খেলার ফাঁকে বৈশালী ডালমিয়ার সঙ্গে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। রবিবার, লিলুয়া রেল ময়দানে। — সজল চট্টোপাধ্যায়
এ যেন টেনিস বলে ক্রিকেট খেলার ছলে ভোটের পাশায় দান ফেলা। সরাসরি নির্বাচনী প্রচারে না নেমেও বৈশালী ডালমিয়ার হয়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় রবিবার যা করলেন, তাতে ভোটের প্রচার করলেন না বললে যেন কম বলা হয়।
‘ছেলেবেলার বান্ধবী’ বৈশালীর নির্বাচনী ক্ষেত্র বালিতে দাদা শুধু এলেনই না, খেললেন, জয় করলেন এবং আগামী দিনের জন্য বান্ধবীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে গেলেন। আগামী দিন বলতে সমবেত মানুষ সাধারণ ভাবে আগামী সোমবারের কথা বুঝেছেন। সে দিন হাওড়ায় নির্বাচন।
তার দিন সাতেক আগে লিলুয়া রেলের মাঠে মাত্র ৫ ওভারের টেনিস বলের একটি ম্যাচে সৌরভকে ব্যাট ধরতে দেখে অবাক অনেকেই। ওই খেলার মূল উদ্যোক্তা জেলা তৃণমূল কংগ্রেস। উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের তাবড় নেতারা। এবং যিনি ঘাম ঝরিয়ে এই প্রীতি ম্যাচের আয়োজন করেছিলেন, হাওড়া পুরসভার সেই ৬২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের কাউন্সিলর কৈলাস মিশ্রর কথায়, ‘‘নির্বাচনী লড়াইয়ের এটা একটা অঙ্গ।’’
হাঁ হাঁ করে উঠেছেন বৈশালী নিজে। তাঁর কথায়, ‘‘না, না। ও ভাবে নেবেন না। এখানে সৌরভকে নিয়ে আসার জন্য আমার উপরে চাপ ছিল। আমি শুধু সেতুর কাজ করেছি। এর সঙ্গে নির্বাচনের কোনও সম্পর্ক নেই।’’ খেলা শেষে মাইক হাতে নিয়ে সৌরভ স্বয়ং বলেছেন, ‘‘আমার কাছের মানুষ বৈশালীর জন্য শুভেচ্ছা রইল। জন্ম থেকেই আমার সঙ্গে ওর ঘনিষ্ঠতা। এখানে আসতে পেরে ভাল লেগেছে। দীর্ঘ দিন পরে এ ভাবে মাঠে নামলাম।’’
পারিবারিক সূত্রে দীর্ঘ দিনের সম্পর্কের জেরেও দাদা-কে যে সরাসরি ভোটের ময়দানে নামানো যাবে না, তা মোক্ষম জানতেন বৈশালী। বিরোধীদের দাবি, তাই পরিকল্পিত ভাবে এই প্রীতি ম্যাচের আয়োজন করা হয়েছিল। জেলা সিপিএম সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার বলেন, ‘‘চালাকির দ্বারা মহৎ কাজ হয় না। এতে বাংলার মানুষের কাছে সৌরভের যে সম্মান ছিল, তা নিয়ে এ বার প্রশ্ন উঠতে শুরু করবে।’’ বিপ্লববাবুর বক্তব্য, নির্বাচনের ঠিক আগে এই খেলার আয়োজন না করে পরেও করা যেত। জেলার বিজেপি সভাপতি দেবাঞ্জল চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘তৃণমূল এখন হালে পানি পাচ্ছে না। সৌরভকে ধরে ভোট বৈতরণী পার হতে চাইছে।’’
সে কাজে সম্প্রতি বেহালা পশ্চিম কেন্দ্রের বিধায়ক, পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিফল। তিনি বিধায়ক হিসেবে কতটা সফল, তা যে লিফলেট বিলি করে এলাকার মানুষদের জানানো হচ্ছিল, সেখানে শুভেচ্ছান্তে নাম ছিল সৌরভের। শনিবার সে কথা শুনে সৌরভের অন্যতম প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘‘আমি পাগল নাকি, এ সবের
মধ্যে জড়াব?’’
কিন্তু, এক দিন পরেই জড়িয়ে গেল তাঁর নাম। তাঁকে সিএবি প্রেসিডেন্ট পদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বসানোর পরেও হয়তো এতটা জড়ায়নি। কিন্তু, ভোটের সপ্তাহখানেক আগে, এক রাজনৈতিক দলের আয়োজনে, ভোটপ্রার্থীর অনুরোধে সাদামাঠা টেনিস বলে ৫ ওভারের ম্যাচ খেলতে দুম করে ব্যাট হাতে মাঠে নেমে পড়ে অনেক প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেলেন সৌরভ। বিরোধীরা বলছেন, খেলাটা ভোটের পরে খেললে কোনও কথাই তো উঠত না।
যে মাঠে খেলা হল, সেই লিলুয়া রেলের মাঠটা তৃণমূল প্রার্থী বৈশালীর বালি বিধানসভা কেন্দ্রের ভিতরেই। গত কয়েক দিন ধরে ‘সৌরভের আসা নিয়ে’ এলাকায় প্রচার ছিল তুঙ্গে। রবিবার ম্যাচের সময়ে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল নেতা অরূপ রায়-সহ অন্যরা। খেলোয়াড় একাদশের সঙ্গে অভিনেতা একাদশের এই প্রীতি ম্যাচে গোটা মাঠ জুড়ে তৈরি হয়েছিল পাঁচ হাজার দর্শকের জন্য অস্থায়ী গ্যালারি। বলিউডের শিল্পী ও চিয়ার গার্লদের জন্য মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছিল। ছিল আতসবাজির রোশনাই। গোটা মাঠ জুড়ে ফ্লাডলাইটের বন্যা।
অভিনেতাদের দলে অধিনায়ক যিশু সেনগুপ্ত ছাড়া আর কোনও পরিচিত শিল্পীর নাম শোনা যায়নি। সৌরভের অধিনায়কত্বে মনোজ তিওয়ারি ছাড়া আর কোনও নামী ক্রিকেটারকে খেলতে দেখা যায়নি। ওই জেলাতেই অন্য আসনে লক্ষ্মীরতন শুক্ল তৃণমূলের প্রার্থী। তাঁকে এ দিন ময়দানে
দেখা যায়নি।
৮ উইকেট হারিয়ে যিশুদের করা ৮২ রান সৌরভরা ২ উইকেটে ৩ বল বাকি থাকতে তুলে নেন। সৌরভ নিজে ৭ রান করেন। ৫৭ রান করে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন মনোজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy