছি। সরকারি ভাবে পাইনি।
প্রশ্ন: উজ্জ্বলা গ্যাসের যোজনার নাম শুনেছেন?
সুনীতা: এ সব কিছুই শুনিনি। কাঠ জোগাড় করে তা দিয়েই রান্না করি।
ওই গ্রামের বাসিন্দা স্বামী হারা ৭০ বছরের আরতি মার্ডি।
প্রশ্ন: বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা পাননি?
আরতি: আবেদন করেছিলাম। কিছু দিন পেয়েছি। কিন্তু মাঝে ভাতা দেওয়া বন্ধ হয়ে গেল। তার পরে আর চালু হয়নি। একাধিকবার পঞ্চায়েতে যোগাযোগ করেছি। কোনও ফল মেলেনি।
প্রশ্ন: জয় জোহার প্রকল্পের কী?
আরতি: নামই তো শুনিনি।
প্রশ্ন: স্বাস্থ্য পরিষেবা?
আরতি: চাকুলিয়া গ্রামীণ হাসপাতালে গিয়ে জ্বর আর পেটের অসুখের ওষুধই শুধু পেয়েছি।
(পরের ‘দর্পণ’ আগামী সোমবার)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy